শিরোনাম
ঢাকা, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, কাজের ধরণ আলাদা হলেও বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের কাজ সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত।
আজ সোমবার সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন তিনি।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘প্রশাসন ও বিচার বিভাগের সমন্বিত প্রচেষ্টা জনসাধারণের আস্থাকে দৃঢ় করার পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায়ে আইনের শাসন সমুন্নত রাখে। শুধু তাই নয়, বিদ্যমান প্রশাসনিক কাঠামোতে জেলা প্রশাসন সমাজে ন্যায়বিচার দৃশ্যমান করে তোলে। আর এসবের মধ্য দিয়ে একজন জেলা প্রশাসক রাষ্ট্রের মর্যাদাকে সমুন্নত রাখতে সুক্ষ্ম ভূমিকা পালন করে থাকেন।’
সম্মেলনে জেলা প্রশাসকদের দায়িত্ব ও ভূমিকা তুলে ধরে প্রধান বিচরাপতি বলেন, ‘একটি জেলার বিচার বিভাগ ও জেলা প্রশাসন, দুটি স্বতন্ত্র স্তম্ভ হলেও অবিচ্ছেদ্যভাবে দাঁড়িয়ে আছে। দুটি স্তম্ভেরই উদ্দেশ্য অভিন্ন। মানুষের অধিকার সমুন্নত রাখা, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা বিচার বিভাগের দায়িত্ব। আর নির্বাহী বিভাগের দায়িত্ব হচ্ছে আইনের শাসন, নীতির বাস্তবায়ন, স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং শাসনকে সহজতর করা। কাজের ধরণ আলাদা হলেও বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের কাজ সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত। কোনোভাবেই তা বিরোধপূর্ণ হওয়া উচিত নয়।’
সংবিধানের ১১২ অনুচ্ছেদের বিধান তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, সাংবিধানিকভাবে বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা আলাদা হলেও ব্যবহারিক প্রয়োজনে তাতে নিরবচ্ছিন্ন সমন্বয় প্রয়োজন। সংবিধানের ১১২ অনুচ্ছেদ অনুসারে দেশের সর্বোচ্চ বিচারাঙ্গন সুপ্রিম কোর্টকে দুই বিভাগেরই সহায়তা দিতে হবে। সরকারি কোনো আদেশ-নির্দেশ, বিজ্ঞপ্তি সুপ্রিম কোর্টের আদেশকে অগ্রাহ্য বা বিলম্বিত করতে পারে না। আশা করছি, আইনের শাসন বজায় রাখার ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকরা দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করবেন।’
জেলার বিচার বিভাগ ও জেলা প্রশাসনকে একে অন্যের পরিপূরক উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘অনেক সময় অনেক বিষয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে। কিন্তু কোনোভাবেই তা কর্তৃত্বের বিরোধে পরিণত হতে দেওয়া যাবে না। আলাপ-আলোচনা, সংলাপের মাধ্যমে দ্বন্দ্বের সমাধান করতে হবে। দেশের জনগণ একজন জেলা প্রশাসককে সরকারের প্রতিনিধি মনে করে থাকে। যখন একজন কৃষক, শ্রমিক বা একজন নারী জেলা প্রশাসনের কাছে আসে, তখন তারা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নয়, সমাধান আশা করে।'
সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ তার বক্তৃতায় বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি, যে জেলায় বিজ্ঞ জেলা জজ, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের মধ্যে মেলবন্ধন হয়েছে সেখানেই শান্তি ও উন্নতি হয়েছে। আমরা আশাবাদী সবজায়গায় এরকম আকাঙ্ক্ষিত মেলবন্ধন তৈরি হবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. আজিজ আহমদ ভূঞা।
আজকের সম্মেলনে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, যশোর ও নাটোরের ডিসি বক্তৃতা করেন।
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার বলেন, সরকারি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দেওয়ানি মামলায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক সরকারের প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন। এসব মামলা আরও দ্রুত নিষ্পত্তিতে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
যশোরের ডিসি মো. আজাহারুল ইসলাম বলেন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে একজন জেলা প্রশাসককে নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করতে হয়। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উচ্চ আদালতের অন্তর্বর্তী বা স্থায়ী আদেশ আছে কিনা, জানা সম্ভব হয় না। পরে দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ ওঠে। এ বিষয়টি কিভাবে সমাধান করা যায়, তা নিয়ে ভাবতে প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ করেন এই জেলা প্রশাসক।
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে জেলা প্রশাসকরা যাতে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ-নির্দেশ, রায় সরাসরি পেতে পারেন, সে ব্যবস্থা করার জন্য প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ করেন নাটোরের ডিসি আসমা শাহীন। তিনি বিচার প্রার্থীদের হয়রানি লাঘবে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে জেলা পর্যায়ে বিচারক, প্রশাসন ও আইনজীবীদের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাবও তুলে ধরেন বিচার বিভাগ প্রধানের কাছে।
আজকের সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি, সচিব সমন্বয় ও সংস্কার, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকরা উপস্থিত ছিলেন।