বাসস
  ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৮:২৭
আপডেট  : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৮:৩৬

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনসহ ১৫ দফা প্রস্তাবনা

ঢাকা, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ (বাসস) : জাতীয় প্রেসক্লাবে আজ এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেছেন, ফেনীসহ আশপাশের কয়েকটি জেলায় সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করতে হবে। 
আজ ঢাকাস্থ ফেনী সাংবাদিক ফোরামের উদ্যোগে আয়োজিত ‘সাম্প্রতিক বন্যা: কারণ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় ১৫ দফা প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হয়। 
ফোরামের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে ও  সাধারণ সম্পাদক আদিত্য আরাফাতের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও আইসিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমদ, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাষ্ট্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. আবদুল্লাহ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইউব ভূঁইয়া ও সাংবাদিক মোতাহার হোসেন মাসুম।
গোলটেবিল বৈঠকে যৌথভাবে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট পরিবেশ বিজ্ঞানী স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার এবং নদী গবেষক ও রিভার এন্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ।
মূল প্রবন্ধে ফেনীসহ আশপাশের জেলায় আকস্মিক ও অস্বাভাবিক বন্যার জন্য উল্লেখযোগ্য ৫টি কারণকে দায়ী করা হয়। এরমধ্যে স্বল্প সময়ে অধিক বৃষ্টিপাত, পরশুরাম উপজেলার নিজ কালিকাপুরের মুহুরি নদীর পাড় কেটে দেয়া, নদী দখল, দূষণ ও নাব্যতা কমে যাওয়া, মাছের ঘের  তৈরি করে পানি প্রবাহে বাধা প্রদান করা, বাংলাদেশকে  কোনো রকম আগাম সতর্কবার্তা না দিয়েই বাঁধ বা ব্যারেজ বা ড্যামগুলো খুলে দেয়াকে দায়ী করা হয়। 
প্রস্তাবনার ১৫ দফার মধ্যে রয়েছে- আন্তঃসীমান্তীয় সব নদী থেকে ড্যাম/ব্যারেজ বা বাঁধ যে নামেই ডাকা হোক না কেনো তা অপসারণ এবং নতুন করে কোনো ড্যাম তেরি না করা। যৌথ নদী কমিশনসহ নদী সম্পর্কিত নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে তরুণ ও যুবকদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা, ১৯৯৭ সালের জাতিসংঘ ‘আন্তর্জাতিক পানি প্রবাহ কনভেনশন’-এ বাংলাদেশের অনুস্বাক্ষর নিশ্চিত করা। বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি বাড়ার পেছনে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী উন্নত  দেশগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়, বাংলাদেশ সরকারকে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা, মুহুরীর চরে নো-ম্যান্স ল্যান্ডে ভারতের কেটে দেয়া সুরক্ষা বাঁধটি অবিলম্বে পুন:নির্মাণ; পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করতে ফেনী নদী থেকে অবৈধভাবে পানি উত্তোলন বন্ধ; বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত যথাযথ ক্ষতিপূরণসহ কৃষি; মৎস, পোল্ট্রি ও অন্যান্য ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ, প্রণোদনা এবং সহজ শর্তে ঋণ প্রদান;  শিক্ষা ও অবকাঠামো খাতের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে তা মেরামত করার প্রস্তাব দেয়া হয়। 
এছাড়া নদীভাঙন রোধে এখনি কার্যকর ব্যবস্থা; মুছাপুর ক্লোজার পুন:নির্মাণে পদক্ষেপ; ভরাট করা খাল ও নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা; নদী ও পরিবেশ দূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা; নদী কমিশনের প্রস্তুত করা দখলদারদের তালিকা হাল নাগাদ করে কঠোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা; প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বৃষ্টি ও বন্যার তথ্য আদান প্রদানের ব্যবস্থা করা, সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিজ্ঞানভিত্তিক বন্যা বিষয়ক গবেষণা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়।
গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেন, ফেনী অঞ্চলের বন্যার জন্য ফেনীর পরশুরাম উপজেলার নিজ কালিকাপুরের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে ভারতের ইচ্ছাকৃত বাঁধ কেটে দেয়া বহুলাংশে দায়ী। এই বিষয়ে গনশুনানীর মাধ্যমে এবং বিজ্ঞান ভিত্তিক সঠিক তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে জাতিসংঘের সহায়তায় ভারতকে কিংবা অন্য যেকোনো দায়ী রাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক আদালতের মুখোমুখি করা যেতে পারে। তবে সবার আগে কেটে দেওয়া সুরক্ষা বাঁধটি অবিলম্বে পুননির্মাণ করতে হবে।