শিরোনাম
ঢাকা, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ (বাসস): বিদায় নিয়েছে শীতের রুক্ষতা। স্তব্ধতা ভেঙে এসে গেছে বসন্ত। প্রকৃতিতে সাজ সাজ রব। শীতের জীর্ণতা ভেঙে গাছে গাছে উঁকি দিচ্ছে নতুন পাতা। ফুটেছে আমের মুকুল। বাতাসে ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ। নতুনের কলরব চারিদিকে। প্রকৃতি পূর্ণ আজ অবারিত আনন্দে।
কেবল প্রকৃতিতেই নয় মানুষের হৃদয়েও নতুনের ছোঁয়া। কারণ মুগ্ধ হৃদয় ঋতুরাজ বসন্তের ছোঁয়ায় আরো আকুল, আরো আপ্রাণ হয়ে ওঠে।
কাল পহেলা ফাল্গুন। বসন্তের প্রথম দিন। এদিনকে স্বাগত জানাতে নানা উদ্যোগ, নানা আয়োজন সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। গ্রামীণ মেলা, সার্কাস ও অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী আচার-অনুষ্ঠানে বরণ করে নেয়া হবে বসন্তকে।
বাংলাদেশে বসন্ত ঋতুটি ‘ঋতুরাজ বসন্ত’ নামে পরিচিত। এর অর্থ সকল ঋতুর রাজা। এটি বাংলা মাস ফাল্গুন ও চৈত্র নিয়ে গঠিত। বাংলা ক্যালেন্ডারের শেষ ঋতু বসন্ত।
ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদ, উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরে মুক্তমঞ্চ, পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কসহ রাজধানীতে একাধিক অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিয়েছে জাতীয় বসন্ত উৎসব আয়োজক কমিটি।
কমিটির সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট বলেন, চলতি বছর পহেলা ফাল্গুন এবং পবিত্র শব-ই-বরাত (মুসলিমদের একটি তাৎপর্যপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান) একইসঙ্গে হওয়ায় উৎসবটি অর্ধদিবস পালিত হবে।
সুইট বলেন ‘আমরা ঐতিহ্যবাহী শোভাযাত্রা বাদ দিয়ে সকাল ৭ টা থেকে দুপুর পর্যন্ত উৎসব করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। রাজধানীর তিনটি স্থানে সাংস্কৃতিক কর্মসূচি পালিত হবে।
এদিকে চারুকলার বকুলতলায় (চারুকলা অনুষদ) অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। বকুলতলায় ফাল্গুনকে বরণে বণার্ঢ্য আয়োজন থাকছে।
চারুকলার আয়োজনে থাকবে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, বসন্তের গান, কবিতা আবৃত্তি, লোকগান এবং নৃত্য। এ আয়োজনে মোট ৪২টি সাংস্কৃতিক দল অংশ নেবে। রাজধানীর অন্য দুটি ভেন্যুতেও একই ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে।
এদিকে পহেলা ফাল্গুনের পাশাপাশি একইদিনে ভালোবাসা দিবসও উদযাপিত হবে। এ নিয়ে তরুণ-তরুণীদের মনে রয়েছে বাড়তি উদ্দীপনা।
এ দিনে ফুলের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। ফলে ফুল ব্যবসাতেও যথেষ্ট চাঙ্গা ভাব দেখা যায়।
তবে ব্যবসায়ীরা ফুল বেচাকেনায় স্বাভাবিক প্রবাহের আশা করলেও শাহবাগ ফুল বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আবুল কালাম কিছুটা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এবারের চিত্র ভিন্ন। নানা কারণে মানুষ শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখছে। এ অবস্থায় রাস্তা বন্ধ থাকলে কেউ ফুল কিনতে আসবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মারিয়া নূর উৎসবের তাৎপর্য নিয়ে আবেগঘন মন্তব্যে বলেন, ‘বসন্ত উৎসব বাঙালির জন্য একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক উৎসব। ফুটে ওঠা ফুল, নতুন পাতা, প্রকৃতির মৃদু মন্দ বাতাস সবই বসন্তের সৌন্দর্যের স্মারক।’
পহেলা ফাল্গুন উদযাপনে অংশ নেবেন তিনি। তাই আগ্রহ প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, ‘চারুকলার আয়োজন নিয়ে আমি উচ্ছ্বসিত। পহেলা ফাল্গুন বাংলাদেশের মানুষের জন্য যেভাবে আনন্দ বয়ে আনে তা আমার খুবই ভালো লাগে।’
বসন্ত প্রকৃতি, সংস্কৃতি এবং বাঙালি চেতনার মধ্যকার চিরন্তন সংযোগে এক উল্লেখযোগ্য আবেদন তৈরি করে। আশা, সৌন্দর্য এবং নবজাগরণের এ ঋতুকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত সকলেই।