বাসস
  ১০ আগস্ট ২০২৩, ২১:০৫
আপডেট : ১০ আগস্ট ২০২৩, ২২:২১

সাইবার নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের উৎকন্ঠা দূর হবে : আইনমন্ত্রী

ঢাকা, ১০ আগস্ট ২০২৩ (বাসস) : আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইন নিয়ে সাংবাদিক মহল যেসব সমস্যা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ছিলেন, সেটি দূর হবে। রাজধানীর বিসিসি অডিটোরিয়ামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ রহিতকরণ এবং প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলন প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি আজ এসব কথা বলেন।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব মো. মইনুল কবির, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার, তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিনসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইন সাইবার অপরাধ বন্ধে অত্যন্ত সহায়ক হবে। পাশাপাশি সাংবাদিক মহল যেসব সমস্যা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ছিলেন, সেটাও দূর হবে। তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণে জনগণের মধ্যে যে মানসিক চাপ তৈরি হয়েছে কিংবা গণমাধ্যমে স্বাধীনভাবে সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে যে মানসিক চাপ বা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, তা সাইবার নিরাপত্তা আইনে দূর হবে। 
আনিসুল হক বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যেসব ধারায় সাজার পরিমাণ অনেক বেশি ছিল এবং এনিয়ে বেশ বিতর্ক তৈরি হয়েছিল, সেগুলোর সাজা সাইবার নিরাপত্তা আইনে কমিয়ে আনা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বেশকিছু ধারা জামিন অযোগ্য ছিল, সেগুলোকে নতুন আইনে জামিনযোগ্য করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অনেক ধারায় দ্বিতীয়বার অপরাধ সংঘটনের জন্য সাজা দ্বিগুণ কিংবা সাজার মেয়াদ বাড়ানোর বিধান করা হয়েছিল। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যেসব ধারায়  দ্বিতীয়বার অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রে বাড়তি সাজার কথা বলা আছে, সেগুলো নতুন আইনে বাতিল করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৯ ধারায় মানহানির বিষয়টি ছিল। এতে বলা ছিল, (১) যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে পেনাল কোডের (দন্ডবিধি) ৪৯৯ ধারায় বর্ণিত মানহানিকর তথ্য প্রকাশ বা প্রচার করেন, সে জন্য তিনি অনধিক তিন বছর কারাদন্ড বা অনধিক পাঁচ লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। আর যদি কোনো ব্যক্তি উপধারা (১)-এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয়বার বা পুনঃপুনঃ সংঘটন করেন, তাহলে ওই ব্যক্তি অনধিক পাঁচ বছর কারাদন্ড বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনে মানহানির অপরাধের জন্য কারাদন্ড বাদ দিয়ে শুধু জরিমানার বিধান করা হয়েছে। এখন এই অপরাধের জন্য অনধিক ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। জরিমানা এক টাকাও হতে পারে। অপরাধের মাত্রা বিবেচনা করে আদালত এটি নির্ধারণ করবে। তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হলো, মানহানির মামলার ক্ষেত্রে নতুন আইনে কাউকে সরাসরি গ্রেফতার করা যাবে না এবং গ্রেফতারের কোনো আতঙ্ক বা আশঙ্কা থাকবে না। তবে জরিমানা না দিলে তিন মাস থেকে সর্বোচ্চ ছয় মাস পর্যন্ত কারাদন্ড দেয়া যাবে। কিন্তু অপরাধের মূল শাস্তি  হবে জরিমানা। 
মন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়নি, পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন যদি বলি, বাতিল করা হয়েছে, তাহলে আপনারা প্রশ্ন করবেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রায় সব ধারাই তো এ আইনে আছে। তাহলে আপনি কেন বলছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। যে কারণে আমি পরিবর্তন শব্দটি ব্যবহার করেছি।’ 
সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের যুক্তিকতা তুলে ধরে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আসলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সংশোধন, পরিমার্জন ও পরিবর্তনগুলো এতটাই বেশি ছিল যে, যখন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ পড়তে হতো, তখন সঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা (সংশোধন) আইনটিও সঙ্গে রাখতে হত, এটা কনফিউজিং হতো।’ সেজন্যই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরিবর্তে সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ নামে নতুন আইন করা হচ্ছে। এখানে ডিজিটালের পরিবর্তে সাইবার নামটা রাখা হয়েছে, এটার ব্যাপ্তি বাড়ানোর জন্য। আমাদের স্মরণ রাখতে হবে যে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ সালে অনুমোদনের পর ৫ বছর অতিবাহিত হয়েছে। আমাদের ৫ বছরের অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। অভিজ্ঞতার পাশাপাশি সারাবিশ্বে আইসিটি সংক্রান্ত  অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আইসিটি সংক্রান্ত বিশ্বের যে ব্যাপ্তি কিংবা ধরন, তার বেশ পরিবর্তন এসেছে। সেসব কিছুকে বিবেচনায় রেখে সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। 
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে আনিসুল হক বলেন, আজ থেকে প্রায় ১৫ বছর আগে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার নতুন এক স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। উদ্দেশ্য ছিল একবিংশ শতাব্দীর প্রযুক্তিনির্ভর বেগবান বৈশ্বিক উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে তথ্য-প্রযুক্তিভিত্তিক নতুন এক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা এবং বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্ন ‘সোনার বাংলা’ গড়া। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে দেশের আপামর জনসাধারণ জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ম্যান্ডেট দিলে তিনি ২০০৯ সাল সরকার গঠন করেন এবং কাল বিলম্ব না করে তথ্য-প্রযুক্তিভিত্তিক ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সুদূর প্রসারী ও বাস্তবধর্মী বহুমুখী পদক্ষেপ নেন। বর্তমানে যার সুফল ভোগ করছে দেশের প্রায় ১৮ কোটি মানুষ। তিনি বলেন, ‘আমরা সকলেই ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল ভোগ করলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর সীমাবদ্ধতাও পরিলক্ষিত হয়। সেটি হলো ডিজিটাল মাধ্যমকে ব্যবহার করে নতুন নতুন অপরাধ সংঘটন। যা রাষ্ট্র ও জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে নিয়ন্ত্রণ করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। প্রচলিত আইনে এসব সাইবার অপরাধ দমনের সুযোগ না থাকায় নতুন আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এরই প্রেক্ষাপটে প্রণয়ন করা হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮। কিন্তু আইনটি প্রয়োগের শুরুতেই আমরা এর কিছু  অপব্যবহার বা মিসইউজ দেখতে পাই যা অকপটে স্বীকার করতে কখনই বিন্দু পরিমাণ কুণ্ঠাবোধ করিনি এবং করবোও না। সে সময় এ আইনের অপব্যবহার প্রতিরোধে আমরা বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করি। ফলে এই আইনের অপব্যবহার অনেকটাই কমে যায়।’
আনিসুল হক বলেন, সরকার চায় আইনটির যাতে কোন অপব্যবহার না হয়। সেকারণেই আমরা বার বার বলেছি, এই আইন সংশোধন করা হবে। এর আলোকে আইনটি সংশোধনের জন্য আমরা একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছিলাম। এই কমিটি দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সাথে ধারাবাহিক ও দীর্ঘ আলোচনার পর আমাদেরকে যে মতামত বা রিপোর্ট প্রদান করে তাতে দেখা যায়, আইনটি ব্যাপক আকারে  সংশোধন, পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করা প্রয়োজন। সেকারণেই আমরা ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ কে রহিত করে "সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩" নামে নতুন আইন প্রণয়ণের কার্যক্রম শুরু করি এবং গত ৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখের মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনটি অনুমোদন লাভ করে।