বাসস
  ২৯ জুলাই ২০২৩, ১২:২৫

কুষ্টিয়া ভূমি অফিস : ১ বছরে ১৫,৫০০ মানুষকে দিয়েছে অনলাইনে সেবা

॥ নুর আলম দুলাল ॥
কুষ্টিয়া, ২৯ জুলাই ২০২৩ (বাসস):  জেলায় ঝক্কি ঝামেলামুক্ত থেকে ঘরে বসেই ক্রয়কৃত ও পৈত্রিক জমি খারিজ করতে পারছেন অনলাইনের মাধ্যমে। এতে জমির মালিক ও বিক্রেতাকে দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগীর পাল্লায় পড়তে হচ্ছে না। সরকারের ডিজিটাল প্রযুক্তির সেবার আওতায় কুষ্টিয়া সদর উপজেলা ভূমি অফিস গত ২০২২-২৩ অর্থ বছরে সাড়ে ১৫ হাজার মানুষকে এ সেবা প্রদান করেছে।
জানা যায়, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা ভূমি অফিস এক সময়ে দালাল আর মধ্যস্বত্বভোগী ও কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে ভূমি খারিজ, মিসকেস নানা ভূমি সেবা পেতে নাজেহাল হতে হতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কুষ্টিয়া সদর উপজেলাসহ দেশের সব জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে আগের ম্যানুয়াল পদ্ধতির পরিবর্তে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সেবা প্রদান করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের নাগরিকরা অনলাইনে আবেদন করে দেশের ৬৪টি জেলায় স্থাপিত ই-সেবা কেন্দ্র থেকে জমি-জমা সংক্রান্ত বিভিন্ন দলিলের সত্যায়িত অনুলিপি সংগ্রহ করতে পারে। বাংলাদেশে বর্তমানে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১৮ কোটি। ফলে সরকারি কোনো বিশেষ ঘোষণা মোবাইল ফোনের ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে সরাসরি ওই সকল ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা ভূমি অফিসে গেলে দেখা যায়, একেবারে পিক আওয়ারেও মাত্র কয়েকজন মানুষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের শুনানী ঘরে বসে আছেন। প্রধান ফাটক পেরিয়ে ডান হাতে রয়েছে তথ্য প্রদান কেন্দ্র। এখানে কম্পিউটারে মনোযোগ দিয়ে নথি পোস্ট করছেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলা ভূমি অফিসের পেশকার বদিউজ্জামান। তার সঙ্গে আলাপকালে জানান- এখন আর মানুষ এখানে এসে লাইনে দাঁড়ায় না। স্ব-স্ব ইউনিয়ন ও বিভিন্ন ডিজিটাল সেন্টার থেকে শুধু নথি আসে আমরা সে সব নথিগুলো অনলাইনে এসিল্যান্ডের সাইটে পোস্টিং দেয়া হয়। তিনি সেখান থেকে শুনানীর দিন, সংশোধন, নথিতে কোন তথ্যের প্রয়োজন হলে তাৎক্ষণিক ম্যাসেজ দিচ্ছেন। সাথে-সাথে গ্রাহকের মোবাইল ফোনে ম্যাসেজ চলে যাচ্ছে। গ্রাহক ঘরে বসেই জানতে পারছেন কবে কখন তার আবেদনকৃত জমির খারিজের শুনানীর দিন এবং তার কোন সংশোধনের প্রয়োজন আছে কিনা। ম্যাসেজ পাওয়ার পর গ্রাহক ইচ্ছে করলেই ঘরে বসেই কাজটি সম্পন্ন করতে পারেন অথবা যে কোন ডিজিটাল সেন্টারে গেলে সেবাটি পেয়ে থাকেন। এ জন্য এখন আর আমাদের কাছে মানুষকে আসতে হয় না। শুধুমাত্র খারিজ বা মিস কেস সমাধান হওয়ার পর হার্ডকপি বা সিলমোহরকৃত কাগজটি সংগ্রহ করতে আসেন। কেউ কেউ অনলাইনেও সত্যায়িত কপি দিয়ে কাজ সম্পন্ন করছেন। বদিউজ্জামান জানান, শুনেছি আগে এ অফিসে ওই গেট পর্যন্ত লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন। কিন্তু হাতে গোনা কয়েকজন মানুষ আসেন তাদের নিজ প্রয়োজনে এবং যারা ডিজিটাল সেবা সম্পর্কে এখনও অবগত নন তারা। আমরা কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. এহেতেশাম রেজা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাধন কুমার বিশ্বাস ও সর্বপরি আমাদের এসিল্যান্ড দবির উদ্দিনের আন্তরিক প্রচেষ্টায় এ সেবার গতি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি জানান, গত ২০২২-২৩ অর্থ বছরে আমরা কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় সাড়ে ১৫ হাজার মানুষকে অনলাইনে নাম খারিজ, মিসকেস সেবা দিয়েছি। এ কাজ করে আমার কাছে খুব আনন্দ বোধ করছি। আগে দুপুরের খাবার খেতেই পারতাম না। মানুষ ঘাড়ের উপর দাঁড়িয়ে থাকতো। দিনে-দিনে মানুষ জেনে যাচ্ছেন অফিসে মানুষের আগমনও কমে যাচ্ছে অনেক। তিনি তার কাজে খুব স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন বলে জানান।
কথা হয় কুষ্টিয়া পৌরসভার তহশিলদার আমিরুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান, সরকার মানুষকে আধুনিক উন্নত সেবা দিতে ভুমি অফিসে অনেক আধুনিকায়ন করেছে। এতে করে ভূমি অফিসের বিরুদ্ধে আগে যে সকল অপবাদ দেয়া হতো। তা আর শুনতে হয় না। এসিল্যান্ড দবির উদ্দিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কম্পিউটারেই বসে থাকেন। সারাক্ষণ বসে তিনি শুধু অনলাইনে সকল সেবা মানুষকে দিয়ে যাচ্ছেন। খুব প্রয়োজন হলে আমাদেরকে ডাকেন আমরা তখন তার দপ্তরে যাই।
তিনি জানান, যে কোন ব্যক্তি এখন ঘরে বসেই তার জমি খারিজ করতে পারছেন। নগদে, রকেটে সরকারি ফি জমা দিচ্ছেন। গত চার বছর এ অফিসে কোন নগদ অর্থ গ্রহণ করা হয় না বা প্রয়োজন পড়ে না। তিনি এ সেবা নিতে মানুষকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেখার আহবান জানান। পৈত্রিক জমি খারিজ করতে আসা কুষ্টিয়া পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের চৌধুরী কওসের উদ্দিন আহমেদ সড়ক থানাপাড়ার বাসিন্দা জাকির হোসেন বাবলু জানালেন, আরে ভাই আগে জমি খারিজের কথা শুনলেই ভয় লাগতো। কি করবো, কোথায় যাব, কি হবে, নানা চিন্তা। ২০০৮ সালে আমাদের পিতার ইন্তেকালের পর আমরা চার ভাই বোন জমি খারিজ করতে কুষ্টিয়া সদর ভূমি অফিসে এসেছি মাত্র একদিন। অনলাইনে মাত্র ৭০ টাকায় আবেদন করেছি। মোবাইলে ম্যাসেজ গেছে। তারপরে নির্ধারিত ফি নগদে জমা দিয়েছি। এক সপ্তাহ পর জমি খারিজের কাগজ হাতে পেয়েছি। এ অফিসের কাউকে কোন অনুরোধ, টাকা পয়সা বা জবাবদিহিতা করতে হয়নি।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর থেকে আগত আব্দুল কাদের জানান- মাঠে কয়েক বিঘা জমি ছিল। পিতা ইন্তেকালের পর এক সাথেই ছিল। এখন ভাইবোনের আবদারের ফলে তারা ভাগ করে নিয়েছে। এর পর নামে নামে খারিজ করতে ভূমি অফিসে আসলে মাত্র চারদিনেই তাদের জমি নামে-নামে খারিজ হয়েছে।
কুষ্টিয়া সদর ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) দবির উদ্দিনের সাথে। তিনি জানান, আমার দপ্তরে কোন মানুষকে দাঁড় করিয়ে রাখার সুযোগ নেই। একজন মানুষ যখন অনলাইনে জমি খারিজের জন্য আবেদন করছেন। আবেদনের পর থেকে একটা টাইম দেয়া থাকে মন্ত্রণালয় থেকে। ওই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমাকে গ্রাহককে জানাতেই হবে। তার নথিটির কি অবস্থা। সে অনুযায়ী আমাকে অনলাইনে সাবমিট করতে হয়। তিনি জানান, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে সাড়ে ১৫ হাজার অনলাইনে জমি খারিজ, ১৯০টি মিসকেস সমাধান, এ ছাড়া অনলাইনে দলিল, পর্চা সেবা দেয়া হয়েছে। ৪ কোটি ২৭ লাখ ভূমি উন্নয়ন কর আদায় হয়েছে। এর মাত্রা আগামীতে আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা রাখি। স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমাণে এখন প্রয়োজন স্মার্ট সিটিজেন। তা হলেই এ সেবার গতি ও মান আরও উন্নত এবং গতি সম্পন্ন হবে। এ জন্য তিনি সকলের সহযোগীতা কামনা করেছেন।