বাসস
  ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৭:৫১
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০:৩৯

পিলখানা হত্যাকাণ্ডে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের আবেদন নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টের নির্দেশ

ঢাকা, ৫, নভেম্বর ২০২৪ (বাসস) : রাজধানীর পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদরদপ্তরে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি হত্যাকাণ্ডসহ নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ডের প্রকৃত সত্য বের করতে স্বাধীন কমিশন গঠন প্রশ্নে রুল জারি করে এ সংক্রান্ত আবেদনটি নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এ সংক্রান্ত এক রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ আজ এ আদেশ দেয়।

আগামী ১০ দিনের মধ্যে আবেদন নিষ্পত্তি করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে স্বরাষ্ট্রসচিবের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ২৪ নভেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে।

আদালতে রিটের পক্ষে আইনজীবী তানভীর আহমেদ নিজেই শুনানি করেন। তার সঙ্গে ছিলেন অপর আবেদনকারী বিপ্লব কুমার পোদ্দার। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান।

আইনজীবী তানভীর আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, তৎকালীন বিডিআরে সংঘটিত গণহত্যায় মূল পরিকল্পনাকারী ও নেপথ্যে কারা ছিল, এ বিষয়ে জাতীয়ভাবে পূর্ণাঙ্গ কোনো তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভুক্তভোগী পরিবার ও তৎকালীন সেনা কর্মকর্তারা ওই ঘটনা নিয়ে নতুন নতুন তথ্য দিচ্ছেন।

কেউ কেউ বলেছেন, তদন্তে সরকার তেমন সহায়তা করেনি। এমন প্রেক্ষাপটে জনসমক্ষে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে গণহত্যা তদন্তে জাতীয় স্বাধীন কমিশন গঠনের নির্দেশনা চেয়ে রিটটি করা হয়। পাশাপাশি সেনা দিবস ঘোষণার নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে। পরবর্তী সময়ে প্রকৃত সত্য বের করতে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করতে এবং ‘শহীদ সেনা দিবস’ ঘোষণায় পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানিয়ে ৩ নভেম্বর স্বরাষ্ট্রসচিব (জননিরাপত্তা বিভাগ) বরাবর আবেদন করা হয়।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তরে বিদ্রোহের নামে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। সেই লোমহর্ষক ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জন প্রাণ হারান। এ ঘটনায় আনা দুই মামলার মধ্যে হত্যাযজ্ঞের মামলার বিচার হাইকোর্ট বিভাগে সম্পন্ন হয়েছে। অপরদিকে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলা এখনও নিম্ন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

হত্যাযজ্ঞের মামলায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর রায় দেন বিচারিক আদালত। এতে ১৫২ জনের ফাঁসি এবং যাবজ্জীবন কারাদ- হয় ১৬০ জনের। ১০ বছরসহ বিভিন্ন মেয়াদের সাজা হয় ২৫৬ জনের। খালাস পান ২৭৮ জন। বিচারিক আদালতে দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানি শেষে হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর রায় দেয়। রায়ে ফাঁসি বহাল হয় ১৩৯ জনের। যাবজ্জীবন দ- দেয়া হয় ১৮৫ জনকে। ২২৮ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়। খালাস পান ৪৫ জন। উচ্চ আদালতে খালাস পাওয়া ও সাজা কমা ৮৩ জনের ক্ষেত্রে আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষ 'লিভ টু আপিল' (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) দায়ের করেছে। পাশাপাশি আসামিপক্ষেও লিভ টু আপিল দায়ের করা হয়েছে।

দেশের বিচারবিভাগের ইতিহাসে বৃহত্তম এই মামলায় বাহিনীর সদস্য ছাড়াও রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আসামি করা হয়েছিল। এ মামলায় বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুকে যাবজ্জীবন দ- দেয়া হয়েছিল। কারাগারে থাকা অবস্থায় বিএনপি'র এই নেতার মৃত্যু হয়। তাকে মামলায় সম্পৃক্ত করা এবং মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে।