শিরোনাম
দ্য হেগ, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ (বাসস/এএফপি): জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত গতকাল বুধবার পূর্ব ইউক্রেনে ‘সন্ত্রাসবাদে’ রাশিয়া অর্থায়ন করছে বলে যে অভিযোগ এনেছিল, ইউক্রেনের দাবির বেশিরভাগই প্রত্যাখ্যান করেছে। শুধুমাত্র এই বলে কিয়েভের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে কারণ, মস্কো অভিযোগ লঙ্ঘনের তদন্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
কিয়েভ মস্কোকে একটি ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’ বলে অভিযুক্ত করেছিল। কারণ, ২০২২ সালে পূর্ব ইউক্রেনে পুর্নাঙ্গ আগ্রাসনের সময় রাশিয়াপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন ও নিরাপদ আশ্রয়স্থল ছিল।
রাশিয়া চেয়েছিল ২০১৪ সালে সংঘর্ষে আটকে পড়া সমস্ত বেসামরিক নাগরিকদের এবং একইসঙ্গে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট এমএইচ-১৭ থেকে পূর্ব ইউক্রেনের গুলি চালিয়ে যেসব নাগরিকদের হত্যা করা হয়েছিল তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেবে।
কিন্তু, আন্তর্জাতিক আদালত ইউক্রেনের বেশিরভাগ আবেদন বাতিল করে দিয়েছে। শুধুমাত্র এই বলে রায় দিয়েছে যে, ‘যেসব ব্যক্তিরা অপরাধ করেছে তাদের বিষয়ে রাশিয়া ‘তথ্য তদন্তের ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে।’
আইসিজে’র এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইউক্রেনের অন্য সব আবেদনও প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।’
এই মামলাটি ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পূর্বের। আইসিজে শুক্রবার সিদ্ধান্ত নেবে যুদ্ধের বিষয়ে আলাদা মামলায় রায় দেওয়ার এখতিয়ার তাদের আছে কি-না।
আদালত বলেছে, সন্ত্রাসে অর্থায়নের আন্তর্জাতিক কনভেনশনের শর্তাবলীর অধীনে শুধুমাত্র নগদ অর্থ স্থানান্তরকে অভিযুক্ত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সমর্থন হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, এটি ‘অস্ত্র বা প্রশিক্ষণ শিবিরসহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহৃত উপায়গুলো অন্তর্ভুক্ত করে না।’
আদালত বলেছে, ‘এরফলে, ইউক্রেনে পরিচালিত বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর কাছে অস্ত্রের কথিত সরবরাহ আইসিএফটি’ কনভেনশনের বাইরে পড়ে।
অধিকৃত ক্রিমিয়ায় তাতার সংখ্যালঘু এবং ইউক্রেনীয় ভাষাভাষীদের প্রতি নির্যাতন-নিপীড়নের কারণে জাতিগত বৈষম্য সম্পর্কিত একটি আন্তর্জাতিক কনভেনশন লঙ্ঘনের অভিযোগে রাশিয়াকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে।
এখানে আদালত দেখেছে যে, রাশিয়া ইউক্রেনে শিক্ষা চালু করার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়নি।
মামলাটি ২০১৭ সালে শুরু হয়েছিল এবং আইসিজে’র গ্রেট হল অফ জাস্টিসে দীর্ঘ আদান-প্রদান হয়েছে এবং বিচারকদের কাছে জমা দেওয়া হাজার হাজার পৃষ্ঠার নথিপত্র।
এটি তার প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ইউক্রেন দ্বারা পরিচালিত ‘আইন ব্যবস্থা’র একটি কৌশলের অংশ যা সমুদ্র আইন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে মস্কোকে আদালতের কাঠগড়ায় দাড়ঁ করানো হয়েছে।
মামলার শুনানির সময় নেদারল্যান্ডসে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার শুলগিন ইউক্রেনকে ‘নিল্র্জ্জ মিথ্যাচার এবং মিথ্যা অভিযোগে এমনকি এই আদালত’ অভিযুক্ত করেছেন।
শীর্ষ ইউক্রেনীয় কূটনীতিক আন্তন কোরিনেভিচ মামলার রায়ে তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, রাশিয়া ‘আমাদের মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার’ চেষ্টা করেছে।
কোরিনেভিচ বলেছেন, ‘২০১৪ সালের শুরুতে রাশিয়া অবৈধভাবে ক্রিমিয়া দখল করে এবং তারপরে জাতিগত ইউক্রেনিয়ান এবং ক্রিমিয়ান তাতারদের সাংস্কৃতিক মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল।’
কিয়েভের আইনজীবী রায় ঘোষণার পর সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আজ আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের দিন, কারণ আদালত বলেছেন, রুশ ফেডারেশন আন্তর্জাতিক আইন লংঘন করেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এটাই প্রথমবারের মতো রাশিয়াকে আন্তর্জাতিক আইন লংঘনকারী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হলো।’