বাসস
  ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ২০:১৬

সরকার প্রকৃত উন্নয়ন চায়: ড. সালেহউদ্দিন

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। ফাইল ছবি

ঢাকা, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস): সরকার ‘প্রকৃত উন্নয়ন’ নিশ্চিত করতে চায় উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আজ বলেছেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের সমৃদ্ধি, ব্যবসা-বাণিজ্যের সহজীকরণ ও ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করার জন্য তারা তাদের পদক্ষেপ অব্যাহত রাখবে।

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা অবশ্যই ব্যবসা-বাণিজ্যের সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের সহজীকরণ ও ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব।’ 

আজ রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত আগামী অর্থ-বছরের (২৬) বাজেটের আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর ৪৫তম পরামর্শক কমিটি’র সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন এবং বেজা ও বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বাণিজ্য ও শুল্ক কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মইনুল খানও বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন এফবিসিসিআই প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান। 

তিনি বলেন, ৬ থেকে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে সরকার এ ধরনের ‘বয়ান’ চায় না। তবে  আমরা প্রকৃত উন্নয়ন চাই ও সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়নও চাই। আমাদের আর কোনও এজেন্ডা নেই।

তিনি আরো বলেন, আপনারা (ব্যবসায়িক সম্প্রদায়) যদি আমাদের সহযোগিতা করেন, তবে আমরাও করব। মাঝে মাঝে আমাদের সমালোচনা করা হবে। কিন্তু এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। যদি আমরা কাজ করি, তাহলে কিছু ত্রুটি থাকতে পারে। তবে আমরা সর্বদা উন্মুক্ত।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আগামী অর্থবছরের (২৬) বাজেট বাস্তবসম্মত, বাস্তবায়নযোগ্য ও ব্যবসাবান্ধব করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। 

সালেহউদ্দিন আরো বলেন, ‘আমরা আশা করি, পরবর্তী সরকার আমাদের গৃহীত পদক্ষেপগুলো মূল্যায়ন করবে। আমরা সচেতন থাকব এবং আমরা যা বলি, তা অর্জন করার চেষ্টা করব।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রাক্তন গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন বলেন, দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক মৌলিক অবস্থা এখন ভালো। সার্বিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থার পাশাপাশি সামগ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যও ভালো অবস্থায় রয়েছে। আমরা এখন বেসরকারি খাত থেকে আরও বেশি আশা করছি।

বিভিন্ন ক্ষেত্রের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের বিভিন্ন উদ্বেগের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার বাস্তব বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন।

এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার হঠাৎ করে সংশ্লিষ্ট আইন পরিবর্তন করতে পারবে না।

বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়ায় রয়েছে উল্লেখ করে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ব্যবসায়ীদের আরও প্রতিযোগিতামূলক হতে হবে।

বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে তার সাম্প্রতিক মার্কিন সফরের ওপর আলোকপাত করে অর্থ উপদেষ্টা জানান, তিনি কৃষি ও অর্থ বিভাগের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিভাগের পাশাপাশি মার্কিন ব্যবসায়ীদের প্রায় ৮০ জন প্রতিনিধির সঙ্গেও আলোচনা করেছেন।

তিনি আরো বলেন, আমরা যতটা সম্ভব আপনাদের সুপারিশ বিবেচনা করার চেষ্টা করব। তবে আপনাদেরও মনে রাখতে হবে যে, ছাড় বা রেয়াত দেওয়ার দিন আর নেই। আমি মূলত বেশিরভাগ ছাড় বাতিল করতে চাইছি। 

অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, আমরা গুরুতর চাপের মধ্যে রয়েছি, কারণ আমাদের আরও সম্পদ সংগ্রহ করতে হবে। আমাদের অর্থেরও প্রয়োজন হবে, কারণ আমাদের আপনাদেরকে প্রণোদনা দিতে হবে।

বকেয়া কর পরিশোধের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, অবশ্যই সংশ্লিষ্ট সকলেই কর প্রদানের মাধ্যমে সামগ্রিক সুবিধা পাবেন।

তিনি বলেন, আইএফসি প্রতিনিধিদলের সাথে সাক্ষাতের সময়, আইএফসি অত্যন্ত ইতিবাচক ছিল এবং তারা দেশের বেসরকারি খাতের জন্য ৫০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা করা জানিয়েছে। 

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সকল সরকারি সংস্থা’র সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের অত্যন্ত সফল বৈঠক হয়েছে।

তিনি বলেন, সংবিধান অনুসারে, বাজেট প্রণয়ন একটি বাধ্যবাধকতা। বাজেট ঘোষণার পরও সরকার মূল্যবান পরামর্শগুলো গ্রহণ করার চেষ্টা করবে। 

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘যদি আপনারা (ব্যবসায়ী সম্প্রদায়) আমাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হন, তাহলে আমরাও আপনাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হব।’

বাংলাদেশ বাণিজ্য ও শুল্ক কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মইনুল খান বলেন, ২০২৬ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের কথা বিবেচনা করে সরকারের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহের সক্ষমতা বাড়ানো উচিত।

তিনি বলেন, সরকারের শুল্ক আদায়ের ওপর থেকে নির্ভরতা কমিয়ে আয়কর ও ভ্যাট থেকে আরও রাজস্ব সংগ্রহ করা উচিত।