বাসস
  ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩:২২

দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে : ড. সালেহউদ্দিন

আজ সচিবালয়ের মিডিয়া সেন্টারে ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের ভূমিকা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। ছবি: পিআইডি

ঢাকা, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ (বাসস): অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি এখন স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে, যদিও তা পুরোপুরি নয়।

আজ রোববার বাংলাদেশ সচিবালয়ের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত “বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের ভূমিকা” শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় অর্থ উপদেষ্টা এ কথা বলেন। 

বাংলাদেশ সচিবালয় রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) এবং ট্যাপট্যাপ সেন্ড যৌথভাবে এই সভার আয়োজন করে। বিএসআরএফ সভাপতি ফসিহ উদ্দিন মাহতাবের সভাপতিতে সাধারণ সম্পাদক মাসুদুল হক অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। ট্যাপট্যাপ সেন্ড সমন্বয়কারী মাহমুদ মনিরও বক্তব্য রাখেন।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমাদের সক্ষমতা, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ভারসাম্য কমবেশি স্থিতিশীল, যদিও কয়েক মাস আগে চলতি হিসাবের ভারসাম্য এবং আর্থিক হিসাব নেতিবাচক ছিল। রেমিট্যান্সে প্রবাহ ভালো এবং রপ্তানি আয়ের কারণে চলতি হিসাবের ভারসাম্য এবং আর্থিক হিসাব এখন ইতিবাচক। যদিও সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা কিছুটা পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, দেশের অনেক বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ একদিকে রাজস্ব আহরণের পক্ষে কথা বলছেন, অন্যদিকে কর ও ভ্যাট কমানোর কথা বলছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো দেশে কর-জিডিপি অনুপাত খুবই কম।

ড. সালেহউদ্দিন বলেন, দেশে এখন প্রতি মাসে ২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি রেমিট্যান্স আসছে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে এখন আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে এবং তারা এখন বেশিরভাগই হুন্ডির পরিবর্তে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ পাঠাচ্ছে।

তিনি বলেন, বিদেশে যাওয়া বেশিরভাগ বাংলাদেশি অদক্ষ, অন্যদিকে বিদেশে থাকা বেশিরভাগ বাংলাদেশি সাধারণত পরিচ্ছন্নতাকর্মীর মতো নিম্নস্তরের কাজ করে থাকেন। সেখানে ভারতীয়, শ্রীলঙ্কান এবং পাকিস্তানিরা ম্যানেজার এবং সহকারী ব্যবস্থাপক হিসেবে ডেস্ক জব করেন। কারণ তাদের শিক্ষাগত পটভূমি এবং ভাষাগত দক্ষতা ভালো। যদি আমরা বিদেশে যেতে ইচ্ছুক চাকরিপ্রার্থীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করতে পারি, তাহলে তারা আরও বেশি আয় করতে পারবে।

প্রবাসীরা সাধারণত তাদের আত্মীয়স্বজন, নিকটাত্মীয় এবং নির্ভরশীলদের জন্য অর্থ পাঠান। এ জন্য তারাই প্রকৃত নায়ক। কিন্তু তাদের বড় চ্যালেঞ্জ হল যে অনেক প্রবাসী তাদের কষ্টার্জিত অর্থ উৎপাদনশীল খাতে বা মোটা অঙ্কের সঞ্চয়ে ব্যবহার করেন না। তারা ভালো রিটার্ন বা 'ব্যাক আপ'-এর কথা না ভেবে গ্রামে ভবন নির্মাণের মতো অ-উৎপাদনশীল খাতে ব্যয় করেন। 

এ সময় অর্থ উপদেষ্টা আরও দক্ষ কর্মীদের স্বচ্ছভাবে পাঠানোর উপরও জোর দেন। যাতে তারা বিদেশে একটি সুন্দর জীবনযাপন করতে পারে। এনিয়ে অতীতে ব্যর্থতা ছিল এবং আমরা সেগুলিকে সুবিন্যস্ত করার চেষ্টা করছি।

ড. সালেহউদ্দিন বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পরবর্তী সরকারের সামনে একটি চিহ্ন রেখে যেতে চায়। আমরা  কিছু সংস্কার কাজ করে যেতে চাই।  হয়ত সব সংস্কার বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হব না। আমরা কিছু স্বল্প ও মধ্যমেয়াদী সংস্কার বাস্তবায়ন করে যাবো। দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারগুলি রাজনৈতিক বিষয় এবং পরবর্তীতে যারা আসবে তারা এটি বস্তাবায়ন করবে। এ বিষয়ে তাদের দায়িত্ব নিতে হবে। 

ভ্যাট বৃদ্ধির বিষয়টি সম্পর্কে তিনি বলেন, সরকার ইতিমধ্যে কিছু জিনিসের ওপর ভ্যাট কমিয়েছে, কিন্তু যদি সমস্ত জিনিসের উপর বর্ধিত ভ্যাট কমানো হয়, তাহলে রাজস্ব আয় কীভাবে বাড়বে।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফ সরকারকে স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সামাজিক সুরক্ষা জালের জন্য বরাদ্দ কমানোর পরামর্শ দেয়নি। আমরা এই ধরনের খাতে বরাদ্দ কমাব না। কিন্তু শেষ কথা হল, কেউ কেউ বলে যে কিছুই হয়নি... আমরা খুবই অদক্ষ। এটা সত্য নয়। আমরা অনেক কিছুই করেছি।

অবশ্যই কিছু ঘটছে। আমরা উত্তরাধিকারসূত্রে যা পেয়েছি, তাতে (অর্থনীতির ভেতরে) একটা বড় আঘাত লেগেছে। আমরা তা উদ্ধার করার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, উন্নয়ন অংশীদাররা সরকারের কর্মক্ষমতায় খুশি। কারণ আইএসডিবি বাংলাদেশকে সার আমদানির জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে চায়। 

ইউনিভার্সাল পেনশন স্কিমের প্রবাসী স্কিমের বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, নরওয়ে, সুইডেন এবং নেদারল্যান্ডসের মতো নর্ডিক দেশগুলো সেরা কল্যাণমূলক রাষ্ট্র। আমরা সার্বজনীন পেনশন স্কিমকে আরও সময়োপযোগী করার চেষ্টা করছি। 

রেমিট্যান্সের ওপর প্রণোদনা বাড়ানোর জন্য সরকারের কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, এই মুহূর্তে বিস্তারিত বলা যাবে না। 

তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যেই গত ডিসেম্বরে এডিবি থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার এসেছে। যেখানে বিশ্বব্যাংকের জুনে আরও ৫০০ মিলিয়ন ডলার দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি আইএমএফও জুনে তাদের সহায়তা প্রকাশ করবে। 

তিনি বলেন, আমাদের সম্পদের ঘাটতি বিশাল এবং আমাদের অবশ্যই সম্পদের প্রয়োজন। যদি আমাদের ঋণ সেবার দায় বৃদ্ধি পায়, তাহলে আমরা আবার চাপের মধ্যে থাকব। তিনি বলেন, ঋণ পরিশোধে  আমরা কখনও খেলাপি হইনি এবং কখনও খেলাপি হবও না।

অর্থ উপদেষ্টা আরো বলেন, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি খারাপ নয়। আমরা অবশ্যই একটি কল্যাণমুখী এবং ন্যায্যতা ভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ে তোলার চেষ্টা করব।

ড. সালেহউদ্দিন বলেন, তার লক্ষ্য ছিল আর্থিক এবং ব্যাংকিং খাত ঠিক করা এবং খেলাপি ঋণ বা নন-পারফর্মিং লোনের (এনপিএল) প্রবণতা কমানো।

ট্যাপট্যাপ সেন্ড সমন্বয়কারী মাহমুদ মনির বলেন, এটি সম্পূর্ণরূপে একটি মোবাইল অ্যাপ পরিষেবা যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে বাংলাদেশে, আফ্রিকা, এশিয়া এবং ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে নিরাপদে এবং দ্রুত অর্থ পাঠানো যেতে পারে।