শিরোনাম
॥ মাহমুদুল হাসান রাজু ও মলয় কুমার দত্ত ॥
ঢাকা, ১৩ আগস্ট, ২০২৩ (বাসস) : দেশের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাবিদ, আইনজীবী ও সাংবাদিকবৃন্দ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে হত্যাকান্ডে মাধ্যমে বাঙালি জাতিকে কলঙ্কিত করার চক্রান্ত তদন্তে অবিলম্বে একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যায় দেশে-বিদেশের ষড়যন্ত্র উদঘাটনের জন্য ১৫ আগস্টের ঘটনার আরও তদন্ত প্রয়োজন উল্লেখ করে তারা বলেন, একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত এবং দোষীদের আইনের আওতায় আনা হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব হবে।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ১৫ আগস্টের ষড়যন্ত্রের বিস্তারিত নীল নকসা খুঁজে বের করার জন্য একটি ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং কমিশন গঠন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যের ষড়যন্ত্র খতিয়ে দেখতে যুক্তরাষ্ট্রের ডিক্লাসিফাইড তথ্যের ওপর নির্ভরশীল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক সিদ্দিক বলেন, এখন আমাদের স্থানীয় উৎস অনুসন্ধান করে বাইরের উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যেও সঙ্গে যাচাই করে পুরো চক্রান্তের ঘটনা জানতে হবে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্র একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার অধীনে বেশ কয়েকটি ধাপে তৈরি হয়েছিল এবং আমরা যদি প্রতিটি পর্যায়ে ফোকাস করতে পারি তবে পুরো পর্ব এবং পরবর্তী ঘটনার সঙ্গে যোগসূত্র জানা যাবে।
অধ্যাপক সিদ্দিক বলেন, কিছু মাস্টারমাইন্ড বিদেশ থেকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল যখন স্থানীয় আততায়ীরা পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল এবং এর পেছনে আমেরিকার বড় হাত রয়েছে বলে ধারণা ছিল। সুতরাং, ইতিহাসের স্বার্থে সবকিছুর প্রতি আলোকপাত করা উচিত।
কমিশন গঠনের গুরুত্ব উল্লেখ করে, অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের উদাহরণ উল্লেখ করেন, যেখানে প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি, মহাত্মা গান্ধী, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং রাজীব গান্ধীর হত্যাকান্ডের পরে এই জাতীয় তথ্য অনুসন্ধান মিশন গঠন করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ১৯৬৩ সালের ২৯ নভেম্বর কেনেডি হত্যাকান্ডের সাত দিনের মধ্যে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন প্রেসিডেন্ট কেনেডিকে হত্যার বিষয়ে একটি কমিশন গঠন করেছিলেন, যা বেসরকারিভাবে ওয়ারেন কমিশন নামে পরিচিত।
অধ্যাপক সিদ্দিক বলেন, ওয়ারেন কমিশন খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তাদের রিপোর্ট পেশ করেছে এবং পরে এটিকে সবার জন্য উন্মুক্ত করে লাইব্রেরিতে রাখা হয়েছে যাতে মানুষ হত্যার ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড কোনো ব্যক্তি বা কোনো পরিবারের হত্যা নয়, এটি দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে।
তিনি আরও বলেন, কমিশন নতুন করে কাউকে শাস্তি দেওয়ার জন্য নয় কারণ হত্যাকান্ডের অপরাধীরা ইতিমধ্যেই বিচারের মুখোমুখি হয়েছে, দেশের জনগণের জানার অধিকার রয়েছে তাদের জাতির পিতাকে কে হত্যা করেছে।
বাসস-এর সঙ্গে আলাপকালে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয় মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সরকার ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের চক্রান্ত উদঘাটনের জন্য কমিশন গঠনে একটি কাঠামো তৈরি করা হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের তদন্ত এবং নেপথ্যের ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার জন্য আমরা একটি কমিশন গঠন করব উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সরকার এই আইনের খসড়া তৈরি করেছে এবং প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে শিগগিরই এটি সংসদে উপস্থাপন করা হবে।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আনিসুল হক বলেন, এ কমিশনের কাজ প্রতিহিংসামূলক হবে না। এটা করা হবে যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলতে না পারে।
সাংবাদিক ও লেখক সৈয়দ বদরুল আহসান বাসসকে বলেন, যারা এই মর্মান্তিক ঘটনার পরিকল্পনা করেছিল তাদের চিহ্নিত করে দেশের সামনে উন্মোচন করা একান্ত প্রয়োজন।
একই সঙ্গে যেসব বেসামরিক নাগরিককে চিহ্নিত করা হয়েছে, মৃত বা জীবিত, তাদের ন্যায়বিচারের স্বার্থে মরণোত্তর বিচারের আওতায় আনতে হবে।
কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বদরুল আহসান বলেন, আমিও মনে করি, যে সব ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা হত্যাকান্ডের পর বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং তাঁর সরকারকে বাঁচাতে ব্যর্থ হয়েছেন তাদের ব্যাপারেও তদন্ত হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, মোশতাকের দখলদার শাসনের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনে তাদের ভূমিকা গুরুতর তদন্তের আহ্বান জানান।
বিশিষ্ট আইনজীবী ও পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ফৌজদারি মামলা একটি দীর্ঘ ও ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এটি একটি অসমাপ্ত প্রক্রিয়াও।
স্বাধীন কমিশন গঠনের গুরুত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের অপরাধীদের চিহ্নিত করতে কমিশন গঠনে কোনো আইনি বা সাংবিধানিক বাধা নেই।
তিনি বলেন, আমাদের জানতে হবে কারা পুরো ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল।