শিরোনাম
ঢাকা, ২৪ জুলাই, ২০২৩ (বাসস) : নিষিদ্ধ ঘোষিত নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফীল হিন্দাল শারক্বীয়া’র আমীর আনিসুরসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, আমীর মো. আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ (৩২), কাজী সরাজ উদ্দিন ওরফে সিরাজ (৩৪) ও মাহফুজুর রহমান বিজয় ওরফে বাবুল ওরফে জাম্বুলি (২৮)।
রোববার দিবাগত রাত ৩ টার দিকে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১০ এর একটি দল মুন্সিগঞ্জের লৌহজং থানা এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে।
এসময় তাদের কাছ থেকে দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, উগ্রবাদি পুস্তিকা ও নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়।
আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব ফোর্সেস আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক (মূখপাত্র) কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, আজ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের ৭৫ জন নেতাকর্মী এবং পাহাড়ে অবস্থান, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য কার্যক্রমে জঙ্গিদের সহায়তার জন্য পাহাড়ী বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘কেএনএফ’ এর ১৭ জনকে গ্রেফতার করে র্যাব।
র্যাবের আইনও গনমাধ্যম শাখার প্রধান জানান, আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ এর সাথে কেএনএফ এর প্রধান নাথাম বমের সুসম্পর্ক থাকায় কেএনএফ’র সাথে তাদের অর্থের বিনিময়ে চুক্তি হয় এবং কেএনএফ ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র জঙ্গিদের পাহাড়ে আশ্রয়, অস্ত্র ও রশদ সরবরাহ এবং সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দিতো।
র্যাব জানায়, নতুন এ সংগঠনকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী জঙ্গি সংগঠন বানাতে চেয়েছিলেন শারক্বীয়ার আমির মো. আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ। দেশের বাইরে হামলার কোনো পরিকল্পনা না থাকলেও দেশের মধ্যে হামলার পরিকল্পনা ছিল তাদের। তাদের টার্গেট ছিল কিলিং মিশন। আর তাদের আইনের আওতায় আনতে গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর সশস্ত্র হামলার পরিকল্পনা করছিলেন আমির মাহমুদ।
খন্দকার আল মঈন জানান, আনিসুর রহমান মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করে কুমিল্লা সদর দক্ষিণের একটি সিএনজি রিফুয়েলিং পাম্পে ম্যানেজার হিসেবে চাকুরি করতেন। তিনি এরআগে আরেক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) সদস্য ছিলেন। পরবর্তী সময়ে তার সঙ্গে কুমিল্লার একটি রেস্টুরেন্টে আনসার আল ইসলামের রক্সি ও ফেলানীর পরিচয় হয়। পরে তারা রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে এক বৈঠক করে নতুন সংগঠন সৃষ্টি ও বিস্তারের পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার কার্যক্রম শুরু করে।
র্যাবের মুখপাত্র বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে র্যাবসহ অন্যান্য বাহিনীর অভিযান শুরু হলে আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ পাহাড় থেকে পালিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে থাকে। সংগঠনকে পুনরায় সংগঠিত করার জন্য পলায়নকৃত ও অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করছিলেন আমির মাহমুদ।
র্যাব জানায়, কেএনএফ প্রধান নাথান বম পার্শ্ববর্তী দেশের মিজোরামে অবস্থান করছেন। বিভিন্ন সময়ে কেএনএফের হামলা ও আক্রমণের বিষয়ে আমির মাহমুদের ইন্ধন থাকতে পারে বলের ধারনা করা হচ্ছে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতার কাজী সরাজ উদ্দিন ওরফে সিরাজ স্থানীয় একটি পলিটেকনিক্যাল ইনসটিটিউট থেকে ডিপ্লোমা শেষে পটুয়াখালীতে ব্যবসা করতেন। তিনি ২০০৪ সালে জঙ্গি সংগঠন হুজিতে যোগ দেন। হুজির কার্যক্রম স্তিমিত দেখে ২০১৪ সালে আনসার আল ইসলামে যোগ দেন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে গ্রেফতার শাওনের মাধ্যমে জামাতুল আনসারে যোগ দেন কাজী সরাজ উদ্দিন ওরফে সিরাজ। তিনি মূলত ইলেকট্রিক্যাল কাজ ও তথ্যপ্রযুক্তিতে পারদর্শীদের বাছাই করে সংগঠনে যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ করতেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরের সঙ্গে কেএনফের সংশ্লিষ্টতা ও যোগাযোগের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখছে র্যাব।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।