শিরোনাম
॥ সৈয়দ শুকুর আলী ॥
ক্যালগ্যারি, কানাডা, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ (বাসস): ২৪ তম বিশ্ব পেট্রোলিয়াম কংগ্রেসে (ডব্লিউপিসি) যোগদানকারী তেল কোম্পানিগুলোর তিন শীর্ষ নির্বাহীর মতে, জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বিশ্ব ধীরে ধীরে নবায়নযোগ্য উৎসে রূপান্তরিত হলেও আগামী বছরগুলোতে জ্বালানি চাহিদা বাড়তে থাকবে।
গতকাল (১৮ সেপ্টেম্বর) এখানে প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এ মন্তব্য করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের এক্সনমোবিলের প্রধান নির্বাহী ড্যারেন উডস বলেন, বিশ্বের অর্থনীতির বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এটি জ্বালানি চাহিদাকে আরও বাড়িয়ে দেবে। তবে, তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন যে, আজকের জ্বালানি ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করা কঠিন যেখানে তেলের ব্যবহার প্রতিদিন প্রায় ১০০ মিলিয়ন ব্যারেল।
উডস বলেন, ‘পরিবর্তন ঘটতে দেখার জন্য আমাদের সমাধান নিয়ে আসতে হবে। কিছুটা ইচ্ছাপূর্ণ ভাবনা থেকে মনে হচ্ছে যে, আমরা সুইচটি উল্টাতে যাচ্ছি এবং আমরা আজ যেখানে আছি সেখান থেকে আগামীকাল যেখানে থাকব সেখানে যাব। আমি মনে করি, লোকেরা বিশ্বব্যাপী জ্বালানি ব্যবস্থার আকার এবং আমাদের আজকের যা আছে তা থেকে সরে যাওয়ার চ্যালেঞ্জকে খাটো করে দেখছে।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, প্রতি বছর তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্রগুলোতে প্রাকৃতিক ভাবে উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে, কাজেই এই শিল্পে একটা পর্যায় পর্যন্ত বিনিয়োগ বজায় রাখতে হবে; অন্যথায়, বিশ্বে সরবরাহে টান পড়বে এবং দাম বাড়বে।
তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা হল এর একটি রূপান্তর হবে। এতে সময় লাগবে এবং আশা করি এর সাথে যুক্ত অনেক কম নির্গমনের সাথে জ্বালানি বৃদ্ধি অব্যহত থাকবে,’ তিনি যোগ করেন।
উডস আরও বলেন, বিশ্বজুড়ে সরকারগুলোর নিঃসরণ হ্রাস করার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে এবং বিদ্যমান জ্বালানি ব্যবস্থা বিশেষত, তেল এবং গ্যাস থেকে পরিত্রাণ পাচ্ছে না।
সৌদি আরামকোর প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী আমিন নাসের বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অর্থনৈতিক মন্দার সময়েও এবং অনেক দেশে আজ অবধি জ্বালানির চাহিদা বাড়ছে।
নাসের প্যানেলকে বলেন, ‘চাহিদা বাড়তে থাকবে কারণ আমরা প্রচলিত জ্বালানির নিঃসরণ হ্রাস করার ক্ষেত্রেও অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছি।’
তিনি বলেন, তেল ও গ্যাস উৎপাদন ভবিষ্যতে অনেক বেশি পরিচ্ছন্ন হবে, কারণ, শিল্পটি নতুন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সৌদি আরামকোর সিইও উল্লেখ করেছেন যে, জীবাশ্ম জ্বালানীর ‘অকালের’ পর্যায়ে বৈশ্বিক জ্বালানি নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
নাসের বলেন, ‘আমাদের একই সময়ে ডিকার্বনাইজিং করার সময় প্রচলিত জ্বালানিতে বিনিয়োগ চালিয়ে যেতে হবে এবং আমরা যে গতিতে পারি নবায়নযোগ্য জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।’
চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের প্রেসিডেন্ট হাউ কিজুন বিশ্বাস বলেন, চাহিদা বাড়তে থাকায় জ্বালানি পরিবর্তনের গতি বাড়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
‘নতুন জ্বালানির ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল উৎপাদিত হাইড্রোকার্বনের স্থিতিশীল এবং নিরাপদ সরবরাহ বজায় রাখা। কম কার্বন নিঃসরিত নতুন শক্তির দিকে রূপান্তরিত হওয়ার সময়, আমাদের লক্ষ লক্ষ মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার কথাও মনে রাখতে হবে।’
সৌদি আরবের জ্বালানি বিষয়ক মন্ত্রী প্রিন্স আব্দুল আজিজ বিন সালমান আল সৌদ বলেছেন, সৌদি আরব অন্যান্য দেশের জ্বালানির রূপান্তরে সহযোগিতা দিতে পারে।
তিনি বলেন, ‘সৌদি আরব জ্বালানির রূপান্তরের ধারণার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, শুধু দেশীয়ভাবে নয় বরং অন্যান্য দেশকে তাদের যাত্রায় সমর্থন করার জন্যও, জ্বালানি নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে চ্যাম্পিয়ন থাকতে চায়।’
আল সৌদ বলেন, সৌদি আরবের উচ্চাকাক্সক্ষা হল তার ৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপন্ন করা এবং হাইড্রোজেন এবং নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের বাণিজ্যের জন্য পক্ষগুলোকে একত্রিত করার জন্য একটি সেতু হিসেবে কাজ করতে চায়।
কানাডার জ্বালানি ও প্রাকৃতিক সম্পদ মন্ত্রী জোনাথন উইলকিনসন বলেছেন, কানাডা নিট জিরো নিঃসরণের পথে বিভিন্ন প্রাদেশিক সরকারগুলোর সাথে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিশ্বকে ২০৫০ সালের মধ্যে নিট শূন্য নির্গমন লক্ষ্য অর্জন করতে হবে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে কার্যকর অগ্রগতি প্রয়োজন।