বাসস
  ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:২০

উত্তরাঞ্চল আর কখনো অবহেলিত থাকবে না : ডা. শফিকুর রহমান

ঢাকা, ৮ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : জামায়াতে ইসলামীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো বিশেষ মর্যাদার দাবি রাখে। কিন্তু এলাকাগুলো দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত। এ অঞ্চল আর কখনো অবহেলিত থাকবে না। উত্তরাঞ্চলের মানুষ অনেক ধর্মপ্রাণ ও অল্পে তুষ্ট। 

ভারতের উদ্দেশে তিনি বলেন, প্রতিবেশী ভালো থাকলে আমরা ভালো থাকবো। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে আমরা প্রতিবেশীসুলভ আচরণ চাই। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা-গুমসহ অসংখ্য মামলা রয়েছে। আদালত যখন চাইবে তখন তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়ার জন্য তিনি ভারতের প্রতি আহবান জানান।

নীলফামারী জেলা জামায়াতের উদ্যোগে আজ পৌরসভা মাঠে আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীরে জামায়াত এসব কথা বলেন। 

জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুস সাত্তারের সভাপতিত্বে ও জেলা সেক্রেটারি অধ্যাপক আনতাজুল ইসলামের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মমতাজ উদ্দিন, মাহবুবুর রহমান বেলাল, শহীদ মহিদুলের পিতা আনোয়ার হোসেন, ঠাকুরগাঁওয়ের সাবেক জেলা আমীর মাওলানা আব্দুল হাকীম, নীলফামারীর সাবেক জেলা আমীর আব্দুর রশিদ, দিনাজপুর জেলা আমীর অধ্যক্ষ আনিসুর রহমান, লালমনিরহাট জেলা আমীর এডভোকেট আবু তাহের, নীলফামারী জেলা নায়েবে আমীর ড. খায়রুল আনাম, পঞ্চগড় জেলা আমীর অধ্যাপক ইকবাল হোসাইন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘বিগত সাড়ে পনের বছর দেশে কোনো শান্তি ছিল না। সকল ধর্মের মানুষ নির্যাতিত ছিল। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী ছিল বেশি নির্যাতিত। সকল অফিস সীলগালা করে দেয়া হয়েছিল। কাউকে ঘরে থাকতে দেয়া হয়নি।’ 

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সর্বপ্রথম সেনাবাহিনীর উপর আঘাত করা হয়েছে। বিডিআর এর ৫৭ জন দেশ প্রেমিক কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর ঘাতকদের পালিয়ে যেতে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনা নিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তদন্ত করা হয়েছে, কিন্তু সে তদন্ত রিপোর্ট আজও প্রকাশ করা হয়নি।

বিডিআর হত্যাকান্ডের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার পর জামায়াতে ইসলামীর উপর আঘাত করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, আল্লামা সাঈদীসহ এগারজন শীর্ষ নেতাকে হাস্যকর মামলায় গ্রেফতার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ, হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের অভিযোগ আনা হয়। তাদের বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ ছিল ষোলআনা মিথ্যা। স্বাধীনতার পর একাত্তর সালের অপরাধে যে সব মামলা হয়েছে তার মধ্যে এসব নেতৃবৃন্দের নামে একটি মামলাও ছিল না। একশত পঁচানব্বই জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল। কিন্তু তারা একজনও এদেশের নাগরিক ছিলেন না। দীর্ঘ বিয়াল্লিশ বছর পর মামলার উদ্ভব হয়। সাক্ষীদেরকে অর্থ সম্পদ দিয়ে সেইফহোমে রেখে শিখিয়ে দিয়ে সাক্ষ্য দেয়া হয়। ব্রাসেলস থেকে জিয়াউদ্দিন বিচারককে রায় লিখে দিয়েছে। বিচারের নামে দলীয় ক্যাডার দিয়ে রায়ের মাধ্যমে জামায়াত নেতৃবৃন্দকে হত্যা করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তার বলেন, আওয়ামী লীগের ইতিহাস সন্ত্রাস, দুর্ভিক্ষ ও ব্যাংক লুটের ইতিহাস। এই ফ্যাসিবাদ যাতে আর ক্ষমতায় আসতে না পারে এজন্য দল-মত-নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান।

সম্মেলন শেষে মাঠেই সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন ডা. শফিকুর রহমান। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। এক প্রশ্নের জবাবে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা দশ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি। অন্তর্বর্তী সরকার আমাদের প্রস্তাব বাস্তবায়ন করলে সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন করা যাবে। সকল মানুষের ভোটের মূল্যায়ন করতে আনুপাতিক ভোটের প্রস্তাব করেছি। 

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কার করে নির্বাচন করতে হবে। আর সংস্কারের জন্য সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে হবে। বিএনপি সরকারকে নির্বাচনের বিষয়ে বার বার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু সরকারকে যৌক্তিক সময় দেয়ার বিষয়ে সবাই একমত বলে তিনি উল্লেখ করেন।