বাসস
  ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১৯:৫৯

গুমসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে: আইন উপদেষ্টা

মঙ্গলবার বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে প্রস্তাবিত ‘গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বিষয়ে এক মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। ছবি: বাসস

ঢাকা, ২২ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস): আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, অন্তবর্তী সরকারের কাছে যে বিষয়টি অগ্রাধিকার পাচ্ছে তা হচ্ছে গুম, খুন মানবতাবিরোধী অপরাধ ও বিগত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের আমলে ঘটে যাওয়া অকল্পনীয় ও নৃশংসতম ঘটনাগুলোর সুবিচার নিশ্চিত করা এবং এর পুনরাবৃত্তি সম্পূর্ণরূপে রোধ করা।

প্রস্তাবিত ‘গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বিষয়ে আইন ও বিচার বিভাগ এবং আইন, বিচার ও সংসদ মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করার সময় তিনি একথা বলেন।

মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।

গুম দেশের মানুষের জাতীয় জীবনে বিশেষ করে গত ১৫ বছরে একটা দুঃসহ স্মৃতি হয়ে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান কালে আমাদের তরুণ ছাত্র জনতার অসীম আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার একটি সুযোগ এসেছে। সেই সুযোগের কারণেই আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার একেবারে প্রথম দিকেই কোনো কালবিলম্ব না করে গুম সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনভেনশনে আমরা পক্ষরাষ্ট্র হয়েছি।  বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো কোনো রিজার্ভেশন ছাড়া এত বড় মানবাধিকার কনভেনশনের আমরা পক্ষরাষ্ট্র হয়েছি।’

‘আমরা গুম আন্তর্জাতিক কনভেনশনের পক্ষরাষ্ট্র হয়েছে কিন্তু আমাদের দেশে গুম সংক্রান্ত বিষয় বিচার করার জন্য কোনো ডেডিকেটেড আইন নেই, এটি হতে পারে না। আমাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনে বিস্তৃত এবং সুসংগঠিত গুমকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে দেখা হলেও এর বাইরে বা অন্যান্য ক্ষেত্রে গুমের আলাদা কোনো সংজ্ঞা বা তার শাস্তির কোনো ব্যাখ্যা দেয়া নেই। এই শূন্যতাকে দূর করার জন্য আমরা এই পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা আমাদের বিশেষজ্ঞ ও আলোচকদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুতই এই আইনের একটি খসড়া তৈরি করে যথাযথভাবে তা বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছি।’

এ সময় গুম তদন্ত কমিশনের বিষয় তিনি বলেন, কমিশন দিনরাত কাজ করেছে এবং খুব শীঘ্রই তারা তাদের রিপোর্ট জমা দিবেন।

উপস্থিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরবর্তীতে যে সরকার আসবে সে অন্ততপক্ষে এক হাজার জন মানুষের দেয়া রক্তের ওপর তৈরি কাঠামোর ভেতর দিয়ে আসবে। এত হাজার মানুষের আহত হবার স্মৃতি এবং দেশের কোটি মানুষের কান্নার পর এত বড় একটা লিগ্যাসী বহনকারী সরকার আমাদের পর এসে এ সংস্কার গুলো ভুলে যাবেন সেটা আমরা ভাবতেও চাই না।

তিনি বলেন, ওয়ান ইলেভেনের সময় ও সরকার যে কাজটি করেছেন সেটাই আমরা করছি।  সমস্ত রাজনৈতিক দল ও অংশীদারদের সাথে আলোচনা করছি, সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করছি। আমরা দেশের আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করতে চাই, যেন কখনোই কেউ আর এ ধরনের অপরাধ করার দুঃসাহস দেখাতে না পারে। 

আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও  সদস্য বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্পেশাল প্রসিকিউটোরিয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট এহসানুল হক সমাজী, ব্লাস্টের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ব্যারিস্টার সারা হোসেন, আলোকচিত্রী, সাংবাদিক ও সমাজকর্মী ড.শহিদুল আলম, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটার মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, ও প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার শাইখ মাহদী, আইনজীবী শিশির মনির, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ড. সায়রা রহমান খান, গুম  মানবাধিকার কর্মী রেজাউর রহমান লেনিনসহ আরও অনেকে।

আলোচনা সভায় উপস্থিত বক্তারা আইনটিকে বাস্তবতা নির্ভর ও সময়োপযোগী করে তোলার জন্য নিজেদের মতামত দেন।

আমলযোগ্য, কিন্ত জামিন অযোগ্য ও আপোষ অযোগ্য এই আইনটিতে গুমের শিকার মানুষের ও তার পরিবারের সুরক্ষা, গুমের ঘটনায় সাক্ষ্য দেয়া সাক্ষীদের সুরক্ষা, তদন্ত সংস্থা গঠন, তদন্ত সংস্থার কাজে গুম সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য লাভের অধিকার সংরক্ষণ, অপরাধীর শাস্তি ও আপিলের বিধান, সাক্ষ্য লোপাট অথবা নষ্ট করার শাস্তি ইত্যাদি বিষয়ে সংস্কার ও সংযোজনের জায়গাগুলো তুলে ধরেন উপস্থিত বক্তারা।