শিরোনাম
ঢাকা, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে হজ সেবাদানকারী কোম্পানির সাথে সংশ্লিষ্ট এজেন্সি মালিক ও পরিচালকদের ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সকল চুক্তি সম্পাদনের নির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, চুক্তি সম্পাদনের সময় আর বৃদ্ধি করা হবে না। বাংলাদেশ থেকে হজের জন্য নিবন্ধিত কোন ভাই-বোন এজেন্সির অবহেলায় হজব্রত পালন করতে না পারলে, তার দায় সংশ্লিষ্ট এজেন্সিকে নিতে হবে।
আজ ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি একথা বলেন।
এ বছর মোট ৮৭ হাজার ১শ’ জন হজ যাত্রী নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে ৫ হাজার ২শ জন সরকারিভাবে ও ৮১ হাজার ৯শ জন বেসরকারিভাবে হজে যাবেন।
উপদেষ্টা বলেন, সৌদি সরকারের বেঁধে দেওয়া সময় ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই মিনায় ও আরাফায় তাঁবু ও ক্যাটারিংয়ের জন্য সার্ভিস কোম্পানীর সাথে চুক্তি, বাড়ি/হোটেল কর্তৃপক্ষের সাথে চুক্তি, পরিবহন কোম্পানীর সাথে চুক্তি এবং ক্যাটারিং নিতে আগ্রহী হলে ক্যাটারিং সেবাদানকারী কোম্পানির সাথে চুক্তিগুলো সম্পাদন করতে হবে।
তিনি বলেন, গত ১২ জানুয়ারি ২০২৫ সৌদি সরকারের সাথে বাংলাদেশ সরকারের হজ চুক্তি সম্পাদিত হয়। সৌদি সরকারের পক্ষে সে দেশের হজ ও উমরাহ মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে আমি এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করি। আমরা ইতোমধ্যেই সৌদি সরকারের চাহিদা মাফিক হজযাত্রী প্রতি ১ লাখ ৫৭ হাজার ৩৯১ টাকা হিসেবে ১ হাজার ২৮৫ কোটি টাকার সমপরিমাণ সৌদি রিয়াল প্রেরণ করেছি।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ ও উমরাহ বিধিমালা ২০২২-এ হজযাত্রীদের জন্য বাড়ি ভাড়া করার লক্ষ্যে ধর্ম সচিবের নেতৃত্বে ১২ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি রয়েছে। এ কমিটি প্রয়োজনে সদস্য কো-অপ্ট করতে পারে।
এ বছর এই কমিটিতে সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের ২ জন ও জেদ্দা কনস্যুলেটের ২ জন প্রতিনিধি কো-অপ্ট করা হয়।
এদের মধ্যে সৌদি দূতাবাসের ডিফেন্স এটাশে ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিও ছিলেন। এরূপ শক্তিশালী একটি কমিটি এ বছর সরকারি মাধ্যমের হজযাত্রীদের জন্য বাড়ি ভাড়ার কাজটি সম্পন্ন করেছে। এই কমিটি বাড়ি ভাড়া কোটেশনের পরিপ্রেক্ষিতে দর দাতাদের বাড়িগুলো পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করেছে।
এ বছর সরকারি মাধ্যমে হাজীদের জন্য আমরা দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলাম। সাধারণ হজ প্যাকেজ-১ এ নিবন্ধিত হজযাত্রীদের জন্য মক্কায় আমরা হারাম শরিফের বহিঃচত্বর থেকে ৩ কিলোমিটারের মধ্যে আবাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। সৌদি সরকারের বিধান অনুসারে হারাম শরীফ হতে ২ কিলোমিটার দূরে হজযাত্রীদের জন্য হোটেল বা বাসা ভাড়া করা হলে সেক্ষেত্রে আবশ্যিকভাবে পরিবহনের বন্দোবস্ত রাখতে হয়।
আমরা এ উদ্দেশ্যে হজযাত্রী প্রতি ৩০০ রিয়াল ধরেই প্যাকেজ ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু বাস্তবতা হলো, হজের মৌসুমে অত্যধিক ভিড়ের কারণে অনেক সময় হারাম শরীফ হতে দেড় থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যে বাস প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। এ কারণে আমরা হাজীদের সুবিধার্থে প্যাকেজ-১ এর বাড়ি ভাড়া ও পরিবহন বাবদ দেয় টাকা সমন্বয় করে এই প্যাকেজের হাজীদের জন্য ৩ কিলোমিটারের স্থলে ২ কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে বাড়ি ভাড়া নিয়েছি।
আমরা তাদের জন্য যে বাড়িগুলো ভাড়া নিয়েছি, তার সর্বোচ্চ দূরত্ব হবে ১ দশমিক ৬ কিলোমিটার। বাড়ি ভাড়া কমিটির সদস্যগণের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এরূপ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে সরকারি মাধ্যমের হাজীদের কষ্ট লাঘব হবে এবং হাজী হারিয়ে যওয়ার আশঙ্কাও বহুলাংশে কমে গেছে।
আমাদের সাধারণ হজ প্যাকেজ-২ এর হজযাত্রীদের জন্য মক্কায় যে সকল হোটেল ভাড়া করেছি, সেগুলোর সর্বোচ্চ দূরত্ব হবে ১ দশমিক ২ কিলোমিটার।
অন্যদিকে, মদিনায় হজ প্যাকেজ-১ এর হজযাত্রীদের জন্য সর্বোচ্চ এক কিলোমিটারের মধ্যে এবং হজ প্যাকেজ-২ এর হজযাত্রীদের জন্য ৩০০-৬০০ মিটারের মধ্যে হোটেল ভাড়া করা হয়েছে।
হজ প্যাকেজ-১ এর হজযাত্রীরা মিনায় জোন-৫ এর তাঁবুতে অবস্থান করবেন এবং হজ প্যাকেজ-২ এর হজযাত্রীরা মিনায় জোন-২ এর তাঁবুতে অবস্থান করবেন এবং সার্ভিস কোম্পানীর সাথে সম্পাদিত চুক্তি মোতাবেক সেখানে খাবারসহ অন্যান্য সুবিধাদি পাবেন।
হজের সাথে সংশ্লিষ্ট সেবা, বিশেষ করে পরিবহন সেবা ও ল্যাগেজ লোডিং-আনলোডিংসহ অন্যান্য সেবার জন্য সৌদি সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা ইতোমধ্যে সকল চুক্তি সম্পাদন করেছি।
বেসরকারি এজেন্সিগুলোও তাদের অধীনে নিবন্ধিত হজযাত্রীদের জন্য সৌদি সরকারের গাইডলাইন অনুসারে কাজ করে যাচ্ছেন। অনেকের কার্যক্রম বেশ সন্তোষজনক, আবার অনেকে ধীর গতিতে চলছেন। সৌদি সরকারের পক্ষ হতে হজ সেবাদানকারী কোম্পানীর সাথে ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সকল চুক্তি সম্পাদনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং এই ডেডলাইনের মধ্যে তাদের পক্ষ হতে সকল চুক্তি সম্পন্ন করার জন্য তাগিদ দিচ্ছেন।
হজ সার্ভিস কোম্পানির সাথে ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চুক্তি সম্পাদনের বিষয়টি গত বছরের ২৩ অক্টোবর সৌদি হজ ও উমরাহ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়। পরবর্তীতে আরো কয়েকবার পত্র মারফত আমাদেরকে এ বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে এবং সে মোতাবেক আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলোকে জানানো হয়েছে। আমাদের মন্ত্রণালয় হতে বিষয়গুলো সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে। আমরা গতকালই এজেন্সিদেরকে তাগিদ পত্র দিয়েছি। আজ সকালেও সংশ্লিষ্ট এজেন্সি মালিক/পরিচালকদের সাথে সভা করেছি এবং তাদেরকে ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সকল চুক্তি সম্পাদনের জন্য বলা হয়েছে।