বাসস
  ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪:১৩
আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫:০৭

রাশিয়ার জ্বালানি খাতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা

গাজপ্রম নেফটও লোগো। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা, ১১ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ক্ষমতা ছাড়ার মাত্র কয়েক দিন আগে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য বৃহৎ রুশ জ্বালানি তেল কোম্পানি গাজপ্রম নেফটও সহ রাশিয়ার জ্বালানি খাতের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে। ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এ খবর জানায়।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ বলেছে, জ্বালানি খাত থেকে রাশিয়ার আয় কমানোর জি৭-এর প্রতিশ্রুতি রক্ষায় দেশটির ১৮০টির বেশি জাহাজের পাশাপাশি জ্বালানি তেল কোম্পানি গাজপ্রম নেফট ও সুরগাটনেফত গ্যাসের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

একই সময় যুক্তরাজ্য সরকার দুটি রুশ কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়ে বলেছে, এগুলোর মুনাফা ইউক্রেন যুদ্ধে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে অর্থের জোগান দিচ্ছে এবং যুদ্ধকে ত্বরান্বিত করছে।

এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘রুশ জ্বালানি তেল কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে নেওয়া এ পদক্ষেপ যুদ্ধে রাশিয়ার অর্থের জোগান হ্রাস করবে। পুতিনের হাত থেকে আমাদের কেড়ে নেওয়া প্রতিটি রুবল ইউক্রেনীয়দের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করবে।’

এছাড়া হোয়াইট হাউসে গতকাল শুক্রবার বাইডেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুতিন এ মুহূর্তে কঠিন অবস্থায় আছেন। আমি মনে করি, এটা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ যে তিনি যেসব ভয়াবহ কাজ করে চলেছেন, তা চালিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁর যেন নিশ্বাস ফেলার জায়গা না থাকে।’

রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে, গাজপ্রম নেফট নিষেধাজ্ঞাকে ‘ভিত্তিহীন’ ও ‘অবৈধ’ উল্লেখ করে এর নিন্দা জানিয়েছে।

কোম্পানির একজন প্রতিনিধির উদ্ধৃতি দিয়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থাগুলো জানায়, তারা গাজপ্রম নেফটকে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্তকে ভিত্তিহীন, অবৈধ এবং মুক্ত প্রতিযোগিতার নীতির পরিপন্থী বলে মনে করে। 

এদিকে নিষেধাজ্ঞার ওই খবরে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গতকাল বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে (২১৪৫জিএমটি) ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম বেড়েছে ব্যারেলপ্রতি ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এ কারণে প্রতি ব্যারেলের মূল্য দাঁড়িয়েছে ৭৯ দশমিক ৬৮ ডলার।

পেট্রলের দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে বাইডেন বলেন, প্রতি গ্যালনে তিন থেকে চার সেন্ট পর্যন্ত বাড়তে পারে। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘এ নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার ওপর আরও গভীর প্রভাব ফেলবে।’

আনুষ্ঠানিকভাবে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা আসার আগেই এ নিয়ে গুজব ছড়ায়। তখন যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানান ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বাইডেন প্রশাসন নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে ‘যতটা সম্ভব কঠিন উত্তরাধিকার’ রেখে যাচ্ছেন।

মার্কিন অর্থ বিভাগ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সব মিলিয়ে রাশিয়ার ৪০০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১৮৩টি জ্বালানি তেলবাহী জাহাজ, রুশ জ্বালানি তেল ব্যবসায়ী ও তেলক্ষেত্র পরিষেবাদাতা, রাশিয়ার দুটি বৃহৎ জ্বালানি তেল কোম্পানি এবং এদের অধীন দুই ডজনের বেশি প্রতিষ্ঠান।

এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এ নিষেধাজ্ঞার প্রশংসা করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘তেল সরবরাহব্যবস্থা ব্যাহত করার এ পদক্ষেপ রাশিয়ার যুদ্ধযন্ত্রের  আর্থিক ভিত্তির ওপর বড় আঘাত হানবে।’

বাইডেনের পদত্যাগের মাত্র ১০ দিন আগে শুক্রবারের ঘোষণাটি এসেছে এবং নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে তার প্রথম দিনেই ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার ইচ্ছা প্রকাশের কারণে কিছুটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে।

সময় সম্পর্কে জানতে চাইলে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কারবি সাংবাদিকদের বলেন, ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের পর তেলের বাজার এখন মৌলিকভাবে ভালো অবস্থানে রয়েছে এবং মার্কিন অর্থনীতিও ভালো অবস্থানে রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের কৌশল পরিবর্তন করার এখনই উপযুক্ত সময়।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ঘোষণা করেছে,  যে তারা রাশিয়ার জ্বালানি খাতের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ নিচ্ছে, প্রায় ৮০টি প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, যার মধ্যে রাশিয়া থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) উৎপাদন ও রপ্তানিতে নিয়োজিত ব্যক্তিরাও অন্তর্ভুক্ত।’

আরও যাদেরকে এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে তাদের মধ্যে রাশিয়ার ধাতু ও খনি খাতের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা এবং রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি কর্পোরেশন রোসাটমের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও রয়েছেন।