শিরোনাম
ঢাকা, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ (বাসস): বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশের গার্মেন্টস শিল্প ধ্বংস করে এর বৈদেশিক বাজার দখলের পাঁয়তারা করছে ভারত।
তিনি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র থেকে গার্মেন্টস শিল্প খাতসহ দেশের সকল প্রকার শিল্প প্রতিষ্ঠান রক্ষা করতে জরুরি ভিত্তিতে টাস্কফোর্স গঠনের দাবি করেছেন।
বিএনপি’র মহাসচিব আজ শনিবার বিকালে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি ডিগ্রি কলেজ মাঠে গাজীপুর জেলা ও মহানগর শ্রমিক দলের যৌথ-উদ্যোগে আয়োজিত এক শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ দাবি করেন।
গার্মেন্টস, ওষুধসহ বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে সৃষ্টি হওয়া বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা এবং শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা নিয়মিত পরিশোধের দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন,‘আর কোনো উপায় না পেয়ে বিদেশি শক্তির সঙ্গে যুক্ত হয়ে দেশের অর্থনীতিকে দুর্বল করতে, শিল্প কারখানায় অস্থিরতা সৃষ্টি করছে শেখ হাসিনা ও তার দোসররা।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, কিন্তু তার প্রেতাত্মারা এখনও দেশের মধ্যেই আছে। তারা এখন দেশের মধ্যে থেকে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, দেশের মধ্যে থেকে তারা ষড়যন্ত্র করছেন, যে লুটপাট, চুরি করেছেন, বিদেশে টাকা পাচার করেছেন এগুলো তারা ভুলতে পারছেন না। তারা ভাবছে যদি শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে পারতাম তাহলে আবার চুরি করতে পারতাম, লুটপাট করতে পারতাম। এজন্যই দেশের শিল্পকারখানা বিশেষ করে পোশাক শিল্প ধ্বংসের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। তাদের সঙ্গে বাহিরের শক্তি কাজ করছে। তারাই করছেন যাদের স্বার্থ রয়েছে, তারা জানে আমাদের শিল্প ধ্বংস হলে তাদের দেশে কাজ চলে যাবে।
পাঁচ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর গার্মেন্টস, ওষুধসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা তৈরির শুরু থেকেই এসব আন্দোলনের পেছনে আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলেও দাবি করেন ফখরুল ইসলাম।
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ শিল্পকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। আপনারা নেতাকর্মীরা সবাই মিলে, শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে এদের প্রতিহত করুন। মনে রাখবেন দেশের ৫০ লাখ মানুষ এ পেশার সঙ্গে জড়িত। আমাদের বৈদেশিক আয়ের সিংহভাগ এ শিল্প থেকে আসে।
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিগত সরকারের সময়ে আমাদের অনেক নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে, শ্রমিক দিনমজুর, ছাত্রদের হত্যা করেছে। নিজে ক্ষমতায় থাকার জন্য পুরো রাষ্ট্র ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। বিশেষ করে পুলিশ বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে নির্যাতন করেছে। এখন আমরা দম ফেলতে পারছি, রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারছি।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সারা পৃথিবীর মানুষ শ্রদ্ধা করেন। তিনি দেশের কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে নিয়ে সরকার গঠন করেছেন। আমরা তাদের বলেছি, আওয়ামী লীগের জঞ্জাল মুক্ত করে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিতে। আমরা ভোট দিতে চাই, ভোটের মাধ্যমে সরকার ও পার্লামেন্ট নির্বাচন করতে চাই।
তিনি বলেন, আমরা ভারত সরকারকে বলেছি যিনি খুনি, দেশে গণহত্যা চালিয়েছেন, অসংখ্য খুনের মামলার আসামি, যিনি দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করেছেন তাকে আশ্রয় দিবেন না। তারা আমাদের কথার জবাব দেয়নি। আমরা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে বলেছি অবিলম্বে দেশ ধ্বংসকারী শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করতে ফেরত পাঠাতে ভারতের কাছে চিঠি দেন।
আবারও দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে ফখরুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের সৃষ্ট জঞ্জাল পরিষ্কার করে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমান সরকার কাজ শুরু করেছে। জনগণ আশা করে, সরকার তাদের কথা শুনবে। বাংলাদেশের মানুষ তার প্রতিনিধি নির্বাচন করতে চায়।
শ্রমিকদলের কার্যাকরি সভাপত্বি সালাউদ্দিন সরকারের সভাপতিত্বে সামাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির সহ শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মজিবুর রহমান ও হাসান উদ্দিন সরকার, গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।