শিরোনাম
ঢাকা, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে পার্বত্য এলাকার জনপ্রশাসন সংস্কারে বিশেষ সুপারিশমালা দেয়া হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন গত বুধবার হস্তান্তর করা হয়। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করেন। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে সংস্কার প্রস্তাবের সারসংক্ষেপ গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। মোট ১৭ অধ্যায়ের প্রস্তাবের ১৫ অধ্যায়ে রয়েছে ‘পার্বত্য এলাকার জনপ্রশাসন সংস্কারে বিশেষ সুপারিশমালা’ অংশটি জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের পঞ্চদশ অধ্যায়ে ‘পার্বত্য এলাকার জনপ্রশাসন সংস্কারে বিশেষ সুপারিশমালা’ অংশটি রয়েছে। বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন, ক্রীড়া উন্নয়নের সম্ভাবনা, পার্বত্য এলাকা ঝুঁকি ভাতা, পার্বত্য এলাকার শিক্ষা উন্নয়ন, পার্বত্য এলাকায় কর্মকর্তা পদায়ন, পরিষেবায় নাগরিকদের সম্পৃক্তকরণ, বনভূমি সংরক্ষণ, চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন বিষয় উল্লেখ রয়েছে সুপারিশমালায়।
তিন কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয়সাধনের গুরুত্বারোপ করা হয়েছে সুপারিশে। তিন পার্বত্য এলাকায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পার্বত্য জেলা পরিষদ ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমন্বয় বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে নাগরিকরা মনে করেন বলে সংস্কার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এগুলো চিহ্নিত করার জন্য তিন সংস্থা’র মধ্যে আলোচনা করা দরকার। সমস্যা থাকলে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সমাধান হওয়া দরকার। নাগরিকরা যেন বুঝতে পারে যেকোনো সমস্যার জন্য তারা কার কাছে যাবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সরকার নির্দেশনা দিতে পারেন।
সুপারিশে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত জনপ্রশাসনর কথা উল্লেখ করে বলা হয়, তিন পার্বত্য এলাকার বিশিষ্টজনেরা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত জনপ্রশাসন গড়ে তোলার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। এ এলাকাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে জনপ্রশাসনকে গতিশীল করতে হবে। তিন পার্বত্য জেলার সকল জেলা প্রশাসকের একই ধরণের ক্ষমতা রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন। এসব জেলার জেলা প্রশাসকদের প্রটোকল কাজে বেশি সময় যাতে দিতে না হয় সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে।
পর্যটন শিল্পের বিরাট সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে বলা হয়, তিন পার্বত্য জেলায় পর্যটন শিল্পের বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে বিধায় তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে একটি মাস্টার প্লানের আওতায় পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন করতে হবে। রাঙামাটি লেক বর্জ্যের কারণে দূষিত হয়ে পড়েছে; এর দ্রুত প্রতিকারের পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করা হলো। সাজেক ভেলিকে পর্যটনের জন্য আকর্ষণীয় করে তোলার উদ্দেশ্যে বিশেষ প্রকল্প নিতে হবে। ক্রীড়া উন্নয়ন বিষয়ে সুপারিশে বলা হয়, উপজাতি জনগোষ্টির মাঝে ক্রীড়া উন্নয়নের বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে বিধায় সেখানকার ক্রীড়া উন্নয়নে বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দূর করতে হবে। বছরে ৭টি নিয়মিত প্রতিযোগিতা ও ৩টি প্রশিক্ষণ আয়োজনের জন্য জেলা পর্যায়ে মাত্র কর্মচারী সংখ্যা বাড়াতে হবে।
সুপারিশে বলা হয়, সরকারি কর্মচারীদের পার্বত্য ভাতার ব্যবস্থা গ্রহণ। দুর্গম যাতায়াত ব্যবস্থা ও নানাবিধ ঝুঁকির মধ্যে কাজ করতে হয় বিধায় তিন পার্বত্য জেলায় কর্মরত সরকারি কর্মচারীদের পার্বত্য ভাতা বাড়ানোর সুপারিশ করা হলো। সমতল ও তিন পার্বত্য জেলার পরিস্থিতি আলাদা প্রকৃতির। তাই কোনো কর্মকর্তাকে এখানে পদায়নের পূর্বে ওরিয়েন্টেশন করানো উচিত। তিন পার্বত্য জেলায় যেন কোনো কর্মচারীকে শাস্তিমূলক বদলি করা না হয়। এর ফলে তাদের কাছ থেকে সেবা পাওয়া কঠিন হয়। বরং অধিকতর যোগ্য ও চৌকস কর্মকর্তাদের চ্যালেঞ্জিং কাজের জায়গায় পদায়ন করা উচিত।
সুপারিশে বলা হয়, শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণ করা। শুধু রাঙামাটি জেলাতে শিক্ষক নিয়োগের জন্য এনটিআরসি-কে জেলা প্রশাসনের সহায়তায় উক্ত এলাকা থেকে শিক্ষক নিয়োগের বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হলো।
তিন পার্বত্য জেলার দুর্গম এলাকায় আবাসিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করার জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করা হলো।
ভি-স্যাট-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট বিষয়ে বলা হয়, দুর্গম পার্বত্য এলাকায় ভি-স্যাট-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট সুবিধা দেয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে সেখানে অনলাইন শিক্ষা চালু করা যেতে পারে। গণশুনানির ব্যবস্থার বিষয়ে সুপারিশে বলা হয়, তিন পার্বত্য জেলায় ইউনয়ন পর্যায়ে গণশুনানির ব্যবস্থা চালু করা উচিত। তিন পার্বত্য জেলায় কোনো সরকারি কর্মসূচি গ্রহণের আগে জনগোষ্ঠির মধ্য মেয়াদি প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। তিন পার্বত্য জেলায় সরকারি বরাদ্দের ক্ষেত্রে ভারসাম্য থাকা উচিত।
বনভূমি ও ভূ-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ বিষয়ে সুপারিশে বলা হয়, তিন পার্বত্য জেলায় সাত লক্ষ একর বনভূমি ও ভূ-বৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য বিশেষ এনফোর্সমেন্ট ক্ষমতা বাড়ানো দরকার। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উন্নয়ন বিষয়ে বলা হয়, তিন পার্বত্য জেলার উপজেলাগুলোর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এক্স-রে মেশিনসহ জরুরি চিকিৎসা যন্ত্রপাতি সরবরাহ করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স সরবরাহ করার বিষয়ে সুপারিশে বলা হয়, দুর্গম পার্বত্য এলাকায় গর্ভবতী মা ও জরুরি রোগীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স সরবরাহ করার জন্য সুপারিশ করা হলো। পার্বত্য এলাকায় সাপের দংশন নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা। এর সুচিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আইসিইউ বেড থাকা উচিত। জরুরিভিত্তিতে এর সুব্যবস্থা করা উচিত। মধ্যপুলিশ বাহিনীর সমস্যা দূরীকরণ বিষয়ে তিন পার্বত্য জেলায় পুলিশ বাহিনীর যাতায়াতের সমস্যা, টিএ-ডিএ ও অন্যান্য অসুবিধাগুলো পর্যালোচনা করে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়।