শিরোনাম
ঢাকা, ১৭ আগস্ট, ২০২৩ (বাসস) : বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে উদ্দীপক অবকাঠামো ও ইন্টিলিজেন্স ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম- আইটিএস’র বাজারে পরিণত হচ্ছে। কারণ দেশটি এখন আইটিএস এবং ওয়ে ইন মোশন- ডব্লিউআইএম’র দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও পর্যবেক্ষন শৈলী কাজে লাগিয়ে পরিবহন খাতে মেগা-প্রকল্প গ্রহণ করছে।
গত বছর সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগে দেশের প্রথম আইটিএস প্রকল্প নেয়া হয়। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক - এডিবি’র অর্থায়নে দেড় কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে এই প্রকল্পের মাধ্যমে ২৫২ কিলোমিটার মহাসড়ক নির্মিত হবে। রিয়াদ হোসেন ও রিজওয়ান মুস্তাফিজ প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশী কোম্পানি এনডিই ইফ্রাটেক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
বিশ্বের ইন্টিলিজেন্ট ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেম শিল্প খাতের যুক্তরাজ্য ভিত্তিক শীর্ষস্থানীয় মিডিয়া প্লাটফরম আইটিএস ইন্টারন্যাশনাল গত ১৬ আগস্ট বাংলাদেশের ইনফ্রাস্ট্রাকচার এ্যান্ড ইন্টিলিজেন্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম- আইটিএস’র ওপর “বাংলাদেশ সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে উদ্দীপক অবকাঠামো ও আইটিএস বাজার” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের কন্ট্রিবিউটিং এডিটর জেমস ফস্টার লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের গল্পটি আইটিএস মেগা-প্রকল্প ও উদ্যোক্তাগত বিচক্ষণতার এক চমকপ্রদ ঘটনা থেকে কম কিছু নয়।’
জেমস ফষ্টার লিখেছেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশ ছিল বিশ্বের দ্বিতীয় দরিদ্রতম রাষ্ট্র। এটি দারিদ্র্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং এমনকি ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষেরও সম্মুখীন হয়েছিল।
এরপর, স্বাধীনতার মাত্র ৫০ বছরেই ২০২১ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি তার দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকাকেও ছাড়িয়ে গেছে। এর চেয়ে বিশ্বয়কর আর কিছুই হতে হতে পারে না। দেশটি গত এক দশক ধরে ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। কোভিড মহামারী সত্তে¦ও, এর অর্থনীতি বার্ষিক ছয় শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছিল- যা সেই সময়ে সকল দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ এখন ২০৩১ সালের মধ্যে একটি উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার পথে রয়েছে। অর্থনীতিতে এই প্রবৃদ্ধির সাথে সরকারি খাতে ব্যাপক ব্যয় এসেছে। গত এক দশকে বাংলাদেশে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ক্রমশ এগিয়ে চলেছে।
সরকার সম্প্রতি ৩.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ শেষ করেছে- যা স্বল্পোন্নত দক্ষিণ-পশ্চিমকে দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের সাথে সংযুক্ত করেছে। এটি একটি নির্মাণ বিস্ময়, কারণ এটি বিশ্বের গভীরতম সেতু, যেখানে ১২৭ মিটার গভীরে পিলার স্থাপন করা হয়েছে।
জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি- জাইকা’র অর্থায়নে ঢাকা মেট্রো রেলের প্রথম পর্যায় সবেমাত্র জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করেছে। এই গণ ট্রানজিট সিস্টেমটি প্রতি ঘন্টায় ৬০ হাজারেরও বেশি যাত্রীদের সেবা দেবে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে- যা শীঘ্রই একটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেলের অধীনে চালু হচ্ছে, এটি দেশের দীর্ঘতম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে- যা রাজধানী ঢাকার মধ্য দিয়ে ৪৬ কিলোমিটার দীর্ঘপথ পাড়িদেবে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), বিশ্বব্যাংক, জাইকা, কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে কর্পোরেশনের মতো এজেন্সিগুলোও বাংলাদেশের সড়ক নিরাপত্তা এবং জাতীয় মহাসড়কের প্রবিধানের উন্নয়নের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত।
এই আকর্ষণীয় প্রকল্পগুলোর সম্মুখভাগে কাজ করছেন এমন দুইজন চৌকশ উদ্যোক্তার সাথে আমার সাক্ষাতের সৌভাগ্য হয়েছে। এদের একজন হলেন রিয়াদ হোসেন ও অন্যজন রিজওয়ান মুস্তাফিজ। ৪০ বছর বয়সী এই দুই ব্যক্তি ২০০০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে যথাক্রমে যুক্তরাজ্য ও কানাডায় উচ্চ শিক্ষা শেষ করেন এবং আজ থেকে ১৫ বছর আগে দেশে ফেরেন। তারা এনডিই ইনফ্রাটেকের প্রতিষ্ঠাতা অংশীদার। এটি একটি বড় কোম্পানি- যা বাংলাদেশের পরিবহন প্রযুক্তি খাতে দৃঢ়তার সাথে কাজ করে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃক গত বছর তারা বাংলাদেশের প্রথম আইটিএস প্রকল্পে ভূষিত হন। এডিবি’র অর্থায়নে ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে প্রকল্পটির আওতায় একটি ২৫২ কিলোমিটার হাইওয়ে নির্মিত হচ্ছে- যেটি আইটিএস এবং ডব্লিউআইএম সিস্টেমের মাধ্যমে দক্ষতার সাথে পরিচালিত ও পর্যবেক্ষণ করা হবে।
২০২৩ সালের প্রথমার্ধে, এনডিই ইনফ্রাটেক দলটি এখন পর্যন্ত পরিবহন সেক্টরে তাদের সবচেয়ে চমকপ্রদ প্রকল্পের জন্য বিড করার প্রস্তুতিতে ছিল। প্রকৌশলী ড. মো. আব্দুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে বাংলাদেশের সড়ক ও জনপথ বিভাগের কারিগরি বিভাগ সম্প্রতি ২৫-৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ওয়ে ইন মোশন প্রকল্পের জন্য একটি দরপত্র প্রেরণ করেছে। ওভারলোডেড ট্রাক ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশে একটি বড় সমস্যা। স্থায়ী অ্যাক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশনগুলির ইনস্টলেশন প্রয়োগের জন্য সর্বোত্তম সমাধান হিসাবে দেখা গেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ সারা দেশে সমস্ত প্রধান জাতীয় মহাসড়কে একযোগে ২৮টি এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে।