শিরোনাম
ঢাকা, ১ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): বিমান টিকেট থেকে রাজস্ব বাড়াতে নতুন অধ্যাদেশে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। খ্রিষ্টীয় ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নতুন বছরের প্রথম দিন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ বুধবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, দ্য এক্সাইসেজ অ্যান্ড সল্ট অ্যাক্ট ১৯৪৪ সংশোধন করে দ্য এক্সাইসেজ অ্যান্ড সল্ট (অ্যামেন্ডমেন্ট) অর্ডিন্যান্স ২০২৫-এর খসড়া প্রস্তুত করেছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। এর উদ্দেশ্য হলো- কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনসহ কর-জিডিপির অনুপাত বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিমান টিকেটের আবগারি শুল্ক যৌক্তিকীকরণ করা।
এছাড়া অব্যাহতির সংস্কৃতি পরিহারকরে ভ্যাটের আওতা বাড়ানো, হ্রাসকৃত হার ক্রমান্বয়ে সংকোচন করে আদর্শ হারে উন্নীতকরণ, কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনসহ কর-জিডিপির অনুপাত বৃদ্ধির লক্ষ্যে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২-এর কতিপয় সংশোধনী এনে ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধনী) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়াও উপদেষ্টা পরিষদ-বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়েছে।
এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের আলোকে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) বাস্তবায়নের নির্দেশনা দিয়েছে সরকার।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণভাবে সরকারি কর্মসম্পাদনে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি নিশ্চিতকল্পে বিদ্যমান ‘বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ)’ কাঠামো পুনর্গঠনের উদ্দেশে অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বিস্তারিত পর্যালোচনা করে মতামতসহ প্রতিবেদন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাতে হবে।
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটির দাখিল করা প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে ‘সরকার সন্তুষ্ট’ বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এরপরও এটি যে দুর্ঘটনা সে বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত হতে কিছু নমুনা বিদেশে নিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
আগুন লাগার ঘটনাটি ‘দুর্ঘটনা’ হলে আলামত বিদেশে পাঠানো হচ্ছে কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে রিজওয়ানা হাসান বলেন, আপনি যে প্রশ্নটা করলেন, এই প্রশ্নের সন্দেহাতীত জবাবের জন্য কিছু নমুনা বিদেশে পাঠানো হচ্ছে। একটি জিনিস খেয়াল করতে হবে, আসলে যে কোনো একটি ঘটনার পর আমরা কতগুলো দৃষ্টিবোধ, কতগুলো মতামত ও কতগুলো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। তারপর ভিন্ন কোনো কথা শুনলে ওটা আর আমরা মানতে চাই না।
তিনি বলেন, আজ যারা বিশেষজ্ঞ ছিলেন তারা আমাদের ক্লোজআপে দেখিয়েছেন কীভাবে আগুনের সূত্রপাত এবং সচিবালয় ভবনগুলোর নির্মাণের কারণে কীভাবে এটি একটি অবস্থান থেকে আরেকটি অবস্থানে ছড়িয়ে পড়ে। যে কুকুরটির কথা বলা হয়েছে সেটি এর আগে ওই ফ্লোরে গেছে। সে স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে একটি চেয়ারের ওপরে কুশনে গিয়ে ঘুমায়।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, অগ্নিকাণ্ডের কিছু নমুনা বিদেশে পাঠানো হয়েছে। কারণ আমরা যেন সব রকমের সন্দেহের ঊর্ধ্বে থাকতে পারি। সত্যিই যদি এটি নাশকতা হতো, তাহলে ঘটনাটি কী রকম ঘটতে পারতো, উনারা সেটি দেখিয়েছেন। কোন জায়গা থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূচনা হয়েছে- স্পষ্ট করে, স্লো মোশনে তারা দেখিয়েছেন। আমার ধারণা এগুলো আপনাদের সবার কাছেই অ্যাভেইলেবল আছে।
তিনি আরও বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে সেটি নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। প্রথম কথা হচ্ছে, অগ্নিকাণ্ডটা আসলে খুবই ভীতিকর, আমাদের অনেক বড় দুশ্চিন্তার কারণ। এখানে কিন্তু আমরাই অফিস করি, তাই কোনো কিছু হলে প্রথম আঁচটা আমাদের গায়ের ওপরই পড়বে। যারা ওখানে অফিস করেন, তাদের জন্য এটি একটি সাংঘাতিক ট্রমাটাইজিং ব্যাপার। আমরা আমাদের নিরাপত্তার স্বার্থে শতভাগ নিশ্চিত হতে চাইবো। আমরা কোনো বায়াসড হয়ে এ কমিটি করিনি। আমরা বুয়েটকে বলেছি আপনারা তিনজন বিশেষজ্ঞ দিন। বুয়েট নিরপেক্ষভাবে দিয়েছে। এরপর আরও আটজন বিশেষজ্ঞ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাই ভরসা না করার কোনো কারণ আছে বলে আমরা মনে করি না।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে অর্ন্তর্বতী সরকার এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে নির্বাচনে কোন দল অংশগ্রহণ করবে আর কোন দল অংশগ্রহণ করবে না, এটাতো আমরা বলে দেব না। যে দল অংশগ্রহণ করতে চায় সে দল করবে। কোন দল কেমন করে অংশগ্রহণ করবে সেটা তো সেই দলকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে বাধা নেই বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার যে বক্তব্যে দিয়েছেন সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উপদেষ্টা বলেন, এ সমস্ত কথা আসলে নির্বাচন কমিশন থেকেই আসতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে যদি আপনারা কোনো অবস্থান দেখতেন সরকার এই দল নিষিদ্ধ করছে, তখন আপনারা এই প্রশ্নটা সরকারকে করতে পারতেন। তাছাড়া কোন দল নির্বাচন করবে না করবে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আসলে নির্বাচন কমিশন দেবে।
তাহলে কি আওয়ামী লীগের নির্বাচনে আসা, না আসা সরকারের ওপর নির্ভর করছে না? জানতে চাইলে রিজওয়ানা হাসান বলেন, এখন পর্যন্ত সরকার এই বিষয়ে কোনো মতামত জানায়নি, কোনো অবস্থান নেয়নি যে আওয়ামী লীগকে আমরা নিষিদ্ধ করব। এ রকমতো কোনো অবস্থান নেয়নি। আমরা যেটি দেখেছি যে হাইকোর্টে এ রকম একটি বা দুটি পিটিশন হয়েছিল, সেগুলোর একটি প্রত্যাহার করা হয়েছে, আরেকটি হাইকোর্ট রিজেক্ট করে দিয়েছে।
শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানো নিয়ে এক প্রশ্নে রিজওয়ানা হাসান বলেন, আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। তাকে ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে আমরা আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছি। ভারতের সঙ্গে আমাদের একটি চুক্তি আছে সেটিও আমরা বলেছি, সেখানে একটি ব্যতিক্রম আছে সেটিও আমরা বলেছি।
তিনি বলেন, ভারত কি অবস্থান নেবে, একটি অবস্থান প্রাথমিকভাবে নেয়া যায়, আবার চূড়ান্ত একটি অবস্থানের দিকেও দেশগুলো যেতে পারে। সেগুলো ভবিষ্যতের জন্যই আমাদের ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু আমাদের অবস্থান হচ্ছে আমরা চাইব শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বিচার করতে। যদি উপস্থিতিতে বিচার না হয় তাহলে যেভাবে বিচার প্রক্রিয়া করতে হয় সেভাবেই করব।
এই উপদেষ্টা বলেন, নতুন বছরে অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার হবে তিনটি। প্রথমত জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ড ও বর্বরতার বিচার নিশ্চিত করা। দ্বিতীয়ত, যে সমস্ত সংস্কার প্রস্তাবগুলো আসবে সেগুলোর বিষয়ে রাজনৈতিক মতৈক্য গড়ে সেগুলো সংস্কার করা, আরেকটি হচ্ছে নির্বাচনের একটা পরিষ্কার রোডম্যাপ ডেভেলপ করা।