বাসস
  ২০ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩৫
আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৪৪

একটি স্বতন্ত্র স্থায়ী নারী বিষয়ক কমিশন প্রতিষ্ঠার সুপারিশ সংস্কার কমিশনের

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় শনিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশসহ প্রতিবেদন পেশ করে। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৫ (বাসস): নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন একটি স্বতন্ত্র স্থায়ী কমিশন প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছে।

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে গতকাল নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশসহ প্রতিবেদন পেশ করে। প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদনটি দিয়েছেন নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন প্রধান শিরীন পারভিন হক। এ সময় কমিশনের অন্যান্য সদস্যগণও উপস্থিত ছিলেন।

সংস্কার কমিশন ১৫টি বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে। বিষয়গুলো হচ্ছে- সংবিধান আইন ও নারীর অধিকার: সমতা ও সুরক্ষার ভিত্তি নারীর অগ্রগতির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা জাতীয় সংস্থাসমূহ, নারীর স্বার্থ ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়ন।

নারী ও মেয়ে শিশুর জন্য সহিংসতা মুক্ত সমাজ, জনপরিসরে নারীর ভূমিকা: জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে, জন প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণ, নারীর অগ্রগতির জন্য শিক্ষা, প্রযুক্তি ও দক্ষতা বৃদ্ধি।

সকল বয়সী নারীর জন্য সুস্বাস্থ্য, অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ ও সম্পদের অধিকার।

দূর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনে নারী: শ্রম ও কর্মসংস্থান, নারী শ্রমিকের নিরাপদ অভিবাসন, দারিদ্র্য হ্রাসে টেকসই সামাজিক সুরক্ষা, গণমাধ্যমে নারীর অংশগ্রহণ, চিত্রায়ন ও প্রকাশ, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিতে নারীর অন্তর্ভুক্তি ও বিকাশ।

সংবিধান আইন ও নারীর অধিকার: সমতা ও সুরক্ষার ভিত্তি বিষয়ে সুপারিশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদে করণীয় তুলে ধরা হয়েছে। সুপারিশে বলা হয়েছে, 'জনপরিসর ও পারিবারিক আইনে সকল বৈষম্য বিলুপ্ত করা। সংবিধানে মৌলিক অধিকার হিসাবে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মের স্বীকৃতি দেয়া এবং এই অধিকারগুলো ক্রমান্বয়ে বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতিসহ বলবৎযোগ্য করা। বেঁচে থাকার অধিকার থেকে কাউকে বঞ্চিত না করা। অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ডের বিধান বিলুপ্ত করা।'

সুপারিশে বলা হয়েছে, 'একটি স্বতন্ত্র স্থায়ী নারী বিষয়ক কমিশন প্রতিষ্ঠা করা, যা নারীদের সকল অধিকার লঙ্ঘন পর্যবেক্ষণ, তদারকি এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করবে'। সুপারিশ আরও বলা হয়, সিডও সনদের উপর অবশিষ্ট দুইটি সংরক্ষণ প্রত্যাহার, আইএলও সনদ সি১৮৯ ও সি১৯০ অনুস্বাক্ষর ও পূর্ণ বাস্তবায়ন করা।'

আকাঙ্ক্ষা বিষয়ে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশে উল্লেখ করা হয় যে রাষ্ট্র হবে ইহজাগতিক, মানবিক এবং কল্যাণমুখী। অভিন্ন পারিবারিক আইন (ইউনিফর্ম ফ্যামিলি কোড) প্রবর্তন, যাতে ধর্ম, জাতি বা শ্রেণী নির্বিশেষে সকল নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত হবে। যা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ থেকে ঐচ্ছিকভাবে প্রযোজ্য হবে।

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন হয় নভেম্বরে। চলতি মাসের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এ কমিশনের মেয়াদ রয়েছে। এ সংস্কার কমিশন মোট ৪৩ টি নিয়মিত বৈঠকে মিলিত হয়। নারী অধিকার, উন্নয়ন সংস্থা, শ্রমিক সংগঠন, পাহাড় ও সমতলের আদিবাসী এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সাথে ৩৯টি পরামর্শ সভা করে কমিশন। অন্যান্য সংস্কার কমিশনের সাথে ৯টি সভায় মিলিত হয়। পরামর্শ সভাগুলো হয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খুলনা, শ্রীমঙ্গল, রংপুর ও ময়মনসিংহে। পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তি ও সংগঠনের পরামর্শ ও সহযোগিতা নেয়া হয়েছে।

সর্বক্ষেত্রে সর্বস্তরে নারীর প্রতি বৈষম্য বিলুপ্তি ও নারী-পুরুষের সমতা অর্জনের লক্ষ্যে পদক্ষেপ চিহ্নিতকরে সুপারিশ করেছে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন। সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভিন হক বলেন, ‘জুলাইয়ে যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের স্মরণার্থে এমন কিছু করতে চেয়েছি, যা মানুষের জন্য কল্যাণকর হবে, সমাজের জন্য কল্যাণকর হবে।’ তিনি জানান, সুপারিশগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। কিছু এ সরকারই করে যেতে পারবে, কিছু পরের নির্বাচিত সরকার করতে পারবে এবং নারী আন্দোলনের আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলো আলাদা করে তুলে ধরা হয়েছে।