বাসস
  ০৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১৪:৫০
আপডেট : ০৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫:৪৬

শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ চলছে

ঢাকা, ৭ জানুয়ারি, ২০২৪ (বাসস) : শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ চলছে। সকাল ৮টা থেকে দেশের ৪২ হাজার ভোট কেন্দ্রে একযোগে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। বিরতিহীনভাবে চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।  
নওগাঁ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল ইসলাম মারা যাওয়ায় ওই আসনের নির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। ফলে আজ ৩শ’ আসনের মধ্যে ২৯৯ আসনে ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে। 
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের আতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বাসস’কে জানান, নির্ধারিত সময়ে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া কোথাও থেকে এখনো পর্যন্ত বড় কোন সহিংসতার খবর পাইনি। 
সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে ইসি। গতকাল বিকেলের মধ্যে দেশের সকল ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনের সরঞ্জাম পৌঁছে দেয়া হয়েছে। আর এবার এই প্রথমবারের মতো আজ নির্বাচনের দিন সকাল বেলা ব্যালট পেপার পৌঁছানো হয়েছে। 
সকল উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও অস্বস্তি পরাভূত করে ভোটারদের নির্ভয়ে আনন্দমুখর পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে এসে অবাধে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে মূল্যবান নাগরিক দায়িত্ব পালনের আহবান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। আজ অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে শনিবার জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি এ আহবান জানান। 
আজ রাজধানীর হাবিবুল্লাহ বাহার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেয়ার পর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, নির্বাচন সম্পর্কে ভোটারদের মধ্যে একটা অনীহার সৃষ্টি হয়েছে এটা দূর হতে একটু সময় লাগবে। আমার বিশ্বাস ধীরে ধীরে মানুষ এ অবস্থা থেকে ফিরে আসবে। সকালের দিকে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম হলেও সময়ের সাথে সাথে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে।
নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে  আয়োজনে এবং ভোটাররা যাতে ভোট কেন্দ্রে অবাধে যাতায়াত করতে পারে সেজন্য মাঠ পর্যায়ে পুলিশ,  র‌্যাব, আনসার-ভিডিপি, আর্মি, নেভী, কোস্টগার্ডসহ সব মিলিয়ে প্রায় ৮ লাখ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ভোট গ্রহণের কাজে ৮ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োজিত থাকবে। এছাড়াও ১ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী স্ট্যান্ডবাই থাকবে।  ৩ হাজার ম্যাজিস্ট্রেট ও বিচারক মাঠে থাকছে। তারা যেকোন অপরাধে তাৎক্ষণিক শাস্তি দিতে পারবেন। 
এবার ভোটের সর্বশেষ আপডেট জানার জন্য ‘স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বিডি’ অ্যাপ চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ভোটের সর্বশেষ পরিস্থিতির সঠিক তথ্য সম্পর্কে জনগণ যে কোন জায়গা থেকে সহজে জানতে পারবে। এছাড়াও ভোটাররা তার ভোটার নম্বর ও কেন্দ্রের নাম এবং অবস্থান জানতে পারবে। গোগল প্লে স্টোরে গিয়ে এ্যাপটি ডাউনলোড করা যাবে। ভোটে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে ৬৬ জন দায়িত্ব পালন করছেন। এরমধ্যে দুইজন বিভাগীয় কমিশনার এবং ৬৪ জন জেলা প্রশাসক। 
কমিশনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯টি সংসদীয় আসনে ১ হাজার ৯৬৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ইসিতে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে এই নির্বাচনে ২৮টি রাজনৈতিক দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১ হাজার ৫৩৩ জন প্রার্থী। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে আছেন ৪৩৬ জন। 
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী ২৬৬ জন, জাতীয় পার্টির ২৬৫, তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী ১৩৫ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ৬৬ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১২২ জন, জাতীয় পার্টির (জেপি) ১৩ জন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের ১০ জন প্রার্থী রয়েছেন। নির্বাচনে নারী প্রার্থী হিসেবে রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র মিলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৯০ জন। আর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী অন্যান্য মিলে ৭৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
২৯৯ সংসদীয় আসনে মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৪২ হাজার ২৪টি। এসব কেন্দ্রে ভোটকক্ষ ২ লাখ ৬০ হাজার ৮৫৮টি। সর্বশেষ প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, আজ ২৯৯ আসনে ১১ কোটি ৯৩ লাখ ৩৩ হাজার ১৫৭ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৫ লাখ ৯২ হাজার ১৬৯ ও নারী ভোটারের সংখ্যা ৫ কোটি ৮৭ লাখ ৪০ হাজার ১৪০। এছাড়া এসব আসনে তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন ৮৪৮ জন।
এবারই প্রথমবারের মতো ভোটের দিন সকালে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো হয়। শুধু দুর্গম অঞ্চলের ২ হাজার ৯৬৪টি কেন্দ্রে ব্যালট পাঠানো হয় শনিবার।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছেন স্থানীয় ২০ হাজার ৭৭৩ জন পর্যবেক্ষক। এছাড়া প্রায় দুই শতাধিক বিদেশি পর্যবেক্ষক থাকছেন। এরমধ্যে ৭৬ জন সাংবাদিক।
নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সিভিল প্রশাসনকে সহায়তা দেয়ার জন্য গত ৩ জানুয়ারি থেকে সেনাবাহিনী ৬২টি জেলায় নিয়োজিত রয়েছেন। উপকূলীয় দু’টি জেলাসহ (ভোলা ও বরগুনা) সর্বমোট ১৯টি উপজেলায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। সমতলে সীমান্তবর্তী ৪৫টি উপজেলায় বিজিবি এককভাবে দায়িত্ব পালন করছে এবং সীমান্তবর্তী ৪৭টি উপজেলায় সেনাবাহিনী বিজিবির সাথে এবং উপকূলীয় ৪টি উপজেলায় কোস্ট গার্ডের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে যৌথভাবে দায়িত্ব পালন করছে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী হেলিকপ্টারের সহায়তায় দূর্গম পার্বত্য অঞ্চলের ভোটকেন্দ্র সমূহে প্রয়োজনীয় হেলিকপ্টার সহায়তা প্রদান করবে।
এই নির্বাচনে ১ লাখ ৮২ হাজার ৯১ জন পুলিশ ও র‌্যাব সদস্য এই নির্বাচনে আইনশৃংখলা রক্ষায় মোতায়েন করা হয়েছে। 
গত ২৯ ডিসেম্বর থেকে সারাদেশে ৪৮৭টি বেজ ক্যাম্পে ১ হাজার ১৫৫ প্লাটুন বিজিবি নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। সারাদেশে নাশকতা এড়াতে বিস্ফোরক দ্রব্যের ওপর বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত বিজিবি ডগ স্কোয়াড দেশের বিভিন্ন স্থানে কাজ করছে। একইসাথে মাঠে কাজ করছে বিজিবি’র বিশেষায়িত ফোর্স র‌্যাপিড এ্যকশন টিম (র‌্যাট)। এছাড়া বিজিবি’র কুইক রেসপন্স ফোর্সও প্রস্তুত রয়েছে, যারা বিজিবি'র অত্যাধুনিক হেলিকপ্টারের মাধ্যমে দেশের যে কোনো প্রান্তে যে কোনো অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় সক্ষমতা রাখে।
নির্বাচনে নিরাপত্তা রক্ষায় ৫ লাখ ৫ হাজার ৭৮৮ জন সাধারণ আনসার ও ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তারা গত ২৯ ডিসেম্বর থেকে কাজ শুরু করেছে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঠে রয়েছে। 
এদিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় মনিটরিং ও কো-অর্ডিনেশন সেল গঠন করেছে। নির্বাচনকালীন সহিংসতায় অগ্নিকান্ডসহ যেকোন ধরনের দুর্ঘটনা মোকাবেলায় এ মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২ লাখ ১৫ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে। সাধারণ ভোট কেন্দ্রে ৪ লাখ ৭২ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ১৫ থেকে ১৭ জনের নিরাপত্তা সদস্যের একটি দল মোতায়েন করা হবে।
নির্বাচন কমিশন জানায়, মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে অস্ত্রধারী দু’জন পুলিশ, অস্ত্রধারী একজন আনসার, অস্ত্র বা লাঠিধারী একজন আনসার, ১০ জন আনসার, লাঠি হাতে একজন বা দু’জন গ্রাম পুলিশ সদস্যসহ ১৫ থেকে ১৬ জনের একটি দল সব সাধারণ ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা দেবে। তবে, প্রতি গুরুত্বপূর্ণ ভোট কেন্দ্রের ক্ষেত্রে অস্ত্রসহ ৩ জন পুলিশসহ ১৬ থেকে ১৭ জনের দল রয়েছে।
নির্বাচন উপলক্ষে ৫ জানুয়ারি মধ্যরাত ১২টা থেকে ৮ জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত মোটর সাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তবে ইসির স্টিকার লাগানো মোটর সাইকেল এই নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে।
এছাড়া নির্বাচন উপলক্ষে ভোট গ্রহণের জন্য নির্ধারিত দিবসের পূর্ববর্তী মধ্যরাত অর্থাৎ ৬ জানুয়ারি রাত ১২টা থেকে ৭ জানুয়ারি রাত ১২টা পর্যন্ত কতিপয় যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এসব যানবাহনের মধ্যে রয়েছে ট্যাক্সি ক্যাব, পিক আপ, মাইক্রোবাস ও ট্রাক।