শিরোনাম
ঢাকা, ৯ অক্টোবর, ২০২৩ (বাসস) : ধর্ষণ মামলায় টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
নবজাতকের ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনটি উপস্থাপনের পর জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে আনা আবেদন খারিজ করে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ বেঞ্চ আজ এই আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা।
আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ রাজা সাংবাদিকদের জানান, ওই কিশোরীর জন্ম দেয়া নবজাতকের ‘জৈবিক পিতা’ গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনির নয় বলে ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্টে এসেছে। ডিএনএ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর শুনানি শেষে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। ফলে গোলাম কিবরিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন বহাল থাকল এবং কারামুক্তিতে এখন আইনি কোনো বাধা নেই।
বড় মনির টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনিরের ভাই ও জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব।
৫ এপ্রিল রাতে এক কিশোরী বাদী হয়ে বড় মনিরের নামে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করে। দাখিল করা প্রতিবেদনে বড় মনির ‘নবজাতকের জৈবিক পিতা’ নয় বলে উঠে এসেছে।
ধর্ষণের ফলে ওই কিশোরী (১৭) অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে ওই ভুক্তভোগীর সন্তান জন্ম হয়।
মামলায় বড় মনিরের পাশাপাশি তার স্ত্রী নিগার আফতাবকেও আসামি করা হয়।
মামলায় অভিযোগে বলা হয়, বড় মনির তাদের আত্মীয় এবং পূর্ব-পরিচিত। হোয়াটসঅ্যাপে তাদের কথা হতো। ওই কিশোরীর ভাইয়ের সঙ্গে জমি নিয়ে সমস্যা হয়। এ কথা বড় মনিরকে জানানোর পর তিনি সমস্যা সমাধান করে দেয়ার আশ্বাস দেন। বড় মনির পরে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর ওই কিশোরীকে শহরের আদালত পাড়ায় নিজের বাড়ির পাশে একটি ১০ তলা ভবনের চার তলার ফ্ল্যাটে যেতে বলেন। সেখানে যাওয়ার পর কিশোরীকে শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দেন তিনি। তাতে রাজি না হওয়ায় কিশোরীর মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে তাকে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। প্রায় তিন ঘণ্টা পর বড় মনির কক্ষে ঢুকে কিশোরীকে ধর্ষণ করেন এবং সেই ছবি তুলে রাখেন। ধর্ষণ শেষে কাউকে এ কথা জানাতে নিষেধ করেন এবং কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকি দেন। পরে ছবি প্রকাশের ভয় দেখিয়ে প্রায়ই কিশোরীকে ধর্ষণ করতেন বড় মনির।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ধর্ষণের ফলে কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। এ কথা জানালে বড় মনির তাকে গর্ভপাত করার জন্য চাপ দেন। কিন্তু সন্তান নষ্ট করতে রাজি না হওয়ায় ২৯ মার্চ রাত ৮টার দিকে বড় মনির কিশোরীকে আদালতপাড়ায় তার শ্বশুরবাড়িতে তুলে নিয়ে যান। সেখানে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। তাতে রাজি না হওয়ায় ওই বাসার একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখা হয় কিশোরীকে। পরে তাকে সেখানে আবার ধর্ষণ করেন বড় মনির। ধর্ষণের পর বড় মনিরের স্ত্রীর মারধরে অসুস্থ হয়ে পড়ে ওই কিশোরী। পরে রাত ৩টার দিকে বাসায় পৌঁছে দেয়া হয় তাকে। তারপর থেকে কিশোরীকে হুমকি দেয়া হতো। শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ থাকায় মামলা করতে দেরি হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করে ভুক্তভোগী।
এ মামলায় ১১ জুলাই বড় মনির হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছিলেন। পরের দিন রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে সেই জামিনাদেশ স্থগিত করেন চেম্বার কোর্ট। সেই সন্তানের ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট দিতে বলা হয়। সেই অনুসারে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।