বাসস
  ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৪২

রংপুর নগরীতে কাজে আসছে না ৩৪ লাখ টাকার ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি

ছবি : বাসস

রংপুর ৮ এপ্রিল ২০২৫ (বাসস): রংপুর নগরীতে কাজে আসছে না ৩৪ লাখ টাকার ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি।

বিভাগীয় নগরী রংপুরে গত দেড় দশকে মানুষের পাশাপাশি বেড়েছে যানবাহনের চাপ। কিন্তু ট্রাফিক ব্যবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি। এতে তীব্র যানজটে দুর্ভোগে পড়তে হয় নগরবাসীকে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে তিন বছর আগে ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরীতে ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি  স্থাপন করা হলেও তা কাজে আসছে না। বরং সরকারের টাকাগুলো অপচয় করা হয়েছে দাবি সুশীল সমাজের ।
রংপুর ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, যানজট নিরসনে রংপুর সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা পরীক্ষামূলকভাবে নগরীর পায়রা চত্বর, জাহাজ কোম্পানি মোড় ও লালকুঠি মোড় এলাকায় ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল পোস্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেন। ২০২২ সালের শুরুতে ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই তিন স্থানে ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল পোস্ট স্থাপন করা হয়। 

ট্রাফিক সিগন্যাল পরিচালনায় নগরীর জাহাজ কোম্পানি মোড় ও লালকুঠি মোড়ে বসানো হয় যন্ত্রপাতি। পায়রা চত্বরে ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যালের লাইটপোস্টগুলো স্থাপন করা হলেও পরবর্তী সময়ে সেগুলো সরিয়ে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক মোড়ে স্থাপন করা হয়। কিন্তু উদ্বোধনের এক মাস পর সেগুলো বিকল হয়ে যায়। এরপর থেকে সেগুলো আর ব্যবহার করা হয়নি।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, জাহাজ কোম্পানি মোড় ও লালকুঠি মোড়ে স্থাপন করা ট্রাফিক লাইটগুলো ভেঙে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মোড়ে সিগন্যালে লাল-সবুজ, বাতি জ্বললেও সেটি কোনো কাজে আসছে না। সেখানে ট্রাফিক পুলিশ দাঁড়িয়ে হাতের ইশারায় যান নিয়ন্ত্রণ করছেন। হাতের ফাঁক বেয়ে আইন ভেঙে অনেকে ছুটে চলছেন। এতে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজটের। ট্রাফিক সামলাতে কঠিন অবস্থায় পড়তে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের।

লালকুঠি মোড়ে কথা হলে প্রভাষক আইয়ুব আলী বলেন, ‘বিকেল হলে এখানে যানজটে নাকাল হতে হয়। ট্রাফিক সিগন্যাল গুলোতে প্রথম দিন বাতি জ্বলছে। এরপর থেকে এটা বন্ধ। 

জাহাজ কোম্পানি মোড়ে কথা হয় সাংবাদিক সালেকুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, রংপুর নগরীর প্রাণকেন্দ্র হলো জাহাজ কোম্পানি। বিভাগীয় শহর হওয়ার পর থেকে এখানে তীব্র যানজট লেগেই থাকে। তিন বছর আগে এখানে যখন ট্রাফিক সিগন্যাল লাগানো হয়, তখন অনেক আশা ছিল, কিন্তু ফল উল্টো হয়েছে। উদ্বোধনের পর থেকেই ট্রাফিক সিগন্যাল বন্ধ। এখন তীব্র যানজটে নাকাল অবস্থা আমাদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাফিকের এক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘ট্রাফিক বিভাগ বলেন আর নগরবাসী বলেন, কারও উপকারে আসছে না ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যালগুলো। এটা এক ধরনের অপচয়। এগুলো স্থাপনের আগে চালকদের নিয়ম শেখাতে হয়। তা না হলে যানজট কখনোই কমবে না। ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যালগুলোর সঠিক ব্যবহার হলে আমাদের রোদ-বৃষ্টিতে পুড়তে ও ভিজতে হবে না।

মহানগর নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব পলাশ কান্তি নাগ বলেন, নগরীতে চলাচল করা যানবাহনের চালকদের ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল সম্পর্কে ধারণা না থাকার কারণে এ সিস্টেমটি সফলতার মুখ দেখেনি। অপচয় হয়েছে রাষ্ট্রের অর্থ। যানজট নিরসনে সবার আগে প্রয়োজন চালকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

জেলা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক বিভাগ) আব্দুর রশিদ বলেন,  এক মাস আগে রংপুরে যোগদান করেছি। আসার পর থেকে দেখছি, সিগন্যালগুলো কাজ করছে না। ডিজিটাল সিগন্যালগুলো মেরামতের জন্য সিটি করপোরেশনকে জানানো হয়েছে। ঠিক হলে সেগুলো ব্যবহার করা হবে।