বাসস
  ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:০৬

মেলায় ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ নিয়ে বই এসেছে ১০০টি 

ছবি: বাসস

\ নেছার উদ্দিন \ 

ঢাকা, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার দীর্ঘ দুঃশাসনের সমাপ্তি হয়। বহু প্রাণ ও অঙ্গহানির বিনিময়ে সফল হয় এ অভ্যুত্থান। অভ্যুত্থান পরবর্তী এর স্মৃতিচারণ ও জুলাইকে উপজীব্য করে কবিতা ও গল্প রচনা করছেন কবি-লেখকরা, তুলে ধরেছেন পতিত স্বৈারাচার সরকারের ভয়াবহ নির্মমতা গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বিবরণ।  

বাংলা একাডেমি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্টল ও বিভিন্ন প্রকাশনীর তথ্যমতে, জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে মেলায় এখন পর্যন্ত বই এসেছে ১০০টি। অভ্যুত্থান নিয়ে নন-ফিকশন বই প্রকাশ হয়েছে বেশি। এছাড়া জুলাই অভ্যুত্থানকে উপজীব্য করে গল্প ও কাব্যগ্রন্থ রচিত হয়েছে।

বাতিঘর প্রকাশনীর স্বত্ত্বাধিকারী মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বাসসকে বলেন, ‘বাতিঘর থেকে এবার জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে দুইটি বই বের হয়েছে- জুলাইর গল্প ও লাল বসন্তের দিনলিপি।’

নতুন প্রজন্মের মধ্যে গণঅভ্যুত্থান নিয়ে লেখা বই পড়ার আগ্রহ বেশি বলে মনে করেন তিনি। নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের মধ্যে জুলাই নিয়ে পড়ার আগ্রহ বেশি। জুলাইকে নিয়ে এখন পর্যন্ত নন-ফিকশন বই বেশি প্রকাশ হয়েছে। গল্প, কবিতার বই ও কিছু কিছু বের হয়েছে।’ 

গণঅভ্যুত্থান নিয়ে প্রথমা থেকে প্রকাশিত হয়েছে সাজ্জাদ শরিফের সম্পাদিত বই ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সাক্ষ্য’। 

সাজ্জাদ শরিফ বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের মত বড় একটি ঘটনা যখন আমরা জানতে চাইব তখন সব ধরনের মানুষের গল্প জানা প্রয়োজন। ছাত্র, শিক্ষক, শিল্পী, রিকশা চালক, বাঙালি, পাহাড়ি, মুসলিম, হিন্দুসহ সকলের গল্পগুলো এই বইতে তুলে আনার চেষ্টা করেছি। এছাড়াও আন্দোলনের সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় করা পোস্টার ও দেয়াল লিখন, স্লোগান লিপিবদ্ধ করেছি এই বইয়ে।’

অভ্যুত্থান নিয়ে ডকুমেন্টেশন এর প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই সময়টাতে অভ্যুত্থানের ডকুমেন্টেশন করা প্রয়োজন। ঘটনাগুলো এখনো আমাদের স্মৃতিতে আছে। এখনই এসব নথিবদ্ধ করার সময়। যারা আন্দোলনে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন তারা যদি নিজেদের স্মৃতি থেকে লেখেন তা আরও ভালো হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমা থেকে অভ্যুত্থান নিয়ে যত বই বের হয়েছে সবগুলোই বিক্রি হচ্ছে। জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে পাঠকদের মধ্যে আগ্রহ আছে। পাঠকরা অভ্যুত্থান নিয়ে জানতে চান।’   

এবার মেলায় বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি স্টল আছে। স্টলে গণঅভ্যুত্থান নিয়ে বিভিন্ন প্রকাশনীর বই বিক্রি করছেন তারা। স্টলটির তত্ত্বাবধান করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘দপ্তর সেল’ সম্পাদক জাহিদ আহসান।

তিনি বলেন,‘জুলাই নিয়ে মানুষের উদ্দীপনা এখনো বহাল আছে। অভ্যুত্থান নিয়ে মানুষের জানার আগ্রহ লক্ষ্য করছি। স্টলে প্রতিনিয়তই অভ্যুত্থানের বই কিনতে আসছেন মানুষজন।’

‘তোমার চোখে জুলাই’ শীর্ষক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি বই প্রকাশের কথা জানিয়ে জাহিদ আহসান বলেন, ‘শীঘ্রই মেলাতে সে বইটি পাওয়া যাবে। সারাদেশে যারা জুলাই অভ্যুত্থানে সক্রিয় ছিল তাদের লেখা থাকবে বইটিতে। সকলে নিজ নিজ অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন লেখায়।’ 
 
লেখকদের নির্মোহ ইতিহাস রচনার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন,‘জুলাই অভ্যুত্থানের নির্মোহ ইতিহাস তুলে আনতে লেখকদের আহ্বান জানাবো। কেননা, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবকিছু নিয়ে অতিরঞ্জিত করার বিষয়টি আমরা লক্ষ্য করেছি। এর ফলে নির্মোহ ইতিহাস ঢাকা পড়ে যায়।’ 

তিনি আরও বলেন,‘নির্মোহ ইতিহাস রচনার জন্য সকল শ্রেণী পেশার মানুষদের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। তাই ইতিহাস লিপিবদ্ধ করার জন্যে সকল শ্রেণী পেশার মানুষদের কথা শোনা প্রয়োজন। ইতিহাস যেন কখনো একপাক্ষিক রচিত না হয় সেদিকে আমাদের সচেতন দৃষ্টি রাখতে হবে।’

জুলাই নিয়ে এবারের মেলায় কাব্যগ্রন্থ রচনা করেছেন পলিয়ার ওয়াহিদ। তার কাব্যগ্রন্থের নাম ‘গুলি ও গাদ্দার’। ঘাসফুল প্রকাশনী থেকে বের হয়েছে বইটি। তিনি বলেন, ‘বইতে মোট ৪৫ টি কবিতা আছে। জুলাই অভ্যুত্থানকে উপজীব্য করে কবিতাগুলো রচনা করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আন্দোলন চলাকালীন সময়ে যে সকল বিষয় আমাদের আন্দোলিত করেছিল সে সকল বিষয়কে উপজীব্য করে কবিতা রচনা করা হয়েছে। এছাড়া, আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন ও যাদের অঙ্গহানী হয়েছে তাদের নিয়েও বেশ কয়েকটি কবিতা আছে।’   

প্রথমা প্রকাশনী থেকে এবার জুলাই গলঅভ্যুত্থান নিয়ে বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। প্রথমার বিক্রয়কর্মী শাকিল বাসস কে বলেন, ‘জুুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে রচিত সবগুলো বই পাঠকরা কিনছেন। জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে জানার আগ্রহ পাঠকদের মধ্যে বেশি দেখা যাচ্ছে এবার।’

ঐতিহ্য প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী আব্দুল্লাহ আল নাঈম বাসসকে বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের বই নিয়ে পাঠকদের আগ্রহ বেশি। ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত ফারজানা মাহবুব এর লেখা ‘হ্যাশট্যাগ জুলাই বিপ্লব’ ও অভ্যুত্থানের গল্প নিয়ে সাব্বির জাদিদের লেখা গল্পগ্রন্থ ‘একটি গোলাপের জন্য’ বিক্রয় বেশি হচ্ছে।’

গণঅভ্যুত্থান নিয়ে কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেছেন তরুণ কবি জয়েন উদ্দিন সরকার তন্ময়। তার কাব্যগ্রন্থের নাম ‘জুলাই ও একটি লাল মাশরিক’। তিনি বলেন, ‘জুলাইকে উপজীব্য করে এই গ্রন্থের সকল কবিতা রচনা করেছি। মোট ৭০ টি কবিতা এই গ্রন্থে রয়েছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই নিয়ে পাঠকরা জানতে চান। জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে বই সংগ্রহে পাঠকরা আগ্রহী।’ 

জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে মেলায় প্রকাশিত হয়েছে বরেণ্য লেখক, গবেষক, ইতিহাসবিদ বদরুদ্দীন উমরের লেখা ‘বাঙলাদেশে জুলাই এর গণঅভ্যুত্থান’। বইটি প্রকাশ করেছে সংস্কৃতি প্রকাশন। বইটি প্রথম সংস্করণ বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। ১৫ ফ্রেব্রুয়ারির পর থেকেই অনেক ক্রেতা মেলায় প্রকাশনা সংস্থা ও পরিবেশক স্টলে বইটি খুঁজে পাননি, তাদের জানানো হয়েছে বইটির সব কপি বিক্রি হয়ে গেছে। বইটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, দ্বিতীয় মুদ্রণ দু’য়েক দিনের মধ্যে মেলায় আসবে ।

প্রথমা প্রকাশনী থেকে গণঅভ্যুত্থান নিয়ে যেসব বই বেরিয়েছে - জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সাক্ষ্য, লাল জুলাই: চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পথ-পরিক্রমা, আমিই রাষ্ট্র, শেখ হাসিনার পতনকাল, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান নতুন পথে বাংলাদেশ, স্বৈরতন্ত্র প্রতিরোধের পথ: রাষ্ট্র সংস্কার ও সংবিধান সংশোধন, সংবাদপত্রে জুলাই অভ্যুত্থান।  

ঐতিহ্য থেকে বেরিয়েছে- জুলাইয়ের অশেষ পাখিরা, আত্মনিবেদন : চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে জীবন দিলেন যারা, বিদ্রোহ থেকে বিপ্লব নিরাপদ সড়ক আন্দোলন থেকে জুলাই অভ্যুত্থান, হ্যাশট্যাগ জুলাই বিপ্লব, একটি গোলাপের জন্য। 

বাতিঘর প্রকাশনী থেকে বেরিয়েছে- জুলাইর গল্প, লাল বসন্তের দিনলিপি। ঘাসফুল থেকে বেরিয়েছে- গুলি ও গাদ্দার, মাস্তুলের ঝড়, দোয়েল পাখি। মিজান পাবলিশার্স থেকে বেরিয়েছে- হৃদয়ে জুলাই ৩৬, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলন অন্তর্বর্তী সরকার। জ্ঞানকোষ থেকে বেরিয়েছে- ট্রেন টু ঢাকা, নতুন দিগন্তে জেগেছ ভোর। 

আরও যেসকল গণঅভ্যুত্থানের বই বেরিয়েছে- বাকশাল থেকে স্বৈরাচার, ভয়তন্ত্র, ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান: স্মৃতিচারণ ও ইতিহাস, হোয়াট ডু, দ্রোহের জাগরণে জুলাই, রক্তে লেখা বিপ্লব। 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান: অন্তর্বর্তী ভাবনা, ৩৬ জুলাই: ছাত্র জনতার বিজয় ফ্যাসিবাদের পতন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান, চব্বিশের বাংলাদেশ, আয়নাঘর, কারফিউ দিনের কবিতা, রক্তাক্ত জুলাই ২০২৪, জুলাই বিপ্লবের সাত শহীদ, লাল জুলাইয়ের গল্প।

লাল অশ্রু, জুলাই ৩৬-এর বিপ্লব (প্রথম খণ্ড ও দ্বিতীয় খন্ড), দেশ কাঁপানো ২৩ দিন, দ্যা এপিক ফল অব ডিকটেটর শেখ হাসিনা, কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে ২৪’র গণ-অভ্যুত্থান, স্বাধীনতার অভ্যুত্থান, গণঅভ্যুত্থানের পুঁথি, ৩৬ জুলাই ২০২৪, ১ থেকে ৩৬ জুলাইয়ের দিনলিপি, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ২০২৪, আমি বিজয় দেখেছি ৩৬ জুলাই, ৩৬ জুলাই, রক্তঝরা জুলাই, গণঅভ্যুত্থানের পুঁথি, আমি কে? তুমি কে? রাজাকার রাজাকার, রক্তে ভেজা বাংলাদেশ।   

৩৬ শে জুলাই, নিপাতের দিনলিপি, রক্তাক্ত জুলাই, হালচাল (ম্যাগাজিন), শ্রাবণের গল্প, মৃত্যুর মানচিত্র, আমার দেখা স্বাধীনতা,ফ্যাসিবাদ,জুলাই আগস্ট বিপ্লবের আদ্যোপান্ত, স্বৈরাচার হাসিনার ১৬ বছর, জুলাইয়ের দিনগুলো, জুলাই জেনোসাইড। 

নানা-নাতনী, এ দেশ তোমার আমার, কোলাহল শেষে, প্রিয় ভূমি, ১০০ শহীদের গল্প, জুলাই বিপ্লব, বোধের অভ্যুত্থান, রক্তাক্ত ৩৬ জুলাই, গ্রাফিতি, গুমের জননী,নির্বাচিত সম্পাদকীয়, জুলাই ডায়েরি, জুলাই ও একটি লাল মাশরিক, ৩৬ জুলাই, মিহির,চেতনার চিত্রপট, বাংলাদেশে ম্যাসাকার,অমৃত রক্ত, গণহত্যা ও বাকস্বাধীনতা, গণরুমের প্রেমবিলাস, আমার নতুন বাংলাদেশ, দূর নক্ষত্র, দুর্নীতি মুক্ত দেশ, রক্তাক্ত দলিল, ২৪ এর বিপ্লবী কবিতা, জেন-জি, অধীকার, গণতন্ত্র মুক্তি পাক, কারফিউ ডায়েরি, আজাদী, ভূতের বাচ্চা, ২ পাতার আভাস, কালের ধ্বনি,নোয়াখালীর দাঙ্গা, রক্তে ঝরা ২৪, ৩৬ জুলাই, রক্তের প্লাবনে আর্তনাদ।