বাসস
  ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৫:০৯

জলবায়ু সহনশীলতা বাড়াতে পার্বত্য চট্টগ্রামে ১০ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প অনুমোদন অভিযোজন তহবিল বোর্ডের

প্রতীকী ছবি। বাসস

ঢাকা, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস): অভিযোজন তহবিল বোর্ড সবুজ, সহনশীল এবং অভিযোজিত পার্বত্য চট্টগ্রাম অর্থনীতি (জিআরএসিই বা গ্রেস) প্রকল্প অনুমোদন করেছে। এটি বাংলাদেশে জলবায়ু অভিযোজনের ক্ষেত্রে একটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।

এই প্রকল্পটি ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের তহবিল ব্যবহার করে পার্বত্য চট্টগ্রামের (সিএইচটি) সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি জনগোষ্ঠীগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতি আরও সহনশীল হতে সাহায্য করার জন্য কাজ করবে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, "জিআরএসিই বা গ্রেস প্রকল্পটি বাংলাদেশের পরিবেশগত ভাবে সমৃদ্ধ কিন্তু তীব্র ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে খ্যাত পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এ রূপান্তরমূলক উদ্যোগটি এই অঞ্চলে বসবাসকারী জাতিগত সংখ্যালঘুদের মর্যাদা, অধিকার এবং কল্যাণ বজায় রেখেই জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতায় অর্থপূর্ণ বিনিয়োগের দুয়ার খুলে দেবে।”

বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, ‘অ্যাডাপ্টেশন ফান্ডের ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের অনুমোদনের জন্য আমরা গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। এটি জলবায়ু অভিযোজনে বাংলাদেশের জাতীয় নেতৃত্বের প্রমাণ।’

তিনি বলেন, গ্রেস প্রকল্প স্থানীয় সরকারকে সক্ষমতা দিবে এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসন এবং প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধানের ওপর ভিত্তি করে একটি স্থিতিশীল ভবিষ্যতের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীকে ক্ষমতায়িত করবে।

কাঠমান্ডু-ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেন ডেভেলপমেন্টের (আইসিআইএমওডি) বাংলাদেশ কান্ট্রি ফোকাল পয়েন্ট কবির উদ্দিন বাসসকে বলেন, গ্রেস প্রকল্পটি রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান জেলা জুড়ে বিস্তৃত প্রকৃতি-ভিত্তিক এবং সম্প্রদায়-চালিত জলবায়ু অভিযোজন কৌশল প্রদান করবে।

প্রকল্পটি জলবায়ু-সহনশীল অবকাঠামো স্থাপন, পুকুরের ধারণক্ষমতা উন্নতকরণ, পানি সংকট প্রবণ উপজেলাগুলোতে ঝর্ণা এবং ভূ-গর্ভস্থ পানির রিচার্জ সিস্টেম পুনরুদ্ধার করতে সহায়তা করবে, তিনি বলেন।

গ্রেস প্রকল্পেরও প্রধান কবির উদ্দিন বলেন, এই উদ্যোগটি অঞ্চলের স্বতন্ত্র ভূ-প্রকৃতির সাথে উপযুক্ত জলবায়ু-প্রতিরোধী কৃষি পদ্ধতি প্রয়োগ করে টেকসই ভূমি ব্যবহারকে উৎসাহিত করবে।

তিনি বলেন, এই প্রকল্পটি জলবায়ু-সহনশীল উন্নয়ন, দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমন এবং অভিযোজন পরিকল্পনায় স্থানীয় সরকার, নারী এবং যুবসমাজের সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের ক্ষমতাকে উন্নত করবে।

স্থানীয় পর্যায়ে জলবায়ু অর্থায়নের কার্যকর এবং ন্যায্য বিতরণ নিশ্চিত করতে, 'লোকাল ক্লাইমেট এডাপ্টিভ লিভিং ফ্যাসিলিটি' (এলওসিএএল) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মধ্যবর্তিতার প্রক্রিয়াসমূহ বাস্তবায়িত করা হবে, যা পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা অনুদান প্রদান করবে।

প্রকল্পটি প্রথম পর্যায়ে ২৫টি উপজেলায় সরাসরি সহায়তা প্রদান করবে, পরবর্তীতে পার্বত্য চট্টগ্রামের অবশিষ্ট ১০টি উপজেলায় সম্প্রসারিত হবে বলে আজ আইসিএমওডি-এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।

এই প্রকল্পটি এলওসিএএল’র ধারণা দ্বারা অনুপ্রাণিত সরকারি কাঠামোর মাধ্যমে পরিচালিত পারফরম্যান্সের ভিত্তিক জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা ভর্তুকি ব্যবহার করবে। যা সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে।

গ্রেস প্রকল্পটি অভিযোজন তহবিলের জন্য সরকার মনোনীত কর্তৃপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হবে।

আইসিএমওডি হল আঞ্চলিক বাস্তবায়নকারী সংস্থা। আইসিএমওডি-এর সাথে সমন্বয় সাধন করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে যে গ্রেস প্রকল্পটি পার্বত্য চট্টগ্রাম এর জন্য বাংলাদেশের অগ্রাধিকার এবং কৌশলসমূহের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

এটি প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধান এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সম্প্রদায়-চালিত অভিযোজন উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশের জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (এনএপি) বাস্তবায়নকে সহজতর করবে।

আইসিএমওডি-এর মহাপরিচালক ড. পেমা গ্যামতশো বলেন, "পাহাড়ি সম্প্রদায়গুলোকে বিজ্ঞান-ভিত্তিক, স্থানীয়ভাবে পরিচালিত সমাধান প্রদান করাই আইসিএমওডি-এর লক্ষ্য। বাংলাদেশ সরকারের সাথে সহযোগিতায়, আমরা জলবায়ু সহনশীলতা বিকাশে কাজ করছি, যা সেখানকার সম্প্রদায়গুলোকে ক্ষমতায়িত করবে এবং বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে বাস্তুতন্ত্র রক্ষা করবে।

গ্রেস প্রকল্পটি আইসিএমওডি দ্বারা বাংলাদেশের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এবং তিনটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাথে জাতিসংঘের মূলধন উন্নয়ন তহবিলের (ইউএনসিডিএফ) সহযোগিতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে।

বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের সুন্দর ভূদৃশ্য জীববৈচিত্র্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র, যা অর্থনৈতিক উন্নয়ন, পরিবেশ সুরক্ষা এবং মানবকল্যাণের জন্য প্রয়োজনীয় বাস্তুতন্ত্র পরিষেবা প্রদান করছে। সেইসঙ্গে এটি বিভিন্ন জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আবাসস্থলও। তবে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় (এনএপি) এই অঞ্চলটিকে দেশের 'জলবায়ু চাপ অঞ্চল' হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।