শিরোনাম
বরগুনা, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : জেলার তালতলী উপজেলার সওদাগর পাড়া গ্রামে লবণাক্ত জমিতে সবজি চাষ করে ২২০ জন চাষীর ভাগ্য ফিরেছে। বর্তমানে ওই গ্রামটি পরিচিতি পেয়েছে ‘সবজি গ্রাম’ নামে। লবণাক্ততার কারণে ধান চাষ করতে না পারা ফেলে রাখা জমিতে বছরজুড়ে এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি ফলাচ্ছেন তারা। ওই একটি গ্রাম থেকেই বছরে প্রায় ৭ কোটি টাকার উৎপাদিত বিভিন্ন সবজি রপ্তানি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।
স্থানীয় মানুষ ও কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, তালতলী উপজেলার বড়বগী ইউনিয়নের সওদাগর পাড়া গ্রামের চাষীরা শুধু ধান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তবে জমিতে অধিক পরিমাণ লবণ থাকায় ধানের উৎপাদন ভালো না হওয়ায় লোকসানের মুখে পড়তে হতো এ এলাকার অধিকাংশ চাষীকে । জীবিকার তাগিদ ও আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে বিকল্প উপায় খুঁজতে শুরু করেন তারা। পরবর্তী সময়ে প্রায় এক যুগ আগে শাহাদাত মাতুব্বর নামে এক স্থানীয় চাষী তার জমিতে বিশেষ পরিচর্যায় বিভিন্ন সবজির চাষ শুরু করেন। পরে বিকল্প হিসেবে সবজি চাষে শাহাদাতের সফলতা দেখে ওই গ্রামের অধিকাংশ চাষী সবজি চাষ করতে শুরু করেন। বর্তমানে গ্রামটির সাড়ে ৬শ' হেক্টরেরও বেশি জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করছেন স্থানীয় চাষীরা। একদিকে চাষীদের অর্থনৈতিক জীবন মানের উন্নয়ন ঘটেছে, অপরদিকে এলাকার বেকার থাকা অনেকেরই জীবিকা নির্বাহের জন্য কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।
বর্তমানে শীত মৌসুমে চাষীদের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে রয়েছে শিম গাছ। মাটি উঁচু করে মাঁচা পদ্ধতিতে বিশেষ পরিচর্যায় লাগানো প্রতিটি গাছেই ঝুলছে প্রচুর পরিমাণ ফুল ও শিম। চাষীদের পাশাপাশি এলাকার অনেক বেকার নারী-পুরুষ দৈনিক পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে ক্ষেত থেকে শিম তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রতিদিন শিম তোলার পর বস্তায় ভরে স্থানীয় পাইকারদের মাধ্যমে তা বিক্রির উদ্দেশ্যে পৌঁছে যায় বরগুনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।
মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন নামের স্থানীয় এক চাষী জানান, আমি আগে নদীতে মাছ ধরার কাজ করতাম। এলাকায় বিভিন্ন চাষীর সফলতা দেখে প্রথমে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে একটি জমি বায়না করি। পরে আরও ২ লাখ টাকা খরচ করে মাটি কেটে সবজি চাষ শুরু করি। বর্তমানে সবজি চাষে আমি লাভের টাকায় কয়েকটি গরু কিনেছি, জায়গা- জমি কিনেছি, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করাচ্ছি।
সবজি চাষী মো. আব্দুল মান্নান ফকির জানান, এ বছর আমার একটি সবজি ক্ষেত থেকে ৭ লাখ টাকার বিভিন্ন সবজি বিক্রি করেছি।
সওদাগর পাড়া গ্রামের সবজি চাষীদের পথপ্রদর্শক কৃষি উদ্যোক্তা শাহাদাত মাতুব্বর জানান, আমাদের গ্রামে বর্তমানে ২২০ জন কমার্শিয়াাল সবজি চাষী রয়েছেন। তাদের অধীনে প্রতিদিন হাজার খানেক লোক বিভিন্ন সবজি ক্ষেতে কাজ করেন। বছরে দুইটি মৌসুমে আমাদের এ একটি গ্রাম থেকে বরগুনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ৬ থেকে ৭ কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের সবজি বিক্রি করা হয়।
বরগুনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) কৃষিবিদ সিএম রেজাউল করিম জানিয়েছেন, তালতলী উপজেলার সওদাগর পাড়া গ্রামটি সবজি গ্রামে পরিচিত হয়েছে। ওই গ্রামের জমি লবণাক্ত থাকায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে মাটি কেটে উঁচু করে সবজি চাষ শুরু করেন চাষীরা। তাদের সফলতা দেখে পার্শ্ববর্তী এলাকাসহ বরগুনার বিভিন্ন এলাকার চাষীরা এখন সবজি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। আমরা কৃষি বিভাগ এ ধরনের কাজকে সাধুবাদ জানানোর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিচ্ছি।