শিরোনাম
ঢাকা, ১৪ আগস্ট, ২০২৩ (বাসস) : তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যেই প্রমাণ হয় তারা জঙ্গিদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক।
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় কয়েকজন জঙ্গি আটকের পর মির্জা ফখরুল সাহেব বললেন- মানুষের দৃষ্টি ভিন্নখাতে নেওয়ার জন্য না কি এই জঙ্গি নাটক সাজানো হয়েছে। এতেই প্রমাণিত হয় বিএনপি মহাসচিবসহ বিএনপির নেতৃবৃন্দ জঙ্গিগোষ্ঠীর প্রধান পৃষ্ঠপোষক।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিএনপি মহাসচিবের এ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা জঙ্গি দমন করেছি, আমরা জঙ্গি নির্মূল করতে পারতাম যদি তারা জঙ্গিগোষ্ঠীকে পৃষ্ঠপোষকতা না করতো।’
হাছান মাহমুদ আজ দুপুরে রাজধানীর তোপখানা রোডে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাংবাদিক ফোরাম’ আয়োজিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ সব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও ডেইলি অবজারভার পত্রিকার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির যেমন চেয়ারম্যান তেমন মহাসচিব। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সরকার যখন কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছিল, অনেক জঙ্গি আটক হচ্ছিল, তখন বেগম জিয়া বলেছিলেন যে, কিছু মানুষকে ধরে নিয়ে কিছু দিন আটক করে রাখার পর যখন চুলদাড়ি লম্বা হয় তখন তাদেরকে জঙ্গি আখ্যা দেওয়া হয়। সে কারণেই তারা যখন ক্ষমতায় ছিলো তখন পাঁচশ’ জায়গায় বোমা ফেটেছিলো, শায়খ আব্দুর রহমান, বাংলা ভাইয়ের উৎপত্তি হয়েছিলো এবং জঙ্গিদের দিয়ে হাওয়া ভবন তৈরি ও ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটিয়েছিলো।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজকে দেশ যখন অদম্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বিএনপি ও তাদের দোসররা তখন নানামুখী ষড়যন্ত্র করছে উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তারা মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করে লবিস্ট নিয়োগ করেছিলো মাঝে মধ্যে দু-একটা বিবৃতি এনেছিলো। কংগ্রেসম্যানদের বিবৃতি নিয়ে আমেরিকার হোয়াইট হাউজে যখন প্রশ্ন করা হলো, তারা বললো এ বিষয়ে তারা কিছু জানেন না। অথচ এই চিঠি লেখার পেছনে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। অর্থাৎ এখন স্পষ্ট হয়ে গেছে, এই ষড়যন্ত্র করে, বিদেশিদের পেছনে এতো ছুটে কোনো লাভ হয় নাই। সে কারণে বিএনপি এখন ভিন্ন সুরে কথা বলা শুরু করেছে। বিএনপির দাবি কেউ সমর্থন করে নাই। এ জন্য বিএনপির সুর এখন ভিন্ন। এখন তারা বলছে ভারত কি বললো আসে যায় না, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি বললো আসে যায় না, যুক্তরাজ্য কি বললো আসে যায় না, চীন কি বললো আসে যায় না।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জানেন, তারেক রহমানকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা দেয়নি। এখানকার মার্কিন দূতাবাস থেকে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টে তারেক রহমানকে ভিসা না দেওয়ার জন্য প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছিলো। সেই তারেক রহমান যখন সেই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন হয় সুতরাং সেই দলকে কেউ সমর্থন করতে পারে না। কানাডার আদালত পরপর পাঁচবার বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি ডিপার্টমেন্ট বিএনপিকে ফোর টায়ারের জঙ্গি সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে, যেটি পত্রপত্রিকায় আপনারা ছাপিয়েছেন। যারা জঙ্গিগোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষক জঙ্গিদের লালন-পালন করে তাদেরকে কোনো বিদেশি শক্তি সমর্থন করে না। আর দেশের জনগণ তো তাদের সাথে নাই। সুতরাং তাদের সাথে কেউ নাই।’
পনেরই আগস্ট নিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের প্রধান কুশীলব ছিলো দুইজন, একজন হচ্ছেন খন্দকার মোশতাক আরেকজন হচ্ছেন জিয়াউর রহমান। জিয়া এবং তার পরিবারই বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সবচেয়ে বড় বেনিফিশিয়ারি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পরপরই খন্দকার মোশতাক ক্ষমতা গ্রহণ করে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সেনাপ্রতি নিয়োগ করেছিলো। আর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর সমস্ত খুনিদের দেশে এবং বিদেশে পুনর্বাসিত করেছিলো, বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতে চাকরি দিয়েছিলো। আবার ১৯৭৯ সালে সংসদ গঠনের পর সংসদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিন ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বিল উপস্থাপন করা হয়, এই হত্যাকান্ডের বিচার যাতে না হয় সে জন্য সেটি পাস করা হয়। জিয়াউর রহমান কিভাবে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ছিলো এগুলোই তো তার প্রমাণ।’
এ সময় বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের নেপথ্য কুশীলবদের বিচার হওয়া প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা যদি আমরা না করি তাহলে আজ থেকে শত বছর পর ভবিষ্যত প্রজন্ম জানতে পারবে না, কারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পটভূমি রচনা করেছিলো, কারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পেছনে কুশীলব ছিলো। সেটা যদি অনুন্মোচিত থেকে যায় তাহলে ইতিহাসের পাতায় সঠিক বিষয় উঠে আসবে না। এ জন্য জাতীয় প্রেসক্লাব দাবি দিয়েছে, সাংবাদিক সমাজ দাবি দিয়েছে, দেশের বিশিষ্টজনেরা দাবি দিয়েছে, এটি আমাদেরও চাওয়া। আমি মনে করি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের নেপথ্য কুশীলবদের বিচার হওয়া সময়ের দাবি, এটি হওয়া প্রয়োজন।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের তথ্য কেউ দিলে সরকার তাকে পুরস্কার দেবে। ২১ বছর ধরে যারা খুনি ও খুনিদের পেছনের লোকজনকে আশ্রয় দিয়েছে তাদের মুখোশ খুলে দেওয়া উচিত।’ তিনি বলেন, 'কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অত্যন্ত শক্তিশালী আইনের শাসনের দেশ। তাদের খুনিদের আশ্রয় দেয়া উচিত নয়। সরকার যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সরকারকে অনেক চিঠি লিখেছে যাতে খুনিদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেয়া হয়। এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে চিঠিও লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী।'
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি ওমর ফারুক, সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, সাবেক মহাসচিব আব্দুল জলিল ভুঁইয়া, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম, ডিইউজে সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী, সাবেক সভাপতি কাজী রফিক, সহ-সভাপতি মানিক লাল ঘোষ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম ভুঁইয়া, বাংলাদেশ পোস্টের সম্পাদক শরীফ শাহাবুদ্দিন, সিনিয়র সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম রতন, তরুণ তপন চক্রবর্তী, কার্তিক চ্যাটার্জি, শফিকুল করিম সাবু প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।