বাসস
  ২১ আগস্ট ২০২৪, ২২:২৭

সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্র থেকে ফ্যাসিবাদকে নির্মুল করা দরকার

ঢাকা, ২১ আগস্ট, ২০২৪ (বাসস) : আজ এক আলোচনায় বুদ্ধিজীবী ও লেখকরা রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তর থেকে ফ্যাসিবাদ নির্মুল করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন।  ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে সমাজে সর্বস্তর থেকে  ফ্যাসিবাদ দূর করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী মাহফুজ আলম বলেন,‘ফ্যাসিবাদ সমাজের প্রতিটি স্তরে  প্রোথিত এবং এমনকি এটি ব্যক্তি  জীবনধারায় বিদ্যমান। আপনি যদি রাষ্ট্র থেকে ফ্যাসিবাদকে নির্মূল করতে চান তবে আপনাকে সমাজের প্রতিটি স্তর থেকে তা দূর করতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার মিলনায়তনে ছাত্র-জনগণের বিদ্রোহ পর্যালোচনার প্ল্যাটফর্ম জুলাই গণপরিষদ আয়োজিত ‘বাংলাদেশের ইতিহাস: ছাত্র-জনঅভ্যুত্থানের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
মূল বক্তব্য উপস্থাপনকালে ঢাবি বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘ছাত্রীরা  আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া ঢাকার মধ্যবিত্তের অন্তর্ভুক্তি এবং ছাত্র-জনতার জীবনহানি শেখ হাসিনার প্রকৃত চরিত্র প্রকাশের আন্দোলনকে বেগবান করেছে।’
 তিনি আরো বলেন,‘ আমরা আশা করি রাজনৈতিক দলগুলো সেই জনসাধারণের ক্ষেত্র এবং আমাদের হৃদয়ের আকাঙ্খা ভুলে যাবে না। ভবিষ্যতের বাংলাদেশ আন্দোলনের ফল দেখতে পাবে।’
মাহফুজ বলেন, ‘আপনাকে এমন একটি ধারণা তৈরি করতে হবে যার অধীনে আপনি প্রতিটি স্তর  থেকে, প্রতিটি মতাদর্শের মানুষকে একত্রিত করতে পারেন, যারা একটি রাষ্ট্র-এ বাংলাদেশ রাষ্ট্র গড়ার কথা ভাবতে পারেন।’
 তিনি আরো বলেন,  ‘অন্যথায় স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান বা আন্দোলন  বৃথা যাবে।’
‘একটি স্বাধীন  কমিশনের  মাধ্যমে  গত ১৫ বছরের গণহত্যার সঙ্গে জড়িত সব অপরাধীর বিচার হওয়া দরকার। এরপর আপনাকে তাদের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা করতে হবে। তারাও দেশের নাগরিক’ উল্লেখ করে  মাহফুজ বলেন, “আপনি সেই নাগরিকদের বাদ দিয়ে বা কোনও বিকল্প ভাবতে পারেন না।’[
সারোয়ার তুষারের  সঞ্চালনায় আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ, শিল্প ইতিহাসবিদ আমিরুল রাজীব, লেখক রাখাল রাহা, রক মানু ও তুহিন খান।
ধর্ম-বর্ন নির্বিশেষ  ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্ঠার মাধ্যমে সংগঠিত গণঅভ্যুত্থানের  প্রেক্ষাপটে  দেশ গঠনে আমাদেরকে অবশ্যই ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। সঠিক পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে এক্ষেত্রে  বিভেদেও উপাদানগুলি দূর  করতে হবে বলে উল্লেখ করেন লেখক অলিউর রহমান সান।
চলচ্চিত্র নির্মাতা কামার আহমেদ সাইমন বলেন, "আমাদের সমালোচনামূলক বক্তৃতা এবং পপুলিস্ট ধারণার মধ্যে দূরত্ব কমাতে হবে। কারণ কমপক্ষে ১২ কোটি মানুষ দেশের রাজনৈতিক কাঠামোর বাইরে রয়েছে যা নির্বাচনী ভোটের জন্য হুমকি হতে পারে"।
নারী-পুরুষ প্রতিনিধিত্ব, আদিবাসী সম্প্রদায় এবং প্রাইভেট-পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ কিছু বিষয়কে কেন্দ্র করে আন্দোলনের পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী উভয় সময়ে অংশগ্রহণ, প্রতিনিধিত্ব এবং অংশীদারিত্ব নিয়ে অনেক আলোচনা এবং বিতর্ক হয়েছে, যা সমাধান করা দরকার।
ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী উমামা ফাতেমা বলেন, "আমরা অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে লক্ষ্য করছি যে,  কিছু মিডিয়া গণ-অভ্যুত্থানকে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন হিসাবে চিহ্নিত করছে। কিন্তু এটিকে গণঅভ্যুত্থান হিসাবে উল্লেখ করা উচিত"।
রংপুরে আবু সাঈদের মৃত্যুর পর রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে আন্দোলনটি গণআন্দোলনে পরিণত হয়। তিনি আরও বলেন, নারী  শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ এবং অবদান স্মরণ করা  দরকার।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কারী উপমা অধিকারী বলেন, রাজনৈতিক ও আদর্শিক বিশ্বাস নির্বিশেষে সমাজের সকল স্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত প্রচেষ্টা এবং সমর্থন আন্দোলনের একটি বড় শক্তি।
তিনি বলেন,‘আমাদের সর্বদা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে হবে এবং প্রতিটি সম্প্রদায়ের মানুষের  প্রতিটি দলে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে’।