শিরোনাম
ঢাকা, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : দুটি পদ্ধতি অনুসরণ করে গুমের শিকার ব্যক্তিদের বাছাই করা হতো বলে প্রাথমিকভাবে দেখতে পেয়েছে তদন্ত কমিশন।
কমিশন বলেছে, এই ইস্যুতে একটি নির্দিষ্ট উপসংহারে পৌঁছানোর জন্য আমাদের কাছে এখনও পর্যাপ্ত তথ্য নেই। তবে প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গুমের লক্ষ্যবস্তু বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দুটি প্রাথমিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছিল।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিশন সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে ‘সত্যের উন্মোচন’ শিরোনামে প্রতিবেদন জমা দেয়।
প্রথম পদ্ধতিটি একটি নেটওয়ার্ক-ভিত্তিক সিস্টেমের সঙ্গে জড়িত বলে মনে হয়। এই ব্যবস্থায়, বন্দীদের প্রায়শই অন্যদের নাম বলার জন্য নির্যাতন করা হতো। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে এই ব্যক্তিদের তখন তুলে নেওয়া হয়েছিল, নির্যাতন করা হয়েছিল এবং আরো নাম বলার জন্য বাধ্য করা হয়েছিল, যার ফলে গুমের শিকার ব্যক্তিদের সংখ্যা দিয়ে একে একে বিশাল একটি চেইন তৈরি হয়েছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আমাদের এই ধরনের ঘটনার একাধিক উদাহরণ রয়েছে, যেখানে একজনের সাক্ষ্য অন্যের আটকের দিকে নিয়ে যায়।’
এ ধরনের প্রক্রিয়া থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা যখন বুঝতে পারেন যে, তাদের জোরপূর্বক জবানবন্দির কারণে অন্য নিরপরাধ ব্যক্তিরা নিখোঁজ হয়েছেন, তখন তারা প্রায়ই গভীর অপরাধবোধে ভুগছেন।
কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উদাহরণস্বরূপ, একজন ভুক্তভোগী নিজের কাছে তার কর্মকাণ্ডে এই ভেবে শান্তনা দিয়ে বলেন যে তিনি ধরে নিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ চাপের মুখে থাকা ব্যক্তিদের ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করবে। তিনি বিশ্বাস করতেন যে নিরপরাধ যে কেউ স্বাভাবিকভাবেই ছাড়া পেয়ে যাবেন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সেই ব্যক্তির মুক্তির পরেই তিনি আবিষ্কার করেন যে তিনি যে ব্যক্তিদের নাম দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে একজনকে পরবর্তীতে গুম করা হয়েছিল এবং তার মতো একই কায়দায় বন্দী করা হয়েছিল।
অপরাধবোধে কাতর হয়ে ভুক্তভোগী আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অসাবধানতাবশত জড়িত ব্যক্তিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে নিজে চেষ্টা চালায়।
কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লক্ষ্যবস্তু বাছাইয়ের দ্বিতীয় পদ্ধতিতে রাজনৈতিকভাবে সংশ্লিষ্ট বা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সরাসরি আদেশের সম্পৃক্ততা দেখা যাচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আমরা এই প্রক্রিয়ার উদাহরণ নথিভুক্ত করেছি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, নারায়ণগঞ্জের কুখ্যাত সাত খুন মামলায় আসামি তারেক সাঈদ মোহাম্মদ (র্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক) ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন, তিনি জিয়াউল আহসানের (র্যাবের তৎকালীন এডিজি অপারেশন) কাছ থেকে অনুমতি পেয়েছিলেন।
গুমের শিকার হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে মুক্তির সময় বলা হয়েছিল: ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে দ্বিতীয় সুযোগ দিচ্ছেন, তবে কিছু শর্ত আছে। রাজনীতি থেকে বিরত থাকতে হবে, দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে, পরিস্থিতির উন্নতি হলেই ফিরতে হবে। বুঝে নিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে জীবনে দ্বিতীয় সুযোগ দিচ্ছেন।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘যদিও এসব উদাহরণ লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে কিছু আশঙ্কা প্রদান করে, তবে জোরপূর্বক নিখোঁজের এই দিকটি সম্পর্কে বিশদ উপসংহারে পৌঁছাতে আরও তথ্যের প্রয়োজন।’