বাসস
  ২১ মার্চ ২০২৫, ১৬:০৭

ঈদ উপলক্ষে এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত ফোর লেনের ১০ কিলোমিটার রাস্তা খুলে দেয়া হবে

আগামী ২৪ মার্চ থেকে এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত ফোর লেনের ১০ কিলোমিটার রাস্তা খুলে দেয়া হবে। ছবি: বাসস

\\ মহিউদ্দিন সুমন \\

টাঙ্গাইল, ২১ মার্চ ২০২৫ (বাসস): ঈদের প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকেই ঘরমুখো মানুষ রাজধানী ছাড়তে শুরু করবে। প্রিয়জনের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানীর কর্মস্থল থেকে উত্তরের পথ ধরেই আপন নীড়ে ফিরবে মানুষ। এবারের ঈদযাত্রায় উত্তরবঙ্গের মানুষ বিগত বছরগুলোর তুলনায় মহাসড়কের টাঙ্গাইলের সীমানায় স্বস্তি পাবে বলে জানিয়েছে জেলা পুলিশ। 

জানা যায়, ঈদ উপলক্ষে আগামী ২৪ মার্চ থেকে এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত ফোর লেনের ১০ কিলোমিটার রাস্তা খুলে দেয়া হবে। যানজট মুক্ত ঈদ যাত্রার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আরো নানা উদ্যোগের কথা জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।  

ঈদকে কেন্দ্র করে এই মহসড়কে ফিটনেস বিহীন বাস আর ট্রাক চলাচল বন্ধ করতে না পারলে যানজটের শঙ্কা থেকেই যায়। অন্যদিকে  এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতুর পূর্বপাড় পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার সড়কের ফোর লেনের কাজ শেষ না হওয়াতে এবারো যানজটের উৎকন্ঠায় রয়েছে এই মহাসড়কে নিয়মিত চলাচলকারী যানবাহনের চালক আর যাত্রীরা। 

স্বাভাবিক সময়ে এই মহাসড়কে উত্তরবঙ্গসহ ২৩টি জেলার ১৫ থেকে ২০ হাজার যানবাহন চলাচল করে। তবে ঈদ যাত্রায় তা বেড়ে যায় তিনগুণ। এ ছাড়াও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চার লেনের সুবিধা শেষে এভাবেই এলেঙ্গায় এসে থমকে যাচ্ছে গাড়ির গতি। দুই লেনের যমুনা সেতুতে দুর্ঘটনা, সেতুর পূর্বপাড়ের গোলচত্ত্বর থেকে সাড়ে ১৩ কিলোমিটারে নানা অব্যবস্থাপনা ও গাড়ির ধীরগতিতে হরহামেশাই তৈরি হচ্ছে যানজট।

জানা যায়, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত সার্ভিস লেনসহ ৬ লেনের কাজ শেষ হওয়ায় অনেকটাই ভোগান্তি কমবে যাত্রীদের। তবে এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার রাস্তার ফোরলেনের কাজ চলছে। যেকোনো উৎসবের আগে বা পরে রাজধানী থেকে উত্তরের এই পথে যানবাহনের সংখ্যা বাড়ে অন্তত তিন গুণ। সেই সাথে রাজধানী থেকে অনেক সময় ফিটনেস বিহীন লক্কর ঝক্কর বাস ও ট্রাকসহ মালবাহী যানবাহনে ঈদে ঘরমুখী মানুষদের নিয়ে যাত্রা দেন উত্তরবঙ্গে। আর এসব ফিটনেসবিহীন যানবাহন মাঝপথে বিকল হয়ে পড়লে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। এতে করে যানজটে আটকা পড়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয় চালকসহ যাত্রীদের।

এই সড়ক নির্মাণের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার রবিউল আওয়াল বলেন, এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার রাস্তায় ফোর লেনের রাস্তার কাজ চলমান রয়েছে। এ জন্য শ্রমিকরা দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করছে। তবে ঈদ উপলক্ষে আগামী ২৪ মার্চ থেকে ১০ কিলোমিটার রাস্তা জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। আশা করছি যানজট এড়াতে ৪ লেনের সুবিধা কিছুটা হলেও ভোগ করতে পারবে উত্তরবঙ্গবাসী।

যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবির পাভেল বাসসকে বলেন, যানবাহন যাতে নির্বিঘ্নে সেতু পারাপার করতে পারে সে ব্যাপারে সেতু কর্তৃপক্ষ প্রস্তুত। এবারের ঈদ যাত্রায় যমুনা সেতুতে টোল আদায় সার্বক্ষণিক চালু থাকবে। তবে ভোগান্তি এড়াতে এবারে সেতুর দুই প্রান্তে টোল আদায়ের জন্য বাড়তি ৯টি করে বুথ স্থাপন করা হবে। এ ছাড়াও  মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা ২টি বুথ থাকবে। এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতুর পূর্ব  পর্যন্ত এ বছর আরো অনেকটাই নতুন করে ফোর লেনের সুবিধা পাবে চালকরা। ফলে এবার যানজটমুক্ত ঈদ উপহার দিতে পারবো বলে আশা করছি।  

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বাসসকে বলেন, গত ঈদ যাত্রার দুর্বলতা চিহ্নিত করে নানামুখী নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। মহাসড়ক যানজট মুক্ত ও স্বস্তির ঈদ যাত্রা নিশ্চিত করতে সমন্বয় সভাও করা হয়েছে। তিনি বলেন, এবার মহাসড়কে চারটি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। যানজট নিরসনে মহাসড়কে প্রায় ৭ শতাধিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। এর পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করবে শ্রমিক ফেডারেশন। তিনি আরোও বলেন, ঈদ যাত্রায় যখন গামেন্টস ফ্যাক্টরিগুলো ছুটি হয় তখন মহাসড়কে যানবাহনের চাপ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে যানবাহনগুলো যমুনা সেতু গোল চত্বর থেকে ভুয়াপুরের লিংক রোডগুলো ব্যবহার করে যানবাহন চলাচলে স্বাভাবিক থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।  

উত্তরবঙ্গগামী শ্যামলী পরিবহনের বাসচালক সোহরাব মিয়া বলেন, মহাসড়কে পুলিশকে আরও দায়িত্বশীল হয়ে কাজ করতে হবে। পুলিশ যদি এ মহাসড়কে ফিটনেস বিহীন গাড়ি ঢুকতে না দেয় এবং তাদের দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করে তাহলে আমার মনে হয় যানজট হবে না।

অন্য দিকে ট্রাক চালক বাছেদ আলী বলেন, এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার রাস্তার কাজ চলমান রয়েছে। সম্পূর্ণ কাজ শেষ না হলে এবারও মহাসড়কে যানজটের আশঙ্কা করছি। এ কারণে প্রতি বছরই আমাদের যানজটের কবলে পড়তে হয়।

যমুনা  সেতু মহাসড়কে যাতায়াতকারী যাত্রীদের মতে, মহাসড়কে অবৈধ অটোরিকশা ও তিন চাকার ভ্যান গাড়ী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। যার ফলে প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ নিতে হবে। এ ছাড়াও বর্তমানে ছিনতাই চুরির সংখ্যাও বেড়ে গেছে। তাই মহাসড়কে রাতে যদি যানজট লেগে যায় তাহলে ছিনতাই ও চুরির শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। তাই নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তা করে  আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এই মহাসড়কে বিশেষ নজরদারির দাবি জানান তারা।