শিরোনাম
রাজশাহী, ৩ মার্চ, ২০২৫ (বাসস): বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকদের সেচ সেবা বৃদ্ধি ও তাদের বিদ্যমান সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে হটলাইন চালু করেছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)।
দেশের সর্ববৃহৎ সেচ সরবরাহকারী রাষ্ট্রীয় মালিকা নাধীন সংস্থা বিএমডিএ চলতি বোরো মৌসুমে এটি রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬টি জেলায় প্রায় ৩ দশমিক ৩০ লাখ হেক্টর জমিতে সেচের জন্য ১৬ হাজার ৭১৫টি গভীর নলকূপ পরিচালনা করছে।
রোববার বাসস-এর সঙ্গে আলাপকালে বিএমডিএ চেয়ারম্যান ড. মো. আসাদ উজ জামান বলেন, ১০ লাখেরও বেশি কৃষক ০১৩৩৬-৪২৬৩৩০ নম্বর হটলাইন ব্যবহার করে সেচ সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন।
কৃষকদের থেকে প্রাপ্ত অভিযোগগুলো দ্রুত সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ছয়টি পৃথক জেলাভিত্তিক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আসাদ উজ জামান বলেন, বর্তমানে এই অঞ্চলে সেচ সম্প্রসারণ ও চাহিদাভিত্তিক অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে প্রতি বছর অতিরিক্ত ১২ দশমিক ৩৫ লাখ টন ফসল উৎপাদন হচ্ছে।
বাসস-এর সঙ্গে আলাপকালে বিএমডিএ-এর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, তারা চলতি রবি মৌসুমে প্রায় ১০ দশমিক ৩৬ লাখ হেক্টর জমিতে সেচের পানি সরবরাহ করছেন। এতে প্রায় ১০ দশমিক ৬২ লাখ কৃষককে উপকৃত হয়েছে। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬টি জেলা নিয়ে গঠিত এই অঞ্চলে এখন পর্যন্ত ১৫ হাজার ৮২৮টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে।
১৫ হাজার ৮৯৫.০৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সেচের পানি বিতরণ ব্যবস্থা নির্মাণ ছাড়াও ৬৫০টি কূপ খনন, ৫৭৬টি বিদ্যুৎ চালিত লো লিফট পাম্প (এলএলপি) ও সৌরশক্তি চালিত ৪৫০টি এলএলপি স্থাপন করা হয়েছে।
জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, তারা ১৩ হাজার ৫৭ হেক্টর জমি জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করেছেন, ৪ হাজার ২৫৭ কিলোমিটার পরিত্যক্ত খাল পুনঃখনন করেছেন, ৭৭৮টি ক্রস-ড্যাম নির্মাণ করেছেন ও সেচ ব্যবস্থাকে আরও সফল করার জন্য নদীতে ১৩টি পন্টুন স্থাপন করেছেন।
তিনি আরো বলেন, জমিগুলোকে সঠিক সেচের আওতায় আনার মাধ্যমে ফসল বৃদ্ধির জন্য নওগাঁর রক্তদহ বিল, টেপা বিল ও রাজশাহী জেলার ছত্রগাছা বিলের জলাভূমিতে সৌরবিদ্যুৎ চালিত আরও ৫৭২টি খনন-কূপ স্থাপন করা হয়েছে।
এছাড়াও, প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী ১ হাজার ৫৯২টি পরিবারকে পানি সরবরাহের জন্য সেচের গভীর নলকূপের পাশে ওভারহেড ট্যাঙ্ক তৈরি করা হয়েছে।
খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে কার্বন নিঃসরণ কমাতে প্রায় ২ দশমিক ৫৮ কোটি বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। প্রায় ১ দশমিক ৪৯ লাখ কৃষককে ফসল বৃদ্ধিতে সক্ষম করে তোলার লক্ষ্যে প্রয়োজনভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আতাউর রহমান (৫০) চলতি শীত মৌসুমে সেচের পানি ব্যবহার করে ফুলকপি চাষ করে অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করেছেন।
এর আগে তিনি বলেছিলেন, এই অঞ্চলে কেবল বৃষ্টিনির্ভর ফসল উৎপাদন করা সম্ভব। প্রতি একর জমি থেকে প্রায় ১৫-২০ মণ ধান উৎপাদন করা যেত। সময়মতো বৃষ্টি না হলে কোনও ফসল উৎপাদন করা যেত না। কিন্তু, বর্তমানে প্রতি একর জমি থেকে প্রায় ৮০-৯০ মণ ফসল উৎপাদন হচ্ছে। অনেক একক ফসলি জমি ত্রি-ফসলে রূপান্তরিত হয়েছে।
আতাউর রহমান বলেন, এই অঞ্চলে, বিশেষ করে বিস্তীর্ণ বরেন্দ্র অঞ্চলে কৃষিক্ষেত্রে সেচ সম্প্রসারণের ফলে প্রায় সারা বছর ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে একটি নীরব বিপ্লব ঘটেছে।
নওগাঁর সাপাহার উপজেলার তানতোই গ্রামের বাসিন্দা মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ (৩৮) বলেন, গভীর নলকূপ, সৌরবিদ্যুৎ চালিত লো লিফট পাম্প ও পানি সরবরাহের জন্য পরিত্যক্ত পুকুর, খাল ও ওভারহেড ট্যাঙ্ক পুনঃখননসহ বিভিন্ন প্রচারণামূলক কার্যক্রম থেকে তারা উপকৃত হচ্ছেন।
ধান, গম, আলু, সবজি, আম, পেয়ারা, জুজুব ও মাল্টা বাগানসহ বিভিন্ন ফসল ও শাকসবজিতে সেচের পানি ব্যবহার করা হচ্ছে।