শিরোনাম
ঢাকা, ২৫ জুলাই, ২০২৩ (বাসস) : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় চূড়ান্ত রায় মৃত্যুদন্ত পাওয়া আসামি জাহাঙ্গীরের আটকের বৈধতা নিয়ে আনা রিট খারিজের বিরুদ্ধে আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বিভাগ আজ এ আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সমরেন্দ্র নাথ গোস্বামী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ।
এর আগে জাহাঙ্গীরের ভাই সোহরাবের করা রিটের শুনানি শেষে ১৭ জুলাই হাইকোর্ট রিট খারিজ করে আদেশ দেন।
পরে এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবদেন করা হয়।
গত ২ মে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি ও যাবজ্জীবন দন্ডিত এক আসামির আবেদন খারিজের রায় প্রকাশ করা হয়। পরে দুই আসামি প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করেন। তা নাকচ হয়েছে বলে কারাসূত্র জানায়।
এর আগে ২ মার্চ প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আট বিচারপতির আপিল বেঞ্চ আসামিদের আনা রিভিউ খারিজ করে দেন।
২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাবির কোয়ার্টারের ম্যানহোলে পাওয়া যায় পদোন্নতি সংক্রান্ত বিষয়ের জের ধরে নৃশংসভাবে হত্যার শিকার অধ্যাপক ড. এস তাহেরের মরদেহ। ৩ ফেব্রুয়ারি নিহত অধ্যাপক তাহেরের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দিয়েছিল পুলিশ।
এ হত্যা মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত চারজনকে ফাঁসির আদেশ ও দুজনকে খালাস দেন।
দন্ডপ্রাপ্তরা হলেন- একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, নিহত অধ্যাপক ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম, নাজমুল আলম ও আব্দুস সালাম।
খালাসপ্রাপ্ত দুজন হলেন-রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সী।
২০০৮ সালে বিচারিক আদালতের রায়ের পর নিয়ম অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদন্ড নিশ্চিতকরণ) হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা আপিল করেন।
শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় দুই আসামির ফাঁসির দন্ডাদেশ বহাল এবং অন্য দুই আসামির দন্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ দেন হাইকোর্ট। ফাঁসির দন্ডাদেশ বহাল রাখা দুই আসামি হলেন-একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহত ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম। ফাঁসির দন্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ পাওয়া দুই আসামি হলেন- নাজমুল আলম ও আব্দুস সালাম।
এরপর আসামিরা আপিল বিভাগে আপিল করেন। পাশাপাশি যাবজ্জীবন দন্ডিত দুই আসামির দন্ড বাড়াতে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
শুনানি শেষে গত বছরের ৫ এপ্রিল আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের রায় বহাল রাখেন। পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, ‘আসামিদের স্বীকারোক্তিগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, হত্যার এ ষড়যন্ত্রে মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনই মুখ্য ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। আমাদের এটা বলতে দ্বিধা নেই যে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন শুধু প্রফেসর হিসেবে পদোন্নতি পেতেই ড. তাহেরকে এ পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেন। তার ধারণা ছিল ড. তাহের বেঁচে থাকলে অধ্যাপক হিসেবে তার পদোন্নতি পাওয়া সম্ভব না। আমাদের এও বলতে দ্বিধা নেই যে, আপিলকারী জাহাঙ্গীর আলম এবং আবেদনকারী আব্দুস সালাম ও নাজমুল আর্থিক সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধা পাওয়ার জন্য অধ্যাপক তাহেরকে হত্যার জন্য ড. মহিউদ্দিনের প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন। ’
১৫ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। এরপর মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলম এবং যাবজ্জীবন দন্ডিত সালাম রিভিউ আবেদন করেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রিভিউয়ের ওপর শুনানি শুরু হয়, শেষ হয় ২৩ ফেব্রুয়ারি। রায় হয় ২ মার্চ।
হত্যার শিকার ড. তাহেরের কন্যা সুপ্রিমকোর্টের এডভোকেট সেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ. বাসসকে বলেন, নৃশংসভাবে তার পিতাকে হত্যার বিচার পেতে তাদেরকে দীর্ঘ ১৮ বছর ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। সবশেষ এখন রায় কার্যকর দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন পরিবার।