শিরোনাম
কুমিল্লা, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : বহুল আলোচিত চাঁদপুরের হাইমচরের মাঝিরচর এলাকায় এমভি আল বাখেরা জাহাজে সাত খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার ঘটনায় আকাশ মন্ডল ইরফানকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তাকে বাগেরহাট জেলার চিতলমারী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে হ্যান্ড গ্ল্যাভস,ব্যাগ, নিহতদের ব্যবহৃত পাঁচটিসহ সাতটি মোবাইল এবং রক্ত মাখা জামাকাপড় উদ্ধার করা হয়।
আজ বুধবার বেলা ১২টায় কুমিল্লা নগরীর শাকতলা র্যাব কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১১ এর উপ-অধিনায়ক মেজর সাকিব হোসেন।
মেজর সাকিব হোসেন জানান, গত ২৩ ডিসেম্বর চাঁদপুরে হাইমচরের মাঝিরচর এলাকায় এমডি-আল বাখেরা জাহাজে ৭ জন হত্যা ও একজন গুরুতর জখম হওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনা বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
তিনি জানান, পরবর্তীতে এ ঘটনায় এমভি-আল বাখেরা জাহাজের মালিক মাহবুব মোর্শেদ বাদী হয়ে চাঁদপুরের হাইমচর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলার পেক্ষিতে ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় নিয়ে আনতে র্যাব কাজ শুরু করে।
তিনি জানান, এরই ধারাবাহিকতায় ২৪ ডিসেম্বর রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র্যাব-১১ এবং র্যাব-৬ এর আভিযানিক দল বাগেরহাটের চিতলমারী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে হত্যার ঘটনার সাথে জড়িত আকাশ মন্ডল ইরফানকে চিতলমারী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট এলাকার জগদীশ মন্ডলের ছেলে। এ সময় তার কাছ থেকে একটি হ্যান্ড গ্ল্যাভস, একটি লোটো ব্যাগ, নিহতদের ব্যবহৃত পাঁচটি ও গ্রেপ্তারকৃত আকাশের ব্যবহৃত দুটিসহ মোট সাতটি মোবাইল এবং বিভিন্ন জায়গায় রক্ত মাখানো নীল রংয়ের একটি জিন্সপ্যান্ট উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে উক্ত ঘটনার সাথে তার সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব আরও জানায়, গত ২২ ডিসেম্বর সকালে ভুক্তভোগীরা ও গ্রেপ্তারকৃত আকাশ এমভি-আল বাখেরা জাহাজে ৭২০ টন ইউরিয়া সার নিয়ে চট্টগ্রাম হতে বাঘাবাড়ি, সিরাজগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আকাশ ঘটনার দিন সন্ধ্যায় জাহাজে রাতের খাবারের তরকারীর মধ্যে তিন পাতার ৩০টি ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয়। শুধুমাত্র সুকানি জুয়েল এবং আকাশ ছাড়া সবাই রাতের খাবার খেয়ে তাদের নিজস্ব কেবিনে ঘুমিয়ে পড়ে। রাত আনুমানিক দুইটায় আরও ৮-১০টি জাহাজের সাথে সুকানি জুয়েল এবং আকাশ তাদের জাহাজটি নোঙ্গর করে।
পরবর্তীতে সুকানি জুয়েল রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে আকাশ তার পরিকল্পনা মোতাবেক রাত সাড়ে ৩টার দিকে প্রথমে মাস্টারকে জাহাজে থাকা চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। পরবর্তীতে সে চিন্তা ভাবনা করে যে, জাহাজে থাকা বাকিরা জেনে গেলে সে আইনশঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ধরা পড়বে বিধায় একে একে সবাইকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে সকল জাহাজ তাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেলে সে নিজে জাহাজ চালাতে থাকে এবং একপর্যায়ে মাঝিরচর নামক এলাকায় জাহাজটি আটকা পড়লে পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ট্রলারে বাজার করার কথা বলে ট্রলারে উঠে পালিয়ে যায়। সে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে বাগেরহাটে চিতলমারী এলাকায় আত্মগোপনে চলে যায়। পরবর্তীতে আত্মগোপনে থাকাবস্থায় র্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃত আকাশ মন্ডলের বরাত দিয়ে র্যাব আরও জানায়, আকাশ মন্ডল প্রায় ৮ মাস যাবত এমভি-আল বাখেরা জাহাজে চাকরি করে আসছে। উক্ত জাহাজের কর্মচারীরা ছুটি ও বেতন-বোনাস সময় মতো পেতো না এবং বিভিন্ন ধরনের বিল কর্মচারীদের না দিয়ে জাহাজের মাস্টার একাই ভোগ করতো। জাহাজের মাস্টার সকল কর্মচারীর ওপর বিচার-বিবেচনা ছাড়াই জাহাজ থেকে নামিয়ে দিতো এমনকি তাদের বকেয়া বেতনও দিতো না। এ ব্যাপারে গ্রেপ্তারকৃত আসামি আকাশ জাহাজের সবাইকে প্রতিবাদ করতে বললে কেউ ভয়ে প্রতিবাদ করতো না। মাস্টারের এহেন কার্যকলাপের দরুন গ্রেপ্তারকৃত আকাশের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং এই ক্ষোভ থেকে তাকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী আনুমানিক ১৮ ডিসেম্বর আকাশ তিন পাতা ঘুমের ওষুধ কিনে নিজের কাছে রেখে দেয়। প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে উক্ত ঘটনায় সে একাই জড়িত বলে জানায়। র্যাব জানায় পরবর্তীতে অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টি আরও নিশ্চিত হওয়া যাবে।
এমভি-আল বাখেরা জাহাজে হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিরা হলেন মাস্টার গোলাম কিবরিয়া, গ্রিজার মো. সজিবুল ইসলাম, লস্কর মো. মাজেদুল ইসলাম, শেখ সবুজ, সালাউদ্দিন, আমিনুর মুন্সী ও বাবুর্চি রানা কাজী। এ ছাড়া আহত হয়েছেন সুকানি মো. জুয়েল।