বাসস
  ২৯ অক্টোবর ২০২৩, ২০:৫৯
আপডেট : ২৯ অক্টোবর ২০২৩, ২৩:৩১

হরতাল চলাকালে সংঘর্ষ, নিহত ২

ঢাকা, ২৯ অক্টোবর, ২০২৩ (বাসস) : দেশব্যাপী বিএনপির হরতাল ও আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ চলাকালে সংঘর্ষে দুই জন নিহত হয়েছে। এছাড়াও বাসে অগ্নি সংযোগের ঘটনায় একজন হেলপার নিহত হয়েছে।
পুলিশ জানায়, নগরীর মোহাম্মদপুর এলাকায় বিএনপি’র একজন কর্মী নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে নিহত হয়েছে। ওই কর্মী একটি বাসে আগুন দেওয়ার পর উত্তেজিত জনতা তাকে ধাওয়া করলে এ ঘটনা ঘটে। 
এদিকে লালমনিরহাট জেলায় দু’পক্ষের কর্মসূচি চলাকালে সংঘর্ষে একজন আওয়ামী লীগ কর্মী নিহত হয়েছে।
আঞ্চলিক পুলিশ প্রধান আব্দুল বাতেন জানান, সংঘর্ষে আওয়ামী সেচ্ছাসেবক লীগের ওই কর্মীকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে সে মারা যায়।
ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ জানিয়েছে, শহরের উপকণ্ঠে ডেমরায় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা ভোরের দিকে একটি বাসে আগুন দিলে বাসের হেলপার নিহত ও অপর একজন পরিবহন কর্মী গুরুতর আহত হয়েছে।
অপর ঘটনায় শনিবার রাজধানীর কাকরাইল এলাকায় পুলিশ ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে গুরুতর আহত জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রফিক ভূঁইয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ ভোরে মারা গেছেন। সংঘর্ষ চলাকালে তিনি মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হরতাল চলাকালে বেশ কয়েকটি যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগ বা ভাঙ্গচুর করা হয়।
ভয়াবহ সংঘর্ষে দায়িত্বরত একজন পুলিশ সদস্য নিহত ও দুই শতাধিক আহত এবং বেশ কয়েকটি এম্বুলেন্স এবং মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য যানবাহন ও পুলিশ বুথে অগ্নিসংযোগের একদিন পর নতুন করে এই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। 
বিএনপি দাবি করেছে যে, নিহত অপর ব্যক্তি তাদের সমর্থক। 
কিন্তু নিহতের পরিবার জানিয়েছে, ওই ব্যক্তি একজন চিকিৎসকের গাড়ির চালক ছিলেন। তার কোন রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ছিল না।
পুলিশ জানায়, নয়া পল্টন এলাকায় সংঘর্ষ চলাচালে আটকা পড়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর সিপিএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
পুলিশ রোববার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে তার গুলশানের বাসভবন থেকে গ্রেফতার করেছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)’র গোয়েন্দা শাখার এক মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আইনী কার্যক্রম চালাতে তাকে (আলমগীর) আমাদের হেফাজতে নিয়েছি।’
আলমগীরের স্ত্রী রাহাত আরা বলেন, পুলিশ প্রথমে তাদের বাড়িতে আসে এবং সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজের একটি হার্ডডিস্ক নিয়ে বেরিয়ে যায়। পরে ফিরে এসে আলমগীরকে (৭৫) তাদের হেফাজতে নিয়ে যায়।
বিএনপি মুখপাত্র জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, পুলিশ বিএনপি জ্যেষ্ঠ নেতাদের বাড়িতেও পর পর কয়েকটি অভিযান চালিয়েছে। 
তিনি দাবি করেন, গত সপ্তাহে প্রায় ৩ হাজার নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি একটি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে শনিবার ঢাকায় এক বিশাল জনসভার আয়োজন করে। এর জবাবে একই দিন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগও শান্তি সমাবেশের আয়োজন করে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বিএনপি’র জনসভা চলাকালে বিরোধী দল এই তা-ব চালায় এবং এজন্য তাদের নেতারা এর দায় এড়াতে পারেন না।
তিনি তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিরোধী দলীয় কর্মীরা বহু ক্যামেরা ভেঙ্গেছে। এখনো তাদের কর্মকা-ের অনেক সিসিটিভি ফুটেজ আছে। যারা এই হামলা চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
বিএনপি শনিবার জনসভা দ্রুত শেষ করার জন্য পুলিশকে দায়ী করে এর প্রতিবাদে রোববার দেশব্যাপী হরতালের ডাক দেয়। 
এদিকে, আওয়ামী লীগ দেশব্যাপী তার সহযোগী ও অঙ্গ সংঘঠনের নেতাকর্মীদের শান্তি সমাবেশ আয়োজনের নির্দেশ দেয়।
রোববার সকালে নয়া পল্টন, পুরানা পল্টন ও মতিঝিলের মতো সম্ভাব্য সহিংসতা প্রবণ এলকাগুলোতে যান চলাচল কম ছিল এবং অনেক দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল।
বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রাতভর দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন ছিল। সরকার দেশব্যাপী আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাঁজোয়া যান ও জলকামানে সজ্জিত হয়ে দাঙ্গা পুলিশ বিএনপি’র প্রধান কার্যালয়ের আশপাশে অবস্থান নেয়। 
আধাসামরিক বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জানিয়েছে, রাজধানীতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তারা ১১ প্লাটুন বা ৩ শতাধিক সদস্য মোতায়েন করেছে। 
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নৈরাজ্য ও অরাজগতা সৃষ্টির অভিযোগে অনেকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং আরো অনেকের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
বিএনপি নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনপ্রবর্তনের দাবি করছে। ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এই সরকারের অধীনে চারটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। এরপরের দুটি নির্বাচন বর্তমান সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়।
বেগম জিয়া (৭৯) বর্তমানে সিভিয়ার ক্রোনিক আইলমেন্ট এ ভুগছেন। তিনি কয়েক সপ্তাহ ধরে বিশেষায়িত বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি দুটি দুর্নীতি মামলায় ১৭ বছরের সাজায় গৃহবন্দি।
তার বড় ছেলে ‘দন্ডাদেশপ্রাপ্ত পলাতক’ তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা রয়েছে। তিনি লন্ডন থেকে পার্টি পরিচালনা করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রধান পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো বাংলাদেশে সুষ্ঠু, নির্ভরযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানাচ্ছে।
রোববার ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানিয়েছে, ঢাকায় সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনায় ইইউ ও এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছে।