বাসস
  ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৮:১৯
আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:৫২

সংস্কার উদ্যোগে যুক্তরাজ্যের সহায়তা চায় ঢাকা

ঢাকা, ১৭ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন আজ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগের জন্য যুক্তরাজ্যের সহায়তা চেয়েছেন। এ উদ্যোগে জনগণের, বিশেষ করে দেশের তরুণদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সফররত যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী ক্যাথরিন ওয়েস্ট, এমপি’র সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এই সহায়তা কামনা করেন।

বৈঠকে ব্রিটিশ ও বাংলাদেশ সরকারের অগ্রাধিকারমূলক বিষয় থেকে শুরু করে প্রধান প্রধান দ্বিপক্ষীয় ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বৈঠকে উপদেষ্টা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে অব্যাহত সমর্থন প্রদানের জন্য যুক্তরাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে ব্রিটেনের ভূমিকার কথা স্বীকার করেন। তিনি বিদেশে বাংলাদেশের পাচার হওয়া অবৈধ সম্পদ প্রবাহ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশের এ সম্পদ পুনরুদ্ধারে ব্যাপক প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার এজেন্ডাভুক্ত এই সম্পদ খুঁজে বের করা এবং সেগুলো বাংলাদেশে ফেরত আনার বিষয়ে যুক্তরাজ্যের জোর সহযোগিতা কামনা করেন। 

জবাবে যুক্তরাজ্যের ইন্দো-প্যাসিফিক বিয়ষক মন্ত্রী ক্যাথরিন এ বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। 

উপদেষ্টা তৌহিদ রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন কামনা করে বলেন, মিয়ানমারে বাস্তুচ্যুত মানুষের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের মধ্যেই এই সংকটের একমাত্র সমাধান রয়েছে।

পয়েন্ট-ভিত্তিক ইমিগ্রেশন সিস্টেমের বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা যোগ্যতার পারস্পরিক স্বীকৃতির ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান।

ক্যাথরিন ওয়েস্ট ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কেয়ার স্টারমার ও পররাষ্ট্র সচিব ডেভিড ল্যামির পক্ষ থেকে উষ্ণ শুভেচ্ছা জানান।

তিনি বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক জোরদারে যুক্তরাজ্যের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং অভিবাসন, সামুদ্রিক সহযোগিতা ও সাইবার নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য সরকারের অগ্রাধিকারের ওপর জোর দেন।

ক্যাথরিন রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে যুক্তরাজ্যের দৃঢ় অবস্থানের কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন এবং বাস্তুচ্যুত সম্প্রদায়ের জন্য মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার গুরুত্বের ওপর জোর দেন।

উভয় পক্ষই সহযোগিতাকে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও জোরদার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর ক্যাথরিনই যুক্তরাজ্যের প্রথম মন্ত্রী, যিনি বাংলাদেশ সফরে এলেন।

বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা জানি যে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার শান্তি ও শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারে, জবাবদিহিতা নিশ্চিতে ও জাতীয় পুনর্মিলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এই উদ্দেশ্যগুলোতে যুক্তরাজ্য সরকারের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।’

যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী আরো বলেন, অশান্ত কয়েক মাসের পর একটি ‘শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যত ও জবাবদিহিতা’ পাওয়ার অধিকার বাংলাদেশের জনগণের রয়েছে।

যুক্তরাজ্যের এই মন্ত্রী শনিবার দুই দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছেন। ক্যাথরিন বলেন, বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটি উন্নত গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে অন্তর্বর্তী সরকারের সংকল্পকে তিনি স্বাগত জানান। তিনি বলেন, ‘যেহেতু বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে আমাদের একটি অত্যন্ত সুদৃঢ় ও অবিচ্ছেদ্য বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে, তাই আমরা একটি শক্তিশালী অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে চাই এবং সেই গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তিপ্রস্তরটি শক্তিশালী সম্পর্কের ওপর নির্মাণ করতে চাই। পাশাপাশি আমরা অর্থনীতি বাণিজ্য থেকে নিরাপত্তা, অভিবাসন ও জলবায়ু পরিবর্তন পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রে একটি গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘এমন অনেক কিছু আছে, যা আমরা একসঙ্গে করি। আমাদের অবশ্যই একসঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে হবে।’