বাসস
  ২৫ আগস্ট ২০২৪, ১৭:৪৪

রোহিঙ্গাদের সহায়তায় ড. ইউনূসের প্রতিশ্রুুতিকে স্বাগত জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর

ঢাকা, ২৫ আগস্ট, ২০২৪ (বাসস) : জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সপ্তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের রূপরেখা অনসুযায়ী জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের সহায়তায়  বাংলাদেশের নতুন প্রতিশ্রুতিকে স্বাগত জানিয়েছে। 
সংস্থার এক বিবৃতিতে আজ বলা হয়, ‘আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে অব্যাহত আর্থিক সহায়তা ও সাহায্যের মাধ্যমে নিরাপত্তা, মর্যাদা ও পূর্ণ অধিকারের সাথে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে ড. ইউনূসের আহ্বানের প্রতিধ্বনিত করি।’
ইউএনএইচসিআর বলেছে, বাংলাদেশি জনগণের জন্য উত্তরণের এ সময়ে বাংলাদেশের মানবিক চেতনা বৈশ্বিক প্রশংসার দাবি রাখে।
বিবৃতিতে বলা হয়, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যায় রোহিঙ্গা শরণার্থী আগমনের সপ্তমবর্ষ পূর্তির এ মুহূর্তে আবারও বাংলাদেশের আশ্রয় দেয়া প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গার সুরক্ষায় সহায়তা এবং স্থায়ীভাবে তাদের দুর্দশা অবসানে সমাধান খুঁজে বের করতে সহায়তায় আন্তর্জাতিক অংশীদারদের কাছ থেকে টেকসই প্রতিশ্রুুতির আহ্বান জানায়।
মিয়ানমারে একটি মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবর্তন এ সংকটের প্রাথমিক সমাধান হিসেবে উল্লেখ করে ইউএনএইচসিআর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এটি সম্ভব করে তুলতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রদর্শনের আহ্বান জানায়।
শরণার্থী সংস্থা বলেছে, ‘মিয়ানমারের সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা বেসামরিক নাগরিকদের বাংলাদেশে সুরক্ষার সুযোগ নিশ্চিতে  আমরা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকেও আহ্বান জানাচ্ছি।’
ইউএনএইচসিআর রোহিঙ্গাদের স্বনির্ভরতার জন্য তাদের সহায়তা অব্যাহত রাখতে অংশীজনদের প্রতি আহ্বান জনায়।
২০২৪ সালে মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলো রোহিঙ্গা ও আশ্রয়দানকারী বাংলাদেশী জনগোষ্ঠীসহ ১.৩৫ মিলিয়ন মানুষের সহায়তার জন্য ৮৫২ মিলিয়ন ডলারের আবেদন করেছে।
ইউএনএইচসিআর বলেছে, ‘আমরা দাতা ও বেসরকারি অংশীদারদের রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে তহবিল বাড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি। রোহিঙ্গা জনগণ ও বাংলাদেশের উদার জনগোষ্ঠীও আমাদের সেরাটা পাওয়ার দাবি রাখে, এই সংকট মোকাবেলার ভার একা তাদের কাঁধে ছেড়ে দেওয়া যাবে না।’ 
বিবৃতিতে বলা হয়, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট প্রায় ৭০০,০০০ রোহিঙ্গা পুরুষ, মহিলা ও শিশু মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। যারা আগের বছরগুলোতে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে, তাদের সাথে নতুন করে আসা এই রোহিঙ্গারাও যোগ হয়।
এতে আরো বলা হয়, কক্সবাজার ও ভাসানচরে রোহিঙ্গা জনসংখ্যার ৫২ শতাংশের বয়স ১৮ বছরের কম। এদের অনেকেই আশ্রয় শিবিগুলোতে জন্মগ্রহণ করেছেন বা এক বছরের কম বয়সে আশ্রয় শিবিরে এসেছে।
ইউএনএইচসিআর বলেছে, ‘আমাদের অবশ্যই রোহিঙ্গা শিশু, যুবক ও নারীদের ক্ষমতায়নে বিনিয়োগ করতে হবে, যাতে করে তারা তাদের নিজ সম্প্রদায়ের উন্নতি করতে পারে।’
এতে বলা হয়েছে, ইতোমধ্যেই শিবিরগুলোতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা আইনি পরামর্শ, মানসিক স্বাস্থ্য, কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা, পানি ও স্যানিটেশন অবকাঠামো পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ, আশ্রয়কেন্দ্র মেরামতের পাশাপাশি আবহাওয়া ও অগ্নিকা-ের ঘটনায় প্রথম অগ্রণী ভূমিকা পালন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবায় ইতিবাচক প্রশিক্ষণ ও দায়িত্ব নিয়েছে। 
জাতিসংঘের সংস্থাটি জানায়, ‘অংশীদারিত্ব ও সম্মিলিত পদক্ষেপের মাধ্যমে আমরা প্রজন্মের সহিংসতা ও বঞ্চনার ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলা করতে পারি। এই সহিংসতার ঘটনাগুলোর মধ্যে সংগঠিত গোষ্ঠীর দ্বারা শিবিরগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের ওপর নির্যাতন অন্যতম। 
এতে আরা বলা হয়, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে ও সাহায্য নির্ভরতার কাটিয়ে উঠতে দক্ষতা, শিক্ষা ও জীবিকা কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের সক্ষমতা বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ। 
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সামরিক অভিযানের পর থেকে বাংলাদেশ কক্সবাজার জেলায় জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। জাতিসংঘ এই ঘটনাকে ‘জাতিগত নির্মূলের পাঠ্যপুস্তক উদাহরণ’ এবং অন্যান্য মানবাধিকার গোষ্ঠী এটিকে ‘গণহত্যা’ বলে অভিহিত করে। 
গত সাত বছরে একজনও রোহিঙ্গা স্বদেশে ফেরত যায়নি। মিয়ানমার তাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হলেও রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিয়ে আস্থার ঘাটতির কারণে প্রত্যাবাসনের প্রচেষ্টা দুইবার ব্যর্থ হয়।