শিরোনাম
ঢাকা, ২২ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস): মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা মাদক বিরোধী অভিযানে ৯ মিমি আধা-স্বয়ংক্রিয় পিস্তল ব্যবহার করবেন। সরকার সোমবার এ সংক্রান্ত নীতি অনুমোদন করেছে।
সরকার গত সোমবার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে শক্তিশালী করতে এবং মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মাঠ পর্যায়ের অভিযানকালে কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবেলায় ‘মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (কর্মকর্তা-কর্মচারী) অস্ত্র সংগ্রহ ও ব্যবহার নীতি (সংশোধিত) ২০২৫’ সংক্রান্ত একটি গেজেট জারি করেছে।
গেজেট অনুসারে, উপ-পরিচালক থেকে সাব-ইন্সপেক্টর পর্যন্ত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মোট ৫৭৯ জন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ৯ মিমি আধা-স্বয়ংক্রিয় পিস্তল ব্যবহার করতে পারবেন।
এদের মধ্যে ৯০ জন উপ-পরিচালক, ৯৩ জন সহকারী পরিচালক, ১৮৬ জন পরিদর্শক এবং ২১০ জন উপ-পরিদর্শক।
সরকার মোট ৩০৫৯ জন জনবলের মধ্যে ৫৭৯ জন কর্মকর্তাকে অস্ত্র দিয়েছে। মোট জনবলের মধ্যে একজন মহাপরিচালক, চারজন পরিচালক, নয়জন অতিরিক্ত পরিচালক, ৯০ জন উপ-পরিচালক, ৯৩ জন সহকারী পরিচালক, ১৮৬ জন পরিদর্শক, ২১০ জন উপ-পরিদর্শক, ২৮৫ জন সহকারী উপ-পরিদর্শক এবং ৯২৮ জন সিপাহীসহ ১৮০৬ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী মাদক সংক্রান্ত অপরাধ দমনে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন।
এর আগে সরকার গত ১২ ডিসেম্বর ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (কর্মকর্তা-কর্মচারী) অস্ত্র সংগ্রহ ও ব্যবহার নীতি ২০২৪’ অনুমোদন করে।
‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (কর্মকর্তা-কর্মচারী) অস্ত্র সংগ্রহ ও ব্যবহার নীতি ২০২৪’ অনুযায়ী একটি নীতিমালায় কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযানের সময় তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য এজেন্সি সদস্যদের আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহের অনিবার্যতা সম্পর্কে রূপরেখা দেওয়া হয়েছিল।
ডিএনসি গত ১৯ সেপ্টেম্বর ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (কর্মকর্তা-কর্মচারী) অস্ত্র সংগ্রহ ও ব্যবহার নীতি ২০২৪’ প্রণয়ন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। দুই দিন পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ডিএনসি অফিস পরিদর্শনকালে অবৈধ মাদকের বিরুদ্ধে সফল ও ঝুঁকিমুক্ত অভিযান পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণসহ বাহিনীকে আগ্নেয়াস্ত্র দেওয়ার ইঙ্গিত দেন।
আগ্নেয়াস্ত্র দেওয়ার যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, ‘ডিএনসি কর্মীদের আগ্নেয়াস্ত্র না থাকার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানের সময় তাদের ওপর আক্রমণ করা হয়। মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সফল অভিযান পরিচালনা এবং ডিএনসি কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তাদের আগ্নেয়াস্ত্র প্রয়োজন।’
তারা বলেন, নগরীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প এবং ডেমরার কাছে 'চাঁপড়া বস্তিতে' অভিযানকালে এজেন্সির অনেক কর্মী ভীত ছিলেন কারণ সেখানকার মাদক ব্যবসায়ীরা অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত।
ডিএনসির পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১৪ সাল থেকে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানে এ পর্যন্ত দুইজন ডিএনসি সদস্য নিহত এবং ১২৪ জন আহত হয়েছেন।
ডিএনসি কর্মীদের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি ২০০৭ সাল থেকে প্রয়াত ড. জাফর উল্লাহ কাজলের নেতৃত্বে ডিএনসি বোর্ডে আলোচনা করা হচ্ছে। তবে, সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগের অভাবে তা আলোর মুখ দেখেনি।
পরবর্তীতে ২০২১ সালের ৩০ জুন ডিএনসি উপদেষ্টা পরিষদ বিষয়টি দেখাশোনার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা পরিষেবা বিভাগের সিনিয়র সচিবের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে সর্বশেষ পদক্ষেপে, ডিএনসি কর্মীদের আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহের জন্য এক মাসের মধ্যে একটি নীতিমালা তৈরির জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল।
কমিটিকে কারা আগ্নেয়াস্ত্র পাবে, সেগুলো সংরক্ষণের পদ্ধতি এবং আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারকারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।