বাসস
  ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০:৪৩

অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাসে আইন মন্ত্রণালয়ের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম

আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। ফাইল ছবি

\ দিদারুল আলম \

ঢাকা, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ (বাসস) : জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের ছয়মাস পূর্ণ হতে যাচ্ছে কাল ৮ ফেব্রুয়ারি। এই সময় সরকার বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী ও যুগোপযোগী করতে সংস্কারসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার দাবি দীর্ঘদিনের। এটি নিয়ে জাতীয় ঐক্যমত রয়েছে। পৃথক সচিবালয়ে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠায় আইন তৈরি চূড়ান্ত পর্যায়ে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, ৩৬ ধরনের ডকুমেন্ট আইন মন্ত্রণালয় সত্যায়ন করতো। ম্যানুয়ালি এ কাজ সম্পাদনের ফলে জনসাধারণকে অনেক হয়রানি পোহাতে হয়েছে। তা নিরসনে এ কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে অনলাইন হচ্ছে। এতে করে জনগণের অর্থ ও সময়ের সাশ্রয় হচ্ছে। তিনি বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও ভিন্নমত দমনে দায়ের করা ‘গায়েবি’ মামলা চিহ্নিত করা হয়েছে। মামলাগুলো প্রত্যাহারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

আইন উপদেষ্টা বলেন, বিবাহ সম্পাদনে আরোপিত একটি কর ছিল। আইন মন্ত্রণালয় এই অযৌক্তিক কর আরোপ বাতিল করেছে।

আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, সাইবার আইন প্রত্যাহার কিংবা সংশোধন নিয়ে কাজ চলমান। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলের মতামত রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ডিটেইল চিন্তা করছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। তবে ওই আইনে যে মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে তা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

উপদেষ্টা বলেন, সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগ সংক্রান্ত অধ্যাদেশের গেজেট নোটিফিকেশন হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দলীয় বিবেচনায় অযোগ্য লোকদের বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হতো। যোগ্য বিচারক নিয়োগের সঙ্গে দেশের ১৮ কোটি মানুষের সুবিচার পাবার নিশ্চয়তা নিহিত। অভিজ্ঞ দল নিরপেক্ষ প্রকৃত যোগ্য ব্যক্তিরা যেন বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান এ চাহিদা ও দাবি ছিল দীর্ঘ দিনের। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন- ১৯৭৩ অংশীজন ও বিশেষজ্ঞের মতামত নিয়ে সংশোধন করা হয়েছে।

এছাড়াও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ছয় মাসে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেয়া অন্যান্য কার্যক্রম তুলে ধরা হলো:

বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন দাখিল:

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন বুধবার হস্তান্তর করা হয়। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করেন। 

পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে সংস্কার প্রস্তাবের সারসংক্ষেপ গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। মোট ২৮ দফা প্রস্তাবের শুরুতেই রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগ ও শৃঙ্খলা সংক্রান্ত অংশ। বিচার বিভাগ বিষয়ে জন আকাঙ্ক্ষা পূরণের লক্ষ্যে ২৮ টি বিষয়ের উপরে সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। 

স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব করার লক্ষ্যে ৩ অক্টোবর বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। 

বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময়সহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষের মতামত নিয়ে সরকার কর্তৃক বেঁধে দেয়ার সময়ের মধ্যেই সংস্কার কমিশন প্রস্তাব ও সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন দাখিল করেছে। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ এ কমিশনকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করে।

অধঃস্তন আদালতের সহায়ক কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা:

অধঃস্তন আদালতের সহায়ক কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে।

বিদ্যমান আইন যুগোপযোগী করা:
দেওয়ানি ও ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট আইনসমূহ যুগোপযোগী করতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে আইন ও বিচার বিভাগ।

বিচার ব্যবস্থা ডিজিটালাইজেশন:
মডেল ই-কোর্ট স্থাপনে এবং মডেল সাব-রেজিস্ট্রি অফিস স্থাপনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। উচ্চ আদালতে ই-ফাইলিং চালু হয়েছে।

এটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠা :
স্থায়ী সরকারি এটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত এবং সরকারি আইন কর্মকর্তাদের আচরণবিধি যুগোপযোগীকরণে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

অবকাঠামো নির্মাণে সিদ্ধান্ত :
দেশের ২৩ জেলায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট; ৬টি চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট; ৫ টি মহানগর দায়রা জজ ১০ টি জেলা জজ আদালত ভবন নির্মাণ এবং ২৩ টি জেলা জজ আদালতের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

পাবলিক সার্ভিস ইনোভেশন ডিজিটালাইজেশনে বিভিন্ন কার্যক্রম:
ডেভেলপমেন্ট পার্টনারসদের সহায়তায় একটি মডেল ই-কোর্ট স্থাপন করা। যেখানে মামলা দায়ের থেকে শুরু করে রায় প্রকাশ পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি ধাপের কার্যক্রম ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে। এই মডেল ই-কোর্টের অভিজ্ঞতা নিয়ে পরবর্তীতে সারাদেশে ই-কোর্ট প্রতিষ্ঠা করা হবে।

মডেল সাব রেজিস্ট্রি অফিস স্থাপন:
ডেভেলপমেন্ট পার্টনারস এর সহায়তায় একটি মডেল সাব-রেজিস্ট্রি স্থাপন করা। যেখানে নিবন্ধনের প্রক্রিয়াটি অনলাইনে সম্পাদিত হবে। ৮ টি বিভাগীয় জেলায় পাইলট ভিত্তিতে আইনগত তথ্য সেবা কেন্দ্র চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সমন্বিতভাবে পরীক্ষামূলকভাবে অনলাইনে সত্যায়ন সেবা চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিচার বিভাগে বিচারক নিয়োগ:
বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগে ৫ জন বিচারপতি, হাইকোর্ট বিভাগে ২৩ জন বিচারপতি এবং অধঃস্তন আদালতে ১০৯ জন বিচারক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আইন ও বিচার বিভাগের বিভিন্ন অনুবিভাগ, অধিশাখা ও শাখার কার্যক্রমের পুনবিন্যাস এর বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টে কর্মকর্তা নিয়োগ:
এটর্নি জেনারেল অফিসে ২৩৯ জন আইন কর্মকর্তা (অ্যাটর্নি জেনারেল, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল) নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে।

অধস্তন আদালতে আইন কর্মকর্তা নিয়োগ:
বিজিবির বিস্ফোরক মামলার জন্য ২০ জন ও  দেশের সকল জেলার অধস্তন আদালতসমূহ ৪ হাজার আইন কর্মকর্তা ইতোমধ্যে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে।

হয়রানিমূলক ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার:
গত ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন দমনে দায়েরকৃত প্রায় সকল ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে।

বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা ও পরিবারের সদস্যদের সম্পদ বিবরণী:
বিচারকগণ ও তাদের পরিবারের সদস্যগণের এবং রেজিস্ট্রেশন বিভাগের কর্মকর্তাগণ তথা সাব-রেজিস্ট্রার, জেলা রেজিস্ট্রার ও নিবন্ধন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাগণ ও তাদের পরিবারের সদস্যগণের সম্পদের হিসাব বিবরণী ইতোমধ্যে দাখিল করা হয়েছে। আইন ও বিচার বিভাগ ও এর অধীন দপ্তর সংস্থার কর্মচারীদের অর্জিত সম্পদের বিবরণী দাখিল করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

গুম বিরোধী সনদ ও কমিশন:
গুম বিরোধী আন্তর্জাতিক সনদ অনুসমর্থনে আইন মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করেছে। বিগত সময়ে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান ও গুমে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নের নিমিত্ত তদন্ত কমিশন গঠনে আইন ও বিচার বিভাগ প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করেছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বাসস'কে জানান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে জুলাই-আগস্টে সংঘঠিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার একাধিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত হবে। এরপর আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলে তার কয়েক মাসের মধ্যেই মামলা অনুযায়ী একে একে বিচার শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম জানান, জুলাই-আগস্টে সংঘটিত হত্যা ও গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন বরাবর এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ শতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। আরও ১৭ টি মামলায় ১১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন ট্রাইব্যুনাল। যাদের মধ্যে ৩৫ জন কারাগারে রয়েছেন। এই ট্র্যাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রমের ১৪ জন প্রসিকিউটর ও ১৭ জন তদন্তকারী কর্মকর্তা যুক্ত রয়েছেন বলে জানান প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম।

প্রসিকিউশন নিয়োগ:
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট তাজুল ইসলামকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর হিসেবে ৭ সেপ্টেম্বর  নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। আরো ১৪ আইনজীবীকে প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

তদন্ত সংস্থা পুনর্গঠন :
গত ১৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা পুনর্গঠন করা হয়।
তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তাগণ হলেন: পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত এডিশনাল ডিআইজি মোঃ মাজহারুল হক, পুলিশ সুপার (অবঃ) মুহম্মদ শহিদুল্যাহ চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আলমগীর, মোহাঃ মনিরুল ইসলাম, মোঃ জানে আলম খান, সহকারী পুলিশ সুপার সৈয়দ আব্দুর রউফ, পুলিশ পরিদর্শক মোঃ ইউনুস, মোঃ মাসুদ পারভেজ, মুহাম্মদ আলমগীর সরকার ও মোঃ মশিউর রহমান। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) এ্যাক্ট-১৯৭৩ এর সেকশন ৮ (১) প্রদত্ত  ক্ষমতাবলে এ এ্যাক্টের সেকশন ৩-এর অপরাধসমূহের তদন্ত পরিচালনায় তদন্ত সংস্থা পুনর্গঠন করা হয়। এখন ১৭ জন কর্মকর্তা তদন্ত সংস্থায় যুক্ত রয়েছেন।

অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন:
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গত ১৪ অক্টোবর পুনর্গঠন করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদার। ট্রাইব্যুনালে সদস্য হিসেবে রয়েছেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন:
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করা হয় ২৪ নভেম্বর। আইন ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ থেকে অধ্যাদেশের গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ২০ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা কক্ষে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে খসড়া অনুমোদন এবং অধ্যাদেশ জারির সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে বিশিষ্ট আইনজীবী, বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনের সাথে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্টকে যুগোপযুগী করতে মতবিনিময় করে আইন মন্ত্রণালয়।

ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যক্রম শুরু:
গত ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে ৫ আগস্ট দেশ থেকে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে টানা প্রায় ১৬ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে।

গত জুলাই-আগস্টে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকার ও তার অনুগত প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত করে। জাজ্জল্যমান এ অপরাধের বিচার অনুষ্ঠিত হবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে।

জুলাই-আগস্টে সংঘটিত হত্যা ও গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউসন বরাবর এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ শতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। আরও ১৭ টি মামলায় ১১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন ট্রাইব্যুনাল। যাদের মধ্যে ৩৫ জন কারাগারে রয়েছেন।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে ৫ আগস্ট দেশ থেকে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে টানা প্রায় ১৬ বছরের শাসনের পতন হয়। এরপর ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ গ্রহণ করে। কাল ৭ জানুয়ারি, শনিবার এ সরকারের ৬ মাস পূর্ণ হচ্ছে।

বৈষম্যবিরোধী টানা ৩৬ দিনের আন্দোলন নির্মূলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, তৎকালীন আওয়ামী লীগ দলীয় ক্যাডারদের হামলায় হাজারের বেশি ছাত্র-জনতা শহিদ হয়েছে। গুলিতে আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে ৫ শতাধিক। চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন চার শতাধিক। আহত হয়েছেন ২৩ হাজার ছাত্র জনতা। তাদের অনেকে এখনও চিকিৎসাধীন। জাজ্বল্যমান এ অপরাধের বিচার অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে।