শিরোনাম
ঢাকা, ৬ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেছেন, দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ এমন একটি শাসনের ছায়াতলে ছিল যা ‘নির্বাচনকে প্রহসন, ভিন্নমতকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা ও সংবাদমাধ্যমকে তোতা পাখির মতো হরবোলা কারাওকে মেশিনে পরিণত করেছিল।’
তিনি বলেন, ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকার শুধু দেশ চালিয়েই তুষ্ট থাকতে পারেনি, তারা এর মালিক হয়ে উঠতে চেয়েছিল; চেয়েছিল সত্যের ওপর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ নিতে।
নিজের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার করা এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘তবু অনেক ভারতীয় সংবাদমাধ্যম তাকে এমনভাবে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছে যেন তিনি শাড়ি পরা ইন্দিরা গান্ধীর আদলে এক দরদী ত্রাতা, পুনর্জন্মপ্রাপ্ত ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল।’
উপ-প্রেস সচিব বলেন, ভারতীয় গণমাধ্যমে শেখ হাসিনাকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার রক্ষক, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির রানী আর সন্ত্রাসবিরোধী প্রবক্তা হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন ‘তার নিখুঁতভাবে নির্মিত বয়ানের ফাঁক-ফোকরগুলো সযত্নে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। তার আমলের গুম, টুঁটি চেপে ধরা গণমাধ্যম এবং কারচুপির নির্বাচন দেখে এমনকি সবচেয়ে ঝানু স্বৈরশাসকও লজ্জা পাবে।’
কিন্তু আপনি, মহিমান্বিত করার মতো নায়িকা পেয়ে গেলে আর তথ্য নিয়ে মাথা ঘামাবেন কেন, এই তো?
এটাকে নিছক বন্ধুত্ব বলে ভান করাও যায় না উল্লেখ করে অপূর্ব বলেন, ‘ভারতীয় রাজনীতির ব্রাহ্মণরা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশকে অনুগত অনুজ হিসেবে দেখে আসছে, যারা এমন একটি জাতি যাদের তিরস্কার করা যায়, কব্জা ও নিয়ন্ত্রণ করা যায়।’
শেখ হাসিনা এই খোপে বেশ মানানসই বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘হাসিনা আপনাদের যোগাযোগ চুক্তি, সীমান্ত চুক্তি ও নিজের দেশের অভ্যন্তরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে হরদম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে রেখেছিলেন। বিনিময়ে আপনারা তার স্বৈরাচারী প্রবণতার দিকে অন্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়েছেন, তার রাজত্বকে গণতন্ত্রের একটি দীর্ঘ ও গৌরবময় ‘দেবী অর্চনা’ হিসাবে দেখেছেন।’
অপূর্ব বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার যখন জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা ও সত্যিকারের জনসেবার আদর্শে প্রাণিত হয়ে নতুন পথে যাত্রা করেছে, তখন আপনারা ভোল পাল্টে ফেলেছেন। হুট করে আমাদের ‘স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি’, ‘পদ্ম বনে মত্ত হাতি’ এবং ‘পাঠান’ সিনেমার পরবর্তী খলনায়ক হিসেবে চিত্রিত করছেন।
পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘ভুলে গেলে চলবে না, হাসিনা যে গণতান্ত্রিক অধিকারগুলোকে পদদলিত করেছিল তা পুনরুদ্ধার করাই আমাদের লক্ষ্য। আমাদের ম্যান্ডেট হলো- সে যা ভেঙেছে, তা গড়া।’ তবে এখানে একটা গোপন কথা আছে; তা হলো- বাংলাদেশ কখনো ভারতের দাবার গুটি নয়, কখনো ছিলও না।
আমরা এখানে আপনাদের ভূ-রাজনৈতিক রাগিনীতে ধুয়া ধরতে আসিনি। আর আপনাদের অপপ্রচারে সিল মোহর দিতেও আসিনি। উপ-প্রেস সচিব বলেন, ‘আমরা এমন একটি দেশ, যার আছে নিজস্ব স্বপ্ন, আর নিজস্ব চ্যালেঞ্জ। আর হ্যাঁ, আমাদের রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য: নির্ভীক, দুর্বিনীত ও অবিস্মরণীয়।
ভারতীয় গণমাধ্যমে নিজের বন্ধুদের অতি পক্ষপাত পরিহার করার পরামর্শ দিয়ে অপূর্ব বলেন, ‘কোনো নেতার প্রতি আনুগত্যকে জাতির প্রতি আনুগত্য ভাবার ভুল করবেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আর আমরা? আমরা আরও ভালো কিছু- এমন একটি ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে থাকব, যেখানে গণতন্ত্র কেবল পত্র নয়, মূল বৃক্ষ।’