বাসস
  ১২ আগস্ট ২০২৩, ২২:৩৭

বিশ্ব মিডিয়ায় আবেগময় ভাষায় বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু সংবাদ প্রচার  

॥ মলয় কুমার দত্ত ॥
ঢাকা, ১২ আগস্ট, ২০২৩ (বাসস) : ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও  তার পরিবারের সদস্যদের নৃশংস হত্যাকা-ের পর বিশ্ব মিডিয়া তাদের রাজনৈতিক মতামত জুড়ে অত্যন্ত আবেগপূর্ণ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এবং বাঙালি জাতির জন্য তাঁর পরিশ্রম ও আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করে বলেছে যে এই হত্যাকা- ছিল একটি বিশ্বাসঘাতকতা এবং তাঁর মৃত্যু নবজাতক জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।
অল ইন্ডিয়া রেডিও আকাশবাণী ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট প্রথম ‘'যীশু মারা গেছেন’ বলে একটি ভাষ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী মর্মান্তিক সংবাদ প্রকাশ করে। আকাশবাণী মন্তব্য করে ‘এখন কোটি কোটি মানুষ ক্রুশ পরিধান করে যীশুকে স্মরণ করে। সম্ভবত, একদিন মুজিবকেও এমনিভাবে স্মরণ করা হবে।’
লেখক ও গবেষক ড. চৌধুরী শহীদ কাদের এক নিবন্ধে ১৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞ নিয়ে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের কথা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেন। প্রবন্ধটি ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসির মামুন সম্পাদিত সংকলন ‘বাংলাদেশ চরর্চা’য় প্রকাশিত হয়। কাদেরের ‘ভারতীয় মিডিয়ায় বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা-’ শিরোনামের নিবন্ধ অনুসারে, ভারতীয় সংবাদপত্র ইকোনমিক টাইমস ১৭ আগস্ট ‘মুজিবের মৃত্যুতে ভারত শোকাহত’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করে।
সানডে স্ট্যান্ডার্ড একই দিনে শিরোনাম করেছিল ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মুজিব, সেনা অভ্যুত্থানে নিহত, খন্দকার নতুন রাষ্ট্রপতি এবং সামরিক আইনের অধীনে দেশ’। তবে হেডলাইনে সামান্য ত্রুটি ছিল কারণ হত্যার সময় বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তবে পত্রিকাটি ‘মুজিব: সাড়ে ৭ কোটি বাঙালির মুক্তিদাতা’ শিরোনামে একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। সানডে স্ট্যান্ডার্ডের সম্পাদকীয়’র ভূমিকায় বলা হয়, ‘সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত শেখ মুজিবুর রহমান চার বছর বয়সী জাতির পিতা এবং দেশটির সাড়ে ৭ কোটি মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধু হিসাবে পরিচিত ছিলেন।’
ভারতের মর্যাদাবান সংবাদপত্র দ্য স্টেটসম্যান তার প্রধান শিরোনাম করে, ‘মুজিবের মর্মান্তিক মৃত্যুতে বাংলাদেশের শোকের দিকে নজর রাখছে ভারত।’ পত্রিকাটি তার অর্ধ-পৃষ্ঠাজুড়ে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঘটনাবহুল জীবনী প্রকাশ করে। এর শুরুটা ছিল চমৎকার একটি বাক্য দিয়ে, ‘সাড়ে ৭ কোটি বাঙালির স্বাধীনতার ঘোষণার পেছনের প্রেরণা ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।’
১৭ আগস্ট, টাইমস অব ইন্ডিয়া বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা-, বাংলাদেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি এবং বিশ্ব নেতাদের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ১৬টি পৃথক সংবাদ প্রকাশ করে। একটি সংবাদ শিরোনাম-“বাংলা এখনও বিচ্ছিন্ন”, বিশ্বের সাথে বাংলাদেশের যোগাযোগ স্থগিত করার বিষয়টি তুলে ধরে। আরেকটি সংবাদের শিরোনাম ছিল- “বাংলাদেশ ইসলামী প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়েছে”।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিক্রিয়াও শিরোনামে এসেছে- " মার্কিন যুক্তরাষ্ট  ঘটনাবলী পর্যবেক্ষণ করছে, সোভিয়েত মিডিয়া মন্তব্য ছাড়াই অভ্যুত্থানের প্রতিবেদন করেছে।" মিশর, মালয়েশিয়া ও যুক্তরাজ্যের প্রতিক্রিয়ার কথাও উল্লেখ করেছে পত্রিকাটি।
অন্য একটি প্রতিবেদনে টাইমস অব ইন্ডিয়া উল্লেখ করেছে যে খন্দকার মুস্তাক তার সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য পাকিস্তানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। প্রতিবেদনে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশে ৫০০ মেট্রিক টন চাল ও অন্যান্য উপহার সামগ্রী পাঠানোর পাকিস্তানের প্রতিশ্রুতিও উল্লেখ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জীবন, রাজনৈতিক উত্থান, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, একটি স্বাধীন জাতি গঠনে তার ভূমিকা এবং তার অসাম্প্রদায়িক চিন্তাভাবনা তুলে ধরে -“সোনার বাংলার জনক” শিরোনামে একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করে।
ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে পোল্যান্ডই সর্বপ্রথম বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ করে। প্রতিক্রিয়ায় দেশটি বলেছে যে অভ্যুত্থানে বামপন্থী এবং চীনপন্থী শক্তির হাত রয়েছে। পোল্যান্ড দেশব্যাপী হত্যা, সন্ত্রাস ও নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালানোর জন্য বাহিনীকে অভিযুক্ত করেছে।
ফরাসি দৈনিক হিউম্যানাইট মন্তব্য করেছে, ‘বাংলাদেশের অভ্যুত্থান পূর্বপরিকল্পিত বলে মনে হচ্ছে। অভ্যুত্থানের পেছনে আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল এবং খন্দকার মুস্তাক বাংলাদেশে ওয়াশিংটনের সবচেয়ে বড় বন্ধু।
১৮ আগস্ট ভারতীয় বাংলা দৈনিক যুগান্তর -“একটি দুসংবাদ, কিছু বেদনা-বিধুর স্মৃতি” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বর্ণনা করা হয়েছে যে কীভাবে কলকাতাবাসী দুঃখজনক খবরটি পেয়েছে। বাংলাদেশে হত্যাকান্ড ও পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে দৈনিকটি। যুগান্তরের স্টাফ রিপোর্টার মিহির গাঙ্গুলী একটি গল্পে লিখেছেন যে, কীভাবে কলকাতাবাসী ঢাকা বেতার কেন্দ্র থেকে খবর পেল। "যাদের নিয়মিত বিদেশী রেডিও শোনার শখ আছে, তারা প্রথমে শেখ মুজিবের হত্যা এবং বাংলাদেশে পরিবর্তনের দুঃখজনক সংবাদের মধ্য দিয়ে যায়।" ঢাকা থেকে ফোনে খবর পেয়েছেন বলে গাঙ্গুলি জানান যে মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয় এবং খন্দকার মোশতাক ক্ষমতা গ্রহণ করে এবং ঢাকা আবার উগ্র শাসনের অধীনে চলে যায়।