বাসস
  ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯:৫০

ব্যাংক লুটপাটের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম আজ ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। ছবি: পিআইডি

ঢাকা, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): ব্যাংকের টাকা লুটপাটের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি: সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যত করণীয়’ বিষয়ক এক সভায় এই নির্দেশ দেন।

পরে রাজধানীর হেয়ার রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান।

শফিকুল আলম বলেন, ‘যারা ব্যাংক ডাকাতির সঙ্গে জড়িত, যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে, তাদেরকে খুব দ্রুত আইনের আওতায় আনার কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন- তারা যেন আইনের আওতার বাইরে না থাকে। যে করেই হোক তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে।’

অধ্যাপক ইউনূসের বরাত দিয়ে প্রেস সচিব আরও বলেন, ‘যারা ব্যাংকের টাকা লুট করেছেন তারা আসলে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের টাকা লুটাপাট করেছেন। তাই যেভাবেই হোক তাদেরকে আইনের আওতায় আনা জরুরি।’

সভায় অধ্যাপক ইউনূস অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। তবে তিনি বলেন, ‘আমাদের আরও ভাল করা দরকার। আমরা খুব বাজে অবস্থায় ছিলাম, সেই জায়গা থেকে এখন ভালো জায়গায় আসছি। তবে আরও ভালো জায়গায় নিতে হবে, এটা আমাদের চ্যালেঞ্জ।’

বেক্সিমকোর যে জটিলতা রয়েছে, তার সুষ্ঠু সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ প্রদান করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার অধ্যাপক ইউনূসের বরাত দিয়ে বলেন, ‘প্রবাসী আয়ে ২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অভিবাসন বাড়ছে। তবে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, এখনই এটা নিয়ে উৎসব করার কিছু নেই। এ খাতে এখনও অনেক সম্ভাবনা রয়ে গেছে।’ প্রধান উপদেষ্টা এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।

এছাড়া অধ্যাপক ইউনূস অভিবাসন বৃদ্ধির লক্ষ্যে যেসব দেশে বর্তমানে বাংলাদেশি অভিবাসনগামীদের ভিসা বন্ধ রয়েছে, সেগুলো যেন দ্রুত চালু করা যায় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।

সভায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। এখন আমরা একটা স্থিতিশীল জায়গায় আসছি। বর্তমানে যে বৈদেশিক রিজার্ভ রয়েছে, তা দিয়ে সাড়ে তিন মাসের বৈদেশিক দায় মেটানো সম্ভব। রিজার্ভের অবস্থা সামনে আরও ভাল হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, ব্যাংকের চুরি হওয়া টাকা উদ্ধারে ইতোমধ্যে এস আলম গ্রুপের সব সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি নগদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

সভায় গভর্নর আরও জানান, ব্যাংক থেকে টাকা লুটপাট করেছেন এমন ১২ জন অলিগার্লকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরা কীভাবে টাকা নিয়েছেন সেগুলো বের করতে আমরা বিদেশি বিশেজ্ঞদের সহযোগিতা নিচ্ছি। আন্তর্জাতিক প্রটোকল মেনে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারের সকল সংস্থা এ বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে সহযোগিতা প্রদানের লক্ষ্যে যুক্তরাজ্যের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ঘুরে গেছে, সুইজারল্যান্ডের একটি প্রতিনিধিদলও বাংলাদেশে আসছে। এর বাইরে আমরা যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সাথে কথা বলছি।

গভর্নর বলেন, ‘সরকারের উদ্দেশ্য হচ্ছে- বাংলাদেশ থেকে ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের যে অর্থ পাচার হয়েছে, সেটা ফিরিয়ে আনা। এই টাকা কারা নিয়েছেন, কোথায় গেছে- এগুলো যদি চিহ্নিত করতে পারি, তাহলে যে দেশে টাকা পাচার হয়েছে, সেখানে এই টাকার সম্পদ জব্দ করে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা থাকবে।’