শিরোনাম
ঢাকা, ১১ আগস্ট, ২০২৩ (বাসস) : পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে জোরালো আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে ওআইসি-ইউএনএইচসিআর-এর যৌথ প্রতিনিধিদলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের উপর নৃশংসতার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের তাদের পৈতৃকভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন অথবা তৃতীয় দেশে পুনর্বাসনই- রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সফররত ওআইসি-ইউএনএইচসিআর-এর যৌথ প্রতিনিধিদলের সাথে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব এ আহ্বান জানান।
বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব এই মর্মান্তিক সংকটের টেকসই সমাধান নিশ্চিত করতে জোরালো আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় করা এবং প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার জন্য ওআইসি-ইউএনএইচসিআর যৌথ প্রতিনিধি দলের প্রতি আহ্বান জানান।
ওআইসি’র মানবিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বিষয়ক সহকারী মহাসচিব রাষ্ট্রদূত তারিগ আলী বখেত এর নেতৃত্বে সংস্থার প্রতিনিধিদল, ইউএনএইচসিআর হাইকমিশনার এর সিনিয়র উপদেষ্টা মি. খালেদ খলিফা নেতৃত্বে ইউএনএইচসিআর প্রতিনিধিদল এবং অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গাদের অবস্থা সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে গত ৬ আগস্ট থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করছে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার মিয়ানমারের পিতৃভূমি থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও সুরক্ষা দিয়েছে।
তিনি প্রত্যাবাসন বাস্তবায়নের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরে যাওয়ার অধিকার নিশ্চিতে জাতিসংঘ, বিভিন্ন আঞ্চলিক সংস্থা এবং অন্যান্য বন্ধুত্বপূর্ণ দেশগুলির অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণের বিষয়ে বাংলাদেশের অভিপ্রায়ের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে প্রাপ্ত মানবিক সহায়তারও প্রশংসা করেছেন।
রাষ্ট্রদূত মোমেন ওআইসি-ইউএনএইচসিআর প্রতিনিধিদলের কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সফরের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, প্রতিনিধি দল সংকট সম্পর্কে প্রত্যক্ষ ধারণা এবং সেইসাথে রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগ লাঘবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে গৃহীত প্রচেষ্টা প্রত্যক্ষ করেছে।
তিনি ভাসান চর প্রকল্পের বিষয়ে প্রতিনিধি দলকে অবহিত করেন, যেখানে বাংলাদেশ সরকার তার নিজস্ব সম্পদ থেকে ৩৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে।
ওআইসি মহাসচিবের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরের কথা স্মরণ করে পররাষ্ট্র সচিব আইসিজেতে গাম্বিয়ার মামলা দায়ের এবং ওআইসির বিভিন্ন ফোরামে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তরিক প্রচেষ্টার বজায় রাখার মাধ্যমে ওআইসি মহাসচিবকে তার দৃঢ় সমর্থনের জন্য প্রশংসা করেন।
আইসিজেতে গাম্বিয়ার মামলার জন্য অপর্যাপ্ত তহবিল ও সেইসাথে এফডিএমএনএস-এর জন্য মানবিক কার্যক্রমের সহায়তা হ্রাস করা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে পররাষ্ট্র সচিব ওআইসি তথা উপসাগরীয় দেশগুলোর প্রতি রোহিঙ্গাদের জন্য তাদের সহায়তা বৃদ্ধির আহ্বান জানান।
সাক্ষাতের সময় ওআইসির সহকারী মহাসচিব রোহিঙ্গাদের আশ্রয়, সুরক্ষা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ায় বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের প্রশংসা করেন। তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুতে গঠনমূলকভাবে ওআইসির সম্পৃক্ত থাকার প্রতিশ্রুতির কথা আবারও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘প্রত্যাবাসনই এই সংকটের চূড়ান্ত সমাধান।’
হাইকমিশনারের সিনিয়র উপদেষ্টা এবং জিসিসি দেশগুলির জন্য ইউএনএইচসিআর-এর প্রতিনিধি বিভিন্ন উৎস হতে তহবিল সংগ্রহের পরামর্শ দিয়েছে।
এই বৈঠকের আগে ওআইসি-ইউএনএইচসিআর প্রতিনিধিদলটি ১০ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সঙ্গে সাক্ষাত করেন।
বৈঠকে মুখ্য সচিব কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে স্থানান্তর বিষয়টি সফররত প্রতিনিধি দলের কাছে তুলে ধরেন এবং জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানে (জেআরপি) আরও সহায়তা চেয়েছেন।
তিনি সফররত প্রতিনিধিদলকে রোহিঙ্গাদের জন্য যৌথভাবে অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুরোধ জানান এবং তাদের বিষয়টি বৈশ্বিক ইস্যু হিসেবে তুলে ধরতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বাড়ানোর আহ্বান জানান।
সফররত ওআইসি-ইউএনএইচসিআর প্রতিনিধি দলে মিয়ানমারে নিযুক্ত ওআইসি বিশেষ দূত রাষ্ট্রদূত ইব্রাহিম আহদি খায়রাত, ইসলামিক সলিডারিটি ফান্ড (আইএসএফ), কাতার ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (কিউএফএফডি), কুয়েতের যাকাত হাউস এন্ড কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভলপমেন্ট (কেএফএইডি)-এর প্রতিনিধিবৃন্দ রয়েছেন।