বাসস
  ২১ জুলাই ২০২৩, ১৭:৩৭

চট্টগ্রামে স্ত্রী হত্যার ১৪ বছর পর ঘাতক স্বামী গ্রেপ্তার

চট্টগ্রাম, ২১ জুলাই, ২০২৩ (বাসস) : চট্টগ্রামের আনোয়ারায় যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে হত্যা ও লাশ গুমের অপরাধে ঘাতক স্বামীকে ১৪ বছর পর গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৭। নগরীর কোতোয়ালী থানার ব্রিজঘাট এলাকা থেকে গতকাল তাকে আটক করা হয়।  
র‌্যাব-৭ আজ জানায়, কলি আক্তার বরগুনা জেলার তালতলী থানার নিদ্রারচর এলাকার বাসিন্দা। তিনি  ২০০২ সালের জুন মাসে চট্টগ্রামে এসে একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকুরি করছিলেন। এসময় মামুনুর রশীদের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং ভিকটিম তার পরিবারের কাউকে না জানিয়ে ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। পরবর্তীতে কলির পরিবার তাদের বিবাহের বিষয়টি মেনে নেয়। বিবাহের পর থেকে স¦ামী মামুনুর রশীদ ও তার পরিবারের সদস্যরা যৌতুক দাবি করে আসছিল। কলি আক্তারের পিতা-মাতা মেয়ের সুখের আশায় সৌদি আরব যাওয়ার জন্য ধার-দেনা করে মামুনকে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দেয়। টাকা  পেয়ে সে উশৃঙ্খল জীবনযাপন শুরু করে। তাদের ঘরে একটি ৩ বছরের কন্যাসন্তান রয়েছে। পরে মামুনুর রশীদ ডাকাতিসহ বিভিন্ন ফৌজদারি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জেলে যায়। কলির পিতা-মাতা আবারো ঋণ করে মামুনুর রশীদকে ১ বছর ৮ মাস পর কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত করে। জামিনে মুক্ত হয়ে কর্মহীন অবস্থায় আরো ৫০ হাজার টাকার জন্য কলি ও তার পরিবারকে চাপ দেয়। কলির পরিবার এবার টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে মামুনুর রশীদ ও পরিবারের সদস্যরা ভিকটিমকে মারধর ও নির্যাতন শুরু করে। ২০০৯ সালের ২৬ মে  বিকাল ৩ টায় কলির মা ফোন করে তাদের খবর জানতে চাইলে মামুনুর রশীদ জানায় কলি ডায়ারিয়ায় আক্তান্ত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এর কিছুক্ষণ পর মামুন মোবাইল ফোনে কলির মা’কে জানায়, তার  মেয়ে ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে এবং দাফন-কাফনও শেষ। পিতা-মাতাকে না জানিয়ে দাফন করার কারণ জিজ্ঞাসা করলে মামুন কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। এ ব্যাপারে ভিকটিমের পরিবার আশেপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারে, যৌতুকের টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ভিকটিম কলি আক্তারকে অমানুষিক নির্যাতন করে ২৬ মে হত্যা করা হয় এবং হত্যার আলামত গোপন করার জন্য তাড়াহুড়ো করে কাউকে না জানিয়ে তারা দাফন করে ফেলে।
এ ঘটনায় ভিকটিমের মা বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা থানায় স্বামী মামুনুর রশীদকে ১ নং ও আরো ৮ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম গৃহবধূ কলি আক্তার হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে। এক পর্যায়ে জানতে পারে, হত্যাকা-ের প্রধান আসামি মামুনুর রশীদ নগরীর ব্রিজঘাট এলাকায় অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি দল গতকাল অভিযান চালিয়ে আনোয়ারা কৈখাইন গ্রামের আব্দুল শুক্কুরের পুত্র মামুনুর রশীদ (৫০)-কে আটক করতে সক্ষম হয়।
পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে মামুন বর্ণিত হত্যা মামলার ১ নং পলাতক আসামি মর্মে স্বীকার করে। তাকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।