বাসস
  ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬:৪৭

জলবায়ু একটি ন্যায়বিচার সংশ্লিষ্ট সংকট: প্রধান বিচারপতি

গত ২৮ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত  ‘Climate Justice and the Constitution: Reflections from the Global South’ শীর্ষক বিশেষ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। ছবি: বাসস

ঢাকা, ২৯ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস): জলবায়ু সংকট কেবল একটি পরিবেশগত জরুরি অবস্থা নয়, বরং এটি একটি ন্যায়বিচার সংশ্লিষ্ট সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।

নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি আবুধাবি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে, গত ২৮ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত ‘Climate Justice and the Constitution: Reflections from the Global South’ শীর্ষক বিশেষ অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন। এই অনুষ্ঠানে নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি আবুধাবিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত ছাত্র, শিক্ষক, আইনজ্ঞ, আইনজীবী ও অন্যান্য পেশাজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি আবুধাবির আইন বিভাগের অধ্যাপক পাবলস এলেফথেরিয়াডিস।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে যে, অনুষ্ঠানটিতে বাংলাদেশের মতো পরিবেশগত ঝুঁকির শিকার উন্নয়নশীল দেশগুলোর দৃষ্টিকোণ থেকে সংবিধান, মানবাধিকার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্যকার সম্পর্ককে বিশ্লেষণ করা হয়।

যেখানে প্রধান বিচারপতি তাঁর ভাষণে বলেন, ‘জলবায়ু সংকট কেবল একটি পরিবেশগত জরুরি অবস্থা নয়, বরং এটি একটি ন্যায়বিচার সংশ্লিষ্ট সংকটও বটে। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় উন্নত দেশগুলো কার্বন নিঃসরণে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখলেও আজ জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাবের মুখে পড়েছে তুলনামূলকভাবে কম কার্বন নিঃসরণকারী উন্নয়নশীল দেশগুলো।’

প্রধান বিচারপতি তাঁর বক্তৃতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত প্রথম পর্যায়ের প্রাথমিক পরিবেশ ন্যায়বিচার আন্দোলন (Early Environmental Justice Movements in the United States) থেকে শুরু করে কোচাবাম্বার People's Agreement of Cochabamba and the Universal Declaration of the Rights of Mother Earth সংক্রান্ত জলবায়ু ন্যায়বিচারের ধারাবাহিক বিকাশের ইতিহাস তুলে ধরেন।

বাংলাদেশের সংবিধানে পরিবেশ সুরক্ষায় দেশের অঙ্গীকারের প্রতি গুরুত্বারোপ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, বাংলাদেশের বিচার বিভাগ অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে পরিবেশ রক্ষার জন্য বিভিন্ন স্থায়ী আইনগত উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিশেষত, বিপজ্জনক শিল্পগুলোর ক্ষেত্রে যেমন জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পে (Ship- breaking Industry) পরিবেশগত মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের উচ্চ আদালত কর্তৃক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রায় প্রদান করেছে। এসময় তিনি তাঁর নিজের দেওয়া রায়সহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রায়গুলো উল্লেখ করে দেখান যে, কীভাবে পরিবেশগত অধিকারগুলোকে মৌলিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ নেতৃত্ব দিয়েছে। প্রধান বিচারপতি দক্ষিণ এশিয়া ও অন্যান্য দেশগুলো বিশেষ করে আর্জেন্টিনা, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ আফ্রিকার সংবিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের প্রবর্তিত নীতির তুলনা করেন।

এছাড়া প্রধান বিচারপতি তাঁর বক্তব্যে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় প্যারিস চুক্তির কার্যকারিতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর সহায়তায় শক্তিশালী আর্থিক ও আইনি কাঠামো গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার কথা বিশেষ গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেন। সেই সাথে তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানুষের বাস্তুচ্যুতি, ক্ষতি ও ক্ষতিপূরণ বিষয়ে আলোচনা করেন এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের জন্য দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে একটি বৈশ্বিক নৈতিক মানদণ্ড গঠনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে বাস্তুচ্যুত জনগণের জীবন, আশ্রয় ও জীবিকা সুরক্ষিত রাখতে সক্ষম এমন আইনগত কাঠামো প্রবর্তনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আইনজীবীদের প্রতি একটি শক্তিশালী বার্তা দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘জলবায়ু ন্যায়বিচার এখন আর কোনো বিলম্বিত আদর্শ নয়, বরং এটি একটি সংবিধানিক অঙ্গীকার।’ আইন প্রণয়ন, আইনের প্রয়োগ এবং বিচার প্রক্রিয়ায় পরিবেশ সুরক্ষার প্রতি সুনির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে নতুন প্রজন্মের আইনজীবী ও বিচারকগণদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধান বিচারপতি।