শিরোনাম
ঢাকা, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জুলাই হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত মামলায় অক্টোবরের মধ্যে ৩-৪টি মামলার রায় ঘোষণা করা হবে বলে আশা করছি।
এসব মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা এবং শীর্ষস্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা আসামি হিসেবে রয়েছেন।
আজ আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, এটি বিচারিক প্রক্রিয়া কিন্তু আমরা আমাদের প্রশিকিউশন টিমের সাথে কথা বলে যে ধারণা হয়েছে সেটি আপনাদের বলছি।
তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্টের সংশোধনীর পরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হওয়ার পরে ইতিমধ্যে এই আদালতে বিচার কার্যের যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। এই আদালত পরিপূর্ণভাবে ফাংশন শুরু করেছে চার মাস আগে। এর মধ্যে এই আদালতে তিন’শটির বেশি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
আমাদের প্রসিকিউশন যাচাই-বাছাই করে ১৬টি মামলা আনুষ্ঠানিকভাবে দায়ের করেছে। ১৬টি মামলার মধ্যে ৪টি মামলার তদন্তকাজ এই মাসের মধ্যেই শেষ হবে বলে আমরা আশা করি। এর পর চার্জসিট গঠনের পরে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার কাজ শুরু হবে। আমাদের আইন অনুযায়ী বিচার কাজ শুরু হলে ৩ সপ্তাহ সময় ডিফেন্সকে দিতে হয়।
আমরা আশা করছি ৩ সপ্তাহ সময় অতিবাহিত হলে আনুষ্ঠানিকভাবে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে আগামী ঈদের পরে এপ্রিল মাস থেকে। এই আদালতে অব্যাহত শুনানি হয়, এতে এসব মামলার রায় এপ্রিল থেকে শুরু করে পরবর্তী ৪-৬ মাসের মধ্যে প্রদান করা যাবে বলে আমরা আশা করি।
আসিফ নজরুল বলেন,ব্যাপক সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বিচার প্রক্রিয়া শেষ হবে। সে কারণে পুরো বিচারকার্য শেষ হতে আমাদের এক বছর সময় লাগবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে শেখ হাসিনার শাসনামলে জামায়াত ইসলামীর কয়েকজন নেতা এবং বিএনপির একজন নেতার বিচার হয়, সেই বিচার কাজ সম্পন্ন হতে কমপক্ষে আড়াই বছর লেগেছিল- সেখানে আমাদের এই আদালতে অর্ধেকের কম সময় লাগছে। কারণ আমাদের প্রসিকিউশন ও তদন্ত টিম আন্তরিকতার সাথে দিন-রাত কাজ করছে।
দু-এক দিনের মধ্যে জাতিসংঘের যে তদন্ত টিম আছে, তাদের তদন্ত রির্পোট পাবো- এটি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ বিচারের ক্ষেত্রে অনেক অবদান রাখবে।
সাধারণ ক্রিমিনাল কোর্টে বিপুল মামলার জট রয়েছে। অনেক দিন পর পর শুনানির তারিখ পড়ে। এসব মামলার রায় আগামী এক বছরের মধ্যে পাবো বলে আশা করি না। এসব মামলায় শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা আসামি হিসেবে রয়েছেন। আমরা যদি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে রায় পেয়ে যাই তাহলে সাধারণ আদালতে মামলার রায় পেতে দেরি হলে হতাশার কারণ নেই।
তিনি বলেন, দেশের মানুষ জুলাই হত্যাকাণ্ডে বিচারের অগ্রগতি জানতে চায়। গায়েবি মামলা প্রত্যাহার এবং সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়েছে কিনা সে বিষয়ে মানুষ জানতে চায়। মানুষের অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জুলাই হত্যাকান্ড সংক্রান্ত যে মামলা তা বিচারের কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হচ্ছে না।
তিনি বলেন, মামলার বিষয়ে যথেষ্ট অগ্রগতি রয়েছে। কয়েকদিন আগেও ৮ জন তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তার সংখ্যা আওয়ামী লীগ আমলে যা ছিল তার চেয়ে বেশি। আমরা সর্বাত্নক চেষ্টা করছি।
সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টের মামলা সম্পর্কে তিনি বলেন, মত-প্রকাশের স্বাধীনতার কারণে যে মামলা হয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহার করা হচ্ছে। কম্পিউটার হেকিং সংক্রান্ত মামলা নয়।
বর্তমান সরকারের এই উপদেষ্টা আরও বলেন, বিগত সরকারের সময় দায়ের করা ৩৯৬টি স্পিস অফেন্স সংক্রান্ত মামলা বিচারাধীন ছিল, এর মধ্যে আইন মন্ত্রাণালয় পাবলিক প্রসিকিউটরদের মাধ্যমে ইতিমধ্যে ৩৩২টি মামলা প্রত্যাহার করেছে। ৬১টি মামলা প্রত্যারের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী ৩-৪ কার্যদিবসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। ফেব্রুয়ারির মধ্যে স্পিস অফেন্স সংক্রান্ত কোনো মামলা আর সাইবার সিকিউরিটি আদালতে থাকবে না। এর মধ্যে ৩টি মামলা প্রত্যাহার করতে পারবো না কারণ উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ি স্থগিত রয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছিল তারা উচ্চ আদালতে মামলা করে স্থগিত করে রেখেছেন।
তিনি বলেণ, গায়েবি মামলা প্রত্যারের বিষয়ে অসুবিধা হচ্ছে কারণ পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে দুই মাস আগে। তার পরে আমরা কাজ শুরু করেছি। এত অল্প সময়ের মধ্যে হাজার হাজার মামলা হয়েছে এর মধ্যে সারাদেশে প্রত্যাহারের জন্য ১৬ হাজার ৪২৯টি গায়েবি মামলার তালিকা করা হয়েছে।
প্রত্যেকটি মামলার রেকর্ড দেখতে হয়, এটি রাজনৈতিক হয়রানিমূলক গায়েবি মামলা কিনা, নাকি অনিয়ম করে ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যক্তির মামলা। কারণ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যক্তির মামলা প্রত্যাহার করা যায় না। ১৬ হাজার ৪২৯টি গায়েবি মামলার মধ্যে ১২১৪টি মামলা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে প্রত্যাহার করা হবে। ৫৩টি মামলা সংক্রান্ত গেজেট নোটিফিকেশন আজ-কালের মধ্যে প্রকাশ হবে। এসব মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাহায্য- সহযোগিতা পেয়েছি।
২০১৫ সালে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বিধিমালা ছিল, সেটি নিয়ে আমাদের প্রবাসীরা প্রচুর অভিযোগ করতো। কেউ যদি পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিতে চাইতো তাহলে তার পাসপোর্ট দূতাবাসে জমা দিতে হতো। বিদেশে যারা থাকেন তাদের অনেকে পাসপোর্ট নবায়ন করেন না। আবার প্রবাসীদের সন্তানদের অনেকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট নেন না। ফলে তাদের ক্ষেত্রে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি করা অনেক জটিলতা হতো। ফলে আমরা এই বিধিমালার সংশোধনী এনেছি। এখন আমাদের প্রবাসীরা আছেন তারা বাংলাদেশি পাসপোর্ট না থাকলেও তারা পাওয়ার অব অ্যাটর্নি করতে পারবেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে আমাদের তরফ থেকে যা যা প্রয়োজন তা করা হয়েছে। তবে আমাদের আইনে পলাতক আসামিদের বিচারের বিধান রয়েছে। মনে হচ্ছে ভারত শেখ হাসিনাকে ফিরেয়ে দিতে চাইবে না। তবে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।