বাসস
  ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৬:৫৫

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন : পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম

ঢাকা, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : নোবেল জয়ী অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর আজ ১৫ নভেম্বর ১০০ দিন পূর্তিতে সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অর্জন ও কর্ম পরিকল্পনা তুলে ধরা হলো:

ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন অন বায়োলজিক্যাল ডাইভার্সিটি (ইউএনসিবিডি) এবং  ইউনাইটেড নেশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (ইউএনএফসিসিসি) এর আয়োজনে গত ১১ নভেম্বর থেকে ২২ নভেম্বর-২০২৪ মেয়াদে আজারবাইজানের বাকুতে ২৯তম জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন কপ২৯ এ সিভিল সোসাইটি, এনজিও এবং স্থানীয় অধিবাসীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে খসড়া পজিশন পেপারে তাদের মতামতের প্রতিফলন নিশ্চিত করা হয়েছে এবং শিগগিরই সেটি চূড়ান্ত করা হবে।

পরিবেশের সুরক্ষায় গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রমে ছাত্রছাত্রী ও তরুণদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে।

তথ্য প্রবাহ অবাধ, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক করার লক্ষ্যে পরিবেশ ছাড়পত্র প্রদান, এনফোর্সমেন্ট, অর্থদণ্ড ও আপিলের সিদ্ধান্তের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

পরিবেশ দূষণ ও অন্যান্য বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে আগত অভিযোগ নিষ্পত্তিতে তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নিয়ে সমাধান করা হয়েছে, যেমন সাভারে ব্যাটারি কারখানা বন্ধ করা হয়েছে এবং এ ধরনের কার্যক্রম চলবে।

বাংলাদেশ সচিবালয়সহ সকল সরকারি দপ্তরে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ ও বিকল্প  ব্যবহারকে উৎসাহিত করার জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে উপানুষ্ঠানিক পত্র পাঠিয়েছে। পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ হতে সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, সংস্থা ও মাঠ পর্যায়ের অফিসসমূহকে তালিকাভুক্ত সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক (এসইউপি) ব্যবহার বন্ধ ও বিকল্প ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ নির্দেশন বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য এ মন্ত্রণালয়ের বিগত ২৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সভায় ৩০ টি মন্ত্রণালয়, বিভাগের প্রতিনিধি ও এ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দপ্তর, সংস্থার প্রতিনিধি সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বিকল্প ব্যবহার হিসেবে অন্যকিছু ব্যবহার করছে।

গত ১ অক্টোবর ২০২৪ হতে নিষিদ্ধ পলিথিন, পলিপ্রপাইলিন শপিং ব্যাগের বিরুদ্ধে কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ার কথা থাকলেও ৩ নভেম্বর থেকে এই কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। ৩ নভেম্বর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন বিক্রি করার দায়ে পরিবেশ অধিদপ্তর, সদর দপ্তরের তিনজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় ১১টি মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করে ২৬টি প্রতিষ্ঠানকে ৮৫ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করে আদায়সহ ৩ হাজার ৯৭৪ কেজি পলিথিন জব্দ করা হয়। 

এছাড়া সারাদেশে পলিথিন উৎপাদন, বিক্রি, সরবরাহ ও বাজারজাত করার দায়ে ১২৪টি মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করে ২৬৮টি প্রতিষ্ঠানকে ১২ লাখ ৫২ হাজার একশত টাকা জরিমানা ধার্য করে আদায়সহ আনুমানিক ২৬৮৭১.৬ কেজি পলিথিন জব্দ করা হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর দূষণ বিরোধী নিষিদ্ধ পলিথিন বন্ধ কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। ৩ নভেম্বর থেকে রাজধানীর মেগামল ও  চেইন শপিং মলে পলিথিন ব্যাগ বন্ধ করতে কাজ করছে সরকার। পলিথিন বিক্রি বন্ধের দোকান বা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাসহ চালানো হচ্ছে মোবাইল কোর্ট। পলিথিন উৎপাদনকারী কারখানাকে করা হচ্ছে সিলগালা।

পাশাপাশি নিষিদ্ধ পলিথিন শপিং ব্যাগ বন্ধে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে মনিটরিং কমিটি নিয়মিত বাজার পর্যবেক্ষণ করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ছাড়াও স্থানীয় প্রশাসন পলিথিনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনায় যুক্ত হয়েছে। জনসচেতনতা বাড়াতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও এর কুফল এবং পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে বিতরণ করা হচ্ছে লিফলেট। 

এছাড়া রাজধানী ঢাকার দশটি কাঁচা বাজারে পলিথিন ব্যবহার বন্ধেও কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধনী ২০০২) ৬-এর ক ধারা অনুযায়ী ২০০২ সালে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার (উৎপাদন, বিক্রয়, পরিবহন ইত্যাদি) নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পলিথিন শপিং ব্যাগের ব্যবহার বন্ধের পরিচালিত অভিযান মনিটরিং করার জন্য ৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ হর্ণ বন্ধে কাজ করছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় যানবাহনের হর্ণ বন্ধ করতে ১ অক্টোবর থেকে  হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং বিমানবন্দরের দক্ষিণ দিকে লা মেরিডিয়ান হোটেল থেকে উত্তর দিকে স্কলাসটিকা ক্যাম্পাস পর্যন্ত তিন কিলোমিটার রাস্তায়  হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এসব এলাকা হর্ন মুক্ত এলাকা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। 

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে রাজধানী ঢাকার ১০টি রাস্তা হর্ণ মুক্ত  ঘোষণা করা হবে। পরবর্তীতে সারাদেশে হর্ন মুক্ত নীরব এলাকা ঘোষণা করা হবে। জনসচেতনতা বাড়াতে সচেতনতামূলক স্লোগান লেখা ব্যানার, বিলবোর্ড স্থাপন লিফলেট বিতরণ ও বিমানবন্দরের ভেতরে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ, পার্কিংয়ে যথাযথ পার্কিং, বি আর টি এর মাধ্যমে গাড়ি চালক ও গাড়ির মালিকদের মেসেজ পৌঁছে দেওয়া, আইন অমান্যকারীদের জন্য জরিমানা ভ্রাম্যমাণ আদালতের ব্যবস্থাসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা ট্রাফিক, রোডস এন্ড হাইওয়েজ, পরিবেশ অধিদপ্তর, এপিবিএন, বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, শিক্ষক-ছাত্র প্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবীসহ সবার সমন্বিত উদ্যোগে হর্নমুক্ত এলাকা ঘোষণা করা হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে অযথা হর্ন বাজালে জরিমানা হিসেবে ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে বিদ্যমান আইনের সংস্কার করা হবে। ১ অক্টোবর থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত ৩টি সংস্থা (পরিবেশ অধিদপ্তর, বিআরটিএ ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ) মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। উক্ত সময়ে ৪৮টি মামলার মাধ্যমে ৬৫ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। ১০টি গাড়ি থেকে হাইড্রোলিক হর্ন খুলে নেয়া হয়। প্রায়  ২০০টি গাড়ির চালককে সতর্ক করাসহ গাড়িতে স্টিকার লাগানো হয়। 

বিমানবন্দর সড়কের ৩টি পয়েন্টে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গ্রিন ভয়েজের পক্ষ থেকে প্রচারণা কার্যক্রম ১ অক্টোবর হতে চলমান রয়েছে। সেন্টার ফর এটমোসফেরিক পলিউশন স্টাডিস (সিএপিএস) এর পক্ষ থেকে ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণার পূর্বের ৫ দিন এবং পরের ৫ দিন শব্দের মানমাত্রার জরিপ করা হয়েছে। শব্দের মানমাত্রার তুলনামূলক বিশ্লেষণের কাজ চলমান রয়েছে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অভ্যন্তরে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক বন্ধকরণে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ও সব রকম পলিথিন ব্যবহার বন্ধের বিষয়ে জনগণকে সচেতন করার জন্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়।

কক্সবাজারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমি অফ পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (জনপ্রশাসন একাডেমির জন্য) স্থাপনের জন্য বিগত সরকারের সময় দেওয়া ৭০০একর বনভূমি বন বিভাগের কাছে ফেরত দিয়েছে মন্ত্রণালয়। বন্দোবস্তকৃৃত এলাকা ১৯৩৫ সাল থেকে বন আইন ১৯২৭ এর ২৯ ধারার আওতায় রক্ষিত বন হিসেবে ঘোষিত। অকৃষি খাস জমি হিসেবে ৭০০ একরের ভূমিটি রক্ষিত বন ও সংকটাপন্ন এলাকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

বায়ুদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২২-এর বিধি-৪ অনুযায়ী প্রণীত জাতীয় বায়ুমান ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (এনএকিউএমপি) চূড়ান্ত করা হয়েছে। পাহাড় ও টিলা কাটা বন্ধে করণীয় নির্ধারণকল্পে পাহাড় ও টিলা সমৃদ্ধ ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার ও ১৯টি জেলার জেলা প্রশাসকগণ এবং পাহাড়, টিলা কর্তন বন্ধে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাসমূহ পরিদর্শনপূর্বক কর্তন বন্ধ ও রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পাহাড় টিলা, টিলা রক্ষায় এবং কর্তন রোধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

সামাজিক বনায়নের বৃক্ষাচ্ছাদন বৃদ্ধি আর বনজ সম্পদ সৃষ্টি টেকসই করার লক্ষ্যে কমিটি গঠন করে বিদ্যমান সামাজিক বনায়ন বিধিমালা-২০০৪ (সংশোধিত, ২০১১)-এর সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। মধুপুর শালবন এলাকার বন সংরক্ষণ, জীববৈচিত্র্য উন্নয়ন ও বন নির্ভর ৬ হাজার জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন ও পর্যটন শিল্পকে একসঙ্গে রক্ষা করতে বিভিন্ন উদ্যোগ  গ্রহণ করেছে সরকার। এ দ্বীপের প্রকৃতি ও বন্য প্রাণীরক্ষাসহ কোরাল ব্লিচিং রোধ করতে সেন্টমার্টিন রক্ষা করা হচ্ছে। সেন্টমার্টিন এবং ওই দ্বীপের মানুষের বাঁচানোসহ প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পর্যটন খাতকে সীমিত করেছে সরকার।

সেন্টমার্টিন দ্বীপ সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক মুক্ত করা এবং এ দ্বীপের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য দ্বীপটিতে অবৈধ স্থাপিত হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট ও স্থাপনাসমূহের নির্মাণ বন্ধ অভিযান পরিচালনার লক্ষ্যে স্থাপনাসমূহের হালনাগাদকৃত তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।

বন অধিদপ্তরের আওতাধীন জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের প্রবেশ ফি যৌক্তিক পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে এবং ১১ সেপ্টেম্বর সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা।
জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, মিরপুর, ঢাকার গোলাপের কলমসহ বিভিন্ন শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদ, পামজাতীয় উদ্ভিদ লাইভ হেজ উদ্ভিদ ক্লাইম্বার জাতীয় উদ্ভিদ, ইনডোর প্ল্যান্ট, মৌসুমী ফুল, ভেষজ উদ্ভিদ, বিরল ও বিপন্নপ্রায় উদ্ভিদ, অর্কিড ক্যাকটাস বা সাকুলেন্টের উত্তোলন খরচ এবং বিক্রয়মূল্য পুন:নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)-এর অনুকূলে কক্সবাজার জেলার সোনাদ্বীপে ৯৪৬৬.৯৩ একর জমিতে বন বিভাগের সৃজনকৃত বাগান, পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতিসাধন করায় বন্দোবস্ত বাতিলের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ে এবং পরিবেশগত ছাড়পত্র বাতিল করার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)-এর ‘টেকনিক্যাল সেন্টার’ নির্মাণের জন্য কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলাধীন জঙ্গল খুনিয়াপালং মৌজায় ২০ একর সংরক্ষিত বনভূমি অবমুক্তকরণ (ডি-রিজার্ভ) বিষয়ক প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় ‘সাইট এন্ড সার্ভিসেস আবাসিক প্লট উন্নয়ন’ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাবিত ১৪.১৯৬ একর ভূমির মধ্যে ১২.৭১৫ একর টিলা শ্রেণি, ১.০৪৪ একর নাল শ্রেণি ও ০.৪৩৭ একর বাড়ি হিসেবে রেকর্ডভুক্ত থাকায় প্রকল্পটি বাতিলের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাতিলের লক্ষ্যে প্রদান করা ছাড়পত্র বাতিল করা হয়েছে।

শহীদ এ টি এম জাফর আলম ক্যাডেট কলেজ (বেসরকারি)-এর অনুকূলে বন্দোবস্ত দেওয়া কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলাধীন খুনিয়াপালং মৌজায় ১৫৫.৭০ একর রক্ষিত বনভূমির বন্দোবস্ত বাতিলের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে আধা সরকারি চিঠি পাঠানো হয়েছে।

লোক প্রশাসন একাডেমি স্থাপনের নিমিত্ত কক্সবাজার জেলায় ঝিলংজা মৌজার ৭০০.০০ একর রক্ষিত বনভূমির বন্দোবস্ত বাতিলের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আধা সরকারি চিঠি দিয়েছে।

পরিবেশ দূষণের অন্যতম নিয়ামক ইটভাটা বন্ধের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়। পরিবেশ অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ইটভাটা বন্ধে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। ইটভাটা হতে সৃষ্ট বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ ইটভাটা মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে অনুষ্ঠিত সভায় অবৈধ ইটভাটাসমূহ বন্ধে মালিক সমিতি সার্বিক সহযোগিতা করবে মর্মে অঙ্গীকার করেন। দেশে নতুন ইটভাটার ছাড়পত্র দেওয়া হবে না। ৩ হাজার ৪৯১ টি ইটভাটার পরিবেশ ছাড়পত্র না থাকায় তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে। অন্যদিকে পার্বত্য জেলাগুলোয় অবৈধ নির্মিত ইটভাটাকে জনস্বার্থে অন্য স্থানে সরিয়ে নেয়া হবে। তবে ব্লক ইট তৈরির কাজে প্রয়োজনে প্রনোদনা দিবে সরকার।

জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় প্রকল্প গ্রহণের জন্য প্রণয়নকৃত গাইডলাইন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, সংস্থার প্রতিনিধিদের অবহিতকরণের জন্য ১ অক্টোবর একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে গৃহীত ৪৫টি প্রকল্পের অনুকূলে অর্থ ছাড় করা হয়েছে। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ এবং বন্যপ্রাণী বিষয়ক সচেতনতামূলক লিফলেট, পোস্টার ও স্টিকার বিতরণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) ২০২৫ সহযোগিতায় ‘নতুন বাংলাদেশের জন্য যুব উৎসব’ উদযাপনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে।

বায়ু দূষণের উৎস নিয়ন্ত্রণে বায়ুমান মনিটরিং ব্যবস্থা উন্নত করা এবং এ প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করতে সরকার জাতীয় বায়ু মান ব্যবস্থাপনা করতে পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। কঠোর নিয়মে বাস্তবায়ন এবং শিল্প পরিবহন নগরায়নে পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তির প্রসারে একটি রোড ম্যাপ বা পথ নকশা হিসেবে কাজ করবে এটি।

পরিবেশগত ছাড়পত্র প্রদান প্রক্রিয়ার অটোমেষন করার লক্ষ্যে ‘ট্রান্সফর্মেশন অফ দা এনভায়নমেন্টাল ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট প্রসেস’ নামে একটি অনলাইন সফটওয়্যার উদ্বোধন করা হয়েছে। এটি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র প্রক্রিয়ায় স্মার্ট পরিবর্তন আনতে সহায়তা প্রদান করবে।
২০৪০ সালের মধ্যে সিসামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কাজ করছে সরকার। ‘নীরব সংকট’ সিসা এবং ভারী ধাতু পরিবেশকে দূষণ করছে। সরকার সকল অংশীজনের সহায়তায় সিসামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করেছে। সিসা দূষণের উৎস সনাক্ত ও নিয়ন্ত্রণে একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা শিগগিরই গ্রহণ করা হবে।

বন্য হাতির সুরক্ষায় হাতি ও মানুষের সহাবস্থান সৃষ্টিতে কাজ করছে সরকার। চট্টগ্রামের কেইপিজেড এলাকায় হাতি ও মানুষের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। হাতির চলাচলের পথ করে এবং জোন চিহ্নিত করে কাজ করা হবে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পাঁচটি এলিফ্যান্ট রেসপন্স টীম গঠন করা হবে। কোরিয়ান ইপিজেড বন বিভাগ, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনভেনশন অফ নেচার (আইইউসিএন), জেলা প্রশাসন ও বিশেষজ্ঞরা বন্য হাতির সুরক্ষায় হাতি ও মানুষের সহাবস্থান নিশ্চিতে কাজ করছে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের গৃহীত বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপ বাস্তবায়ন এবং এ ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অর্জনকে টেকসই ও ত্বরান্বিত করার জন্য নিম্নবর্ণিত আশু কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।