শিরোনাম
ঢাকা, ১১ নভেম্বর. ২০২৪ (বাসস) : গত ৮ নভেম্বর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তিন মাস পূর্ণ করেছে। আজ রোববার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত তিন মাসে সরকারের মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করেছে তার তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের গত তিন মাসে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে উল্লেখযোগ্য অর্জন কার্যক্রমসমূহ নিচে তুলে ধরা হলো:
১. খাদ্যশস্যের বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও নি¤œ আয়ের মানুষের খাদ্য সহায়তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ওএমএস নীতিমালা ২০১৫ ও খাদ্যবান্ধব নীতিমালা ২০১৭ সংশোধনপূর্বক আধুনিক ও যুগোপযোগী করা হয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে অনেক ওএমএস ডিলার খাদ্যশস্য উত্তোলন ও ভোক্তাদের নিকট খাদ্যসামগ্রী বিক্রয় বন্ধ করে রেখেছেন।
এছাড়া এ দুটি নীতিমালা অনুসারে নিয়োগকৃত ডিলারের কার্যক্রমের মেয়াদ সুনির্দিষ্ট ছিল না; এতে ডিলারগণ দীর্ঘদিন নিয়োজিত থাকায় বিভিন্ন অনিয়মে জড়িত হওয়ায় জনগণের কাঙ্ক্ষিত সেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছিল না। বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বিদ্যমান এ দু’টি নীতিমালা সংশোধনপূর্বক যুগোপযোগী করা হয়েছে।
২. চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের সম্প্রতি বন্যাকবলিত ১৪টি জেলার উপজেলাসমূহে পৌরসভা/ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত বন্যা পরবর্তী সময়ে তাৎক্ষণিকভাবে বিশেষ ওএমএস কার্যক্রমে মোট ২৩০টি কেন্দ্রে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর ২০২৪ মাসে মোট ৪৩ বিক্রয় দিবসে সর্বমোট ৯,৮৯০ মেট্রিক টন চাল ও ৯,৮৯০ মেট্রিক টন আটা বিক্রয়ের লক্ষ্যে বিশেষ বরাদ্দ দেয়া হয়। যার ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বন্যার্তদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় এবং খাদ্যশস্যের দাম মোটামুটি সহনীয় পর্যায়ে থাকে।
৩. অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্দেশনায় দেশের সকল মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং বিতরণ ব্যবস্থা নির্বিঘœ রাখতে সাধারণ ওএমএস কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে। সাধারণ ওএমএস খাতে বর্তমানে সারাদেশে সর্বমোট ১,১৩৩টি কেন্দ্রে খাদ্যশস্য বিক্রয় করা হচ্ছে। এ কার্যক্রমের আওতায় দেশের যে কোনো নাগরিক সপ্তাহে একবার সর্বোচ্চ প্রতি কেজি ৩০ টাকা দরে ৫ কেজি চাল ও প্রতি কেজি ২৪ টাকা দরে ৫ কেজি খোলা আটা সংগ্রহ করতে পারে । ঢাকা মহানগরীতে উল্লিখিত কার্যক্রমে ৫ কেজি চালের সঙ্গে খোলা আটার পরিবর্তে ২ কেজি ৫৫ টাকা দরে ২ প্যাকেট আটা প্যাকেট আটা হিসেবে সংগ্রহ করতে পারছে। যার ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে চাল ও আটার দাম মোটামুটি সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে।
৪. খাদ্যশস্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখার নিমিত্ত ধান ও চালের মূল্যের বাজার মনিটরিং করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর একটি অনলাইন সিস্টেম চালু করা হয়েছে। দেশের প্রধান প্রধান ধান উৎপাদনকারী জেলার গুরুত্বপূর্ণ হাট বাজারের ধান ও চালের রিয়েল টাইম পাইকারি বিক্রয়মূল্যের তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করার লক্ষ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ধান ও ধানের বাজার মূল্যের রিয়েল টাইম মনিটরিং নামক আইডিয়াটি গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের ২০টি গুরুত্বপূর্ণ ধান ও চালের হাট বাজার হতে ধান ও চালের পাইকারি বিক্রয় মূল্য সংগ্রহ করে একটি কেন্দ্রিয় ডেটাবেইজে সংরক্ষণের লক্ষ্যে মোবাইল অ্যাপ ও ওয়েব ভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার প্রস্তুত করা হয়েছে।
৫. এসডিজিতে ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব তথা ‘নো পোভার্টি’ ও ‘জিরো হাঙ্গার’ অর্জনের প্রত্যয় ঘোষিত হয়েছে। বর্তমান সরকার খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি পুষ্টি নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে। এ লক্ষ্য, প্রত্যয় ও অভিপ্রায় অর্জনের জন্য এবং পল্লী অঞ্চলের জনসাধারণকে স্বল্পমূল্যে খাদ্য সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে সরকারি বিতরণ ব্যবস্থায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। এ কর্মসূচির আওতায় দেশের ৫০ লাখ পরিবার অর্থাৎ প্রায় ২.৫ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান করতে সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মাভাবকালীন (সাধারণত যে সময় গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে) ৫ মাস (মার্চ-এপ্রিল এবং সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর) প্রতিকেজি ১৫ টাকা দরে মাসে ৩০ কেজি হারে চাল বিতরণ করা হয়। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর খাদ্যশস্যের সহায়তা, সরবরাহ ও মূল্য স্থিতিশীলতা রাখার স্বার্থে ইতোমধ্যে সেপ্টেম্বর/২০২৪ মাসের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি পরিচালনার লক্ষ্যে চাল উত্তোলনের অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে। এই কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য ইতোমধ্যে ভোক্তার ডেটাবেজ প্রস্তুত করা হয়েছে।
৬. বর্তমানে পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। সরকারি গুদামে চালের মজুদ আছে ৯.০৮ লাখ মেট্রিক টন এবং গম ৪.৫০ লাখ মেট্রিক টন; ধান ৪০৬১ মেট্রিক টন; মোট খাদ্যশস্য মজুদ ১৩.৬০ লাখ মেট্রিক টন (০৪ নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত)। ন্যূনতম ১১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ থাকা আবশ্যক হলেও প্রায় ২.৬০ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বেশি মজুদ রয়েছে যা খাদ্য নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখবে।
৭. বাজারে চালের সরবরাহ বৃদ্ধি করে চালের বাজার স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে বেসরকারিভাবে চাল আমদানির লক্ষ্যে সব ধরণের শুল্ক প্রত্যাহার এবং অগ্রিম আয়কর ৫% থেকে হ্রাস করে ২% করা হয়েছে।
৮. ইতোমধ্যে সংশোধিত ওএমএস নীতিমালার আওতায় নতুনভাবে সৎ ও যোগ্য ওএমএস ডিলার নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ওএমএস কার্যক্রম আরও স্বচ্ছ ও গতিশীল হবে।
৯. আশুগঞ্জ ও চট্টগ্রাম সাইলোর বিএমআরই কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। কাজ সম্পন্ন হলে দেশের খাদ্যশস্য সংরক্ষণের ক্ষমতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে।
১০. বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়িত ‘মডার্ন ফুড স্টোরেজ ফেসিলিটিজ প্রকল্প’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে ৭টি স্থানে ৭টি আধুনিক স্টিল সাইলো নির্মাণ চলমান রয়েছে। প্রকল্পটির অগ্রগতি প্রায় ৮০%। স্টিল সাইলোগুলো নির্মাণ সম্পন্ন হলে ৪.৮৭ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংরক্ষণ সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। বেশিরভাগ সাইলোর নির্মাণ কাজ ডিসেম্বর ২০২৪-এ সম্পন্ন হবে।
১১. প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের খাদ্য গুদামসমূহের সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে উক্ত কাজসমূহ সম্পন্ন হবে। এর ফলে বিদ্যমান গুদামসমূহের খাদ্যশস্য ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।