শিরোনাম
ঢাকা, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস): সরকারি লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে আদালতের ৪০ শতাংশ মামলার চাপ কমাতে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা ও জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার চেয়ারম্যান ড. আসিফ নজরুল।
আজ (সোমবার) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস-২০২৫’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘দ্বন্দ্বে কোনো আনন্দ নাই, আপস করো ভাই; লিগ্যাল এইড আছে পাশে, কোনো চিন্তা নাই ’।
আইন উপদেষ্টা বলেন, দেশে প্রতিবছর প্রায় ৫ লখের মতো মামলা হয়। এর মধ্যে সরকারি লিগ্যাল এইডে নিষ্পত্তি হয় প্রায় ৩৫ হাজার মামলা এবং এই সংখ্যাটিকে ২ লাখে আনতে পারলে আদালতে মামলার চাপ প্রায় ৪০ শতাংশ কমে যাবে। কিছু মামলা যেমন- ফ্যামিলি ম্যাটারস, নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট অ্যাক্ট বা ছোট-ছোট কম্পাউন্ডেবল ক্রিমিনাল অফেন্সের ক্ষেত্রে প্রথমেই সরকারি লিগ্যাল এইড প্রতিষ্ঠানে যাওয়া বাধ্যতামূলক করতে চিন্তাভাবনা চলছে, এখানে কাজ না হলে তবে আদালতে যাবার সুযোগ থাকবে। এই কাজগুলো যথাযথভাবে করতে পারলে মামলার চাপ ও মানুষের দুর্ভোগ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পর আমাদের প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে-বিচারকাজে বিড়ম্বনা কমানো, সময় বাঁচানো ও অর্থব্যয় কমানো। আমরা এ জন্য ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছি। আমরা সিপিসিতে (দেওয়ানি কার্যবিধি) যুগান্তকারী কিছু সংশোধনী আনছি। এফিডেভিটের মাধ্যমে শুনানি, এক্সিকিউশন কেস, সমন প্রদানের বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। এর পাশাপাশি আগামী এক মাসের মধ্যে সিআরপিসিতে (ফৌজদারি কার্যবিধি) আমরা ব্যাপক সংশোধনী আনতে যাচ্ছি। আমরা মামলার সময় ও চাপ কমানোর লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য লিগ্যাল এইড খুবই জরুরি ও অভিনব একটি মাধ্যম। লিগ্যাল এইড নিয়ে আমরা অনেক বড়-বড় স্বপ্ন দেখছি, সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে চিন্তা করছি। এই খাতটিকে সামনে নিয়ে যেতে আইনগত সেবা প্রদান সংস্থা ও আইন প্রণয়ন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমরা বৈঠক করেছি।
আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থাগুলোতে সেবা দেয়ার জন্য বিচারকের অপ্রতুলতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের জেলা আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা অফিসগুলোতে বিচারকের সংখ্যা বাড়িয়ে তিনজন করার চিন্তা করছি। আমাদের হিসাব মতে, দেশে এখনো কয়েক হাজার অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ রয়েছেন, যারা এখনো কাজের জন্য পারদর্শী, বিচারিক কাজে তাঁদের রয়েছে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা যা মানুষকে লিগ্যাল এইডে আস্থা রাখতে বড় ভূমিকা পালন করবে। তাঁদেরকে আমরা এখানে সংযুক্ত করার চিন্তা করছি। এটা করা গেলে আগামী ছয়মাস আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থাগুলো এমন পর্যায়ে চলে যাবে যেখানে বছরে ১ লাখ মামলা পরিচালনা করা সম্ভব হবে। এভাবে ধাপে-ধাপে আগামী একবছরের মধ্যে ২ লাখ মামলা পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আমরা করে যাবো।
জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস-২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানটির সার্বিক আয়োজন করেছে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা, আইন ও বিচার বিভাগ এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থার সহকারী পরিচালক (মনিটরিং) আরিফা চৌধুরী হিমেল।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশে জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যাস্টার, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) অনারারি ডিরেক্টর ব্যারিস্টার সারা হোসেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে বিচারিক কাজে নিয়োজিত বিচারকবৃন্দ, বিভিন্ন দূতাবাস ও ইইউ'র কূটনীতিবিদ ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও কূটনীতিবিদ এবং আইন মন্ত্রণালয় ও লেজিসলেটিভ বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।
এর আগে, অনুষ্ঠানের শুরুতেই বেলা ১১টা ২০ মিনিটে লিগ্যাল এইড মেলা ও রোড শো উদ্বোধন করেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ আবু তাহের ও জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার পরিচালক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আজাদ সুবহানী।
অনুষ্ঠানে মাদারীপুর লিগ্যাল এইড এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফজলুল হককে সম্মাননা প্রদান করা হয়। সেইসঙ্গে, ‘সেরা লিগ্যাল এইড প্যানেল আইনজীবী পুরস্কার, ২০২৪’ পান অ্যাডভোকেট পল্লবী রায় ও ‘সেরা লিগ্যাল এইড অফিসার হিসেবে পুরস্কার, ২০২৪’ পান ঝিনাইদহ জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার মো. বুলবুল আহমেদ।