শিরোনাম
চট্টগ্রাম, ৮ আগস্ট, ২০২৩ (বাসস) : ভারী বর্ষণে সড়ক ডুবে যাওয়ায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চন্দনাইশ অংশে প্রায় তিন কিলোমিটার ডুবে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে চট্টগ্রামের সাথে বান্দরবান ও কক্সবাজারের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলা। সাতকানিয়ার সব ইউনিয়ন পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়াও চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি ছাড়া বাকি সব উপজেলা কম-বেশি প্লাবিত হয়েছে। এ অবস্থায় পানিবন্দি মানুষদের রক্ষায় সেনা ও নৌবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
ডিসি আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলায় বন্যার কবলে পড়া লোকজনকে উদ্ধার এবং সহায়তার জন্য সেনা ও নৌবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করার পর তারা কাজ শুরু করেছে।
এদিকে, বৃষ্টির পানি এবং পাহাড়ি ঢলে বিভিন্ন অংশ তলিয়ে যাওয়ায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে চট্টগ্রামের সঙ্গে বান্দরবান ও কক্সবাজারের যোগাযোগ একপ্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ সড়ক উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চন্দনাইশের কসাইপাড়া, সাতকানিয়ায় কেরানিহাট ও আশেপাশের এলাকা এবং লোহাগাড়া উপজেলার কিছু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এ কারণে এই মহাসড়ক দিয়ে যানবাহন চলতে পারছে না।
সূত্র জানায়, বান্দরবান থেকে নেমে আসা সাংগু ও ডলু নদীর ঢল এবং কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাতে চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ায় বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়ক ডুবে গিয়ে যোগাযোগ বন্ধ হয়েছে। ডুবে গেছে একতলা বাড়িও। এছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকা এবং নেটওয়ার্ক সমস্যা তৈরি হওয়ায় এলাকার লোকজন মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েছেন। বন্যায় কোনো কোনো এলাকার বাড়িঘর ডুবে যাওয়ার পর তারা নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারেননি। এসব এলাকায় ত্রাণ ও উদ্ধার তৎপরতা চালানো জরুরি।
তিন উপজেলার মধ্যে সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া, বাজালিয়া, ঢেমশা, সদর ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সোনাকানিয়া ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া লোহাগাড়ার পদুয়া ও আমিরাবাদ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা এবং চন্দনাইশের ধোপাছড়ি ও দোহাজারী পৌরসভার আশেপাশের এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।
দোহাজারি হাইওয়ে পুলিশের ওসি খান মোহাম্মদ এরফান বলেন, টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢলের পানি সরাসরি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সড়কের ওপর এখন কোমর সমান পানি। যে কারণে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সমস্যাটি সোমবার রাত ৯টা থেকে শুরু হয়। তখন বড় গাড়িগুলো ধীরে আসা-যাওয়া করতে পারলেও সকাল থেকে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তা বন্ধ হয়ে যায়।’
চন্দনাইশ উপজেলার বাসিন্দা আবিদুর রহমান বাবুল জানান, টানা বৃষ্টিতে চন্দনাইশ উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে বন্যা দেখা দিয়েছে। বহু পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
চট্টগ্রাম ও বান্দরবানে বন্যা পরিস্থিতি ও ভূমিধস মোকাবিলায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদের নির্দেশে প্রশাসনকে সহায়তার লক্ষ্যে সেনা সদস্যদের মোতায়েন করা হয়।
আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানায়, মোতায়েন করা সেনা সদস্যরা নিরলসভাবে উদ্ধার তৎপরতা, জরুরি ত্রাণকার্য পরিচালনা, চিকিৎসা সহায়তা প্রদান এবং বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক সহায়তা কার্যক্রম চলমান রেখেছেন।
এছাড়াও সেনাবাহিনীর অন্যান্য ফরমেশনগুলো নিজস্ব দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রশাসনকে সহায়তার জন্য সদা প্রস্তুত রয়েছে।
বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই মানবিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে আইএসপিআর।